নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১০ জানুয়ারি, ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য-জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া

মহাসাগরীয় মুক্তাঞ্চল গঠনে একসঙ্গে কাজের আগ্রহ

বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মানদ-’ মেনে হয়নি বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য। এই নির্বাচনের দুদিন পর দেশ দুটি এ নিয়ে পৃথক বিবৃতি দিয়ে এ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ভলকার টার্ক বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেননি। তার ভাষায় এই নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা হয়েছে। এই সীমাবদ্ধতা দূর করতে সরকারকে আরো আন্তরিক হতে হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য জানিয়েছে দেশ দুটি একটি অবাধ ও মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গঠনে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে। বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সুরক্ষায়।

গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টেমন্ট এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়। একই দিনে যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) পৃথক বিবৃতি দেয়। এতে বলা হয়, সামনের দিনে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি অবাধ ও মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গঠন, মানবাধিকার এবং বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহী বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। নির্বাচনের আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমের কয়েকটি দেশ বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক এবং অবাধ নির্বাচন করার জন্য তাগিদ দিয়ে আসছিল। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের কার্যালয় থেকে ইস্যু করা বিবৃতির শিরোনাম ছিল ‘পার্লামেন্টারি ইলেকশনস ইন বাংলাদেশ’। প্রায় একই বক্তব্য নিয়ে মিলার সামাজিক মাধ্যম এক্সেও (সাবেক টুইটার) একটি পোস্ট দিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণ এবং তাদের গণতন্ত্র, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি তাদের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে। ম্যাথিউ মিলারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ্য করেছে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন নিয়ে জয়ী হয়েছে। তবে হাজারো বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীর গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিনে বিভিন্ন জায়গায় নানা ধরনের অনিয়মের খবরে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়নি বলে অন্য পর্যবেক্ষকদের প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একমত বলে জানানো হয় বিবৃতিতে। এছাড়া নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ না করায় হতাশা প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, নির্বাচনের সময় এবং এর আগের মাসগুলোতে বাংলাদেশে যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার নিন্দা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। সহিংসতার ঘটনাগুলোর বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে সব দলের প্রতি সহিংসতা পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছে ওয়াশিংটন। তবে সামনের দিনে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি অবাধ ও মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গঠন, মানবাধিকার এবং বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহী বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আর দুই দেশের জনগণের মধ্যকার সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নেও যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কথা জানানো হয়।

যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) বা দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি দৃষ্টি রেখেছিল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন নির্ভর করে বিশ্বাসযোগ্য, মুক্ত ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার ওপর। মানবাধিকার, আইনের শাসন ও যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অপরিহার্য উপাদান। নির্বাচনের সময় এসব মানদ- ধারাবাহিকভাবে মেনে চলা হয়নি।’ নির্বাচনের আগে বিরোধী রাজনৈতিক দলের বহুসংখ্যক কর্মীর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতো যুক্তরাজ্যও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে নির্বাচনের প্রচারণার সময় সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শনমূলক কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে।

এছাড়া নির্বাচনে সব দল অংশ না নেওয়ায় বাংলাদেশের মানুষের হাতে ভোট দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিকল্প ছিল না বলে মতামত দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে। তবে যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, একটি টেকসই রাজনৈতিক সমঝোতা ও সক্রিয় নাগরিক সমাজের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে।

বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রতি নিজেদের মতপার্থক্য দূর করে রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ভলকার টার্ক এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের গ্রেপ্তার এবং আটকাবস্থায় মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন। তিনি প্রকৃত অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের জন্য সরকারকে গতিপথ পরিবর্তন করার আহ্বান জানিয়েছেন। গত সোমবার দেওয়া এক বিবৃতিতে টার্ক নবনির্বাচিত সরকারকে দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতি পূরণে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন পক্ষ বিভিন্ন সময় মতামত প্রকাশ করেছে। বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং স্বাধীন মত প্রকাশে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

বাংলাদেশে টানা চতুর্থবারের মতো নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে ভারত, চীন, পাকিস্তান এবং রাশিয়াসহ ১৯টি দেশ। এর মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিজয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close