নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৬ মে, ২০২৪

উপকূলীয় ছয় জেলায় বিশেষ প্রস্তুতি

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ছয় জেলাকে বিশেষ প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া উপকূলীয় এলাকায় লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে এলএনজি টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহ কমে গেছে। ফলে তিতাসের অধীন ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় গ্যাসের চাপ কমে যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলাকে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। গতকাল শনিবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক সভায় এ নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানান প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান।

দুপুরে সভা শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। উপকূলবর্তী সব জেলাকে ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত পূর্বাভাস ও সম্ভাব্য ভূমি অতিক্রম এলাকার ভিত্তিতে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা জেলাগুলোকে অধিকতর প্রস্তুত থাকার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

প্রতিমন্ত্রী মহিববুর বলেন, ‘বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, ভারতের আবহাওয়া অফিস, চীনের আবহাওয়া অফিস, জাপানের আবহাওয়া অফিস এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে আমরা বুঝতে পেরেছি, ঘূর্ণিঝড়টি আসন্ন। এখন চলছে সংকেত ৩। এটা (সতর্ক সংকেত) সন্ধ্যা নাগাদ বা রাতে ৪-এর ওপরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরার উপকূল অঞ্চল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ৭ থেকে ৮ ফুট জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। এজন্য পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সব প্রস্তুতি রয়েছে। ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ও উপকূলে ৪ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পুরো এলাকায় ইফেক্ট হওয়ার ঝুঁকি আছে।

উপকূলীয় এলাকায় লঞ্চ চলাচল বন্ধের নির্দেশ : উপকূলীয় এলাকায় লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। তবে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌরুটগুলোতে চলাচল করা লঞ্চ ও অন্যান্য নৌযানের ব্যাপারে এখনো এমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। গতকাল শনিবার বিকেলে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন।

কমতে পারে গ্যাসের চাপ : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে এলএনজি টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহ কমে গেছে। ফলে তিতাসের অধীন ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় গ্যাসের চাপ কমে যেতে পারে।

শুক্রবার তিতাস গ্যাসের জনসংযোগ শাখার ব্যবস্থাপক মো. আল আমিন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় এলএনজি সরবরাহ কমায় তিতাস গ্যাসের আওতাধীন এলাকায় গ্যাস সরবরাহে স্বল্পচাপ বিরাজ করতে পারে। গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।

বাগেরহাট, মোংলা, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, ভোলা ও খুলনার কয়রায় সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

বাগেরহাট : উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের নদীতীরবর্তী এলাকায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নদীতে থাকা মাছ ধরার ট্রলার উপকূলের ছোট ছোট খালে আশ্রয় নিয়েছে। কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে চালানো হচ্ছে জনসচেতনতামূলক প্রচার। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে জেলার ৩৫৯টি আশ্রয় কেন্দ্র ও ৩ হাজার ৫০৫ স্বেচ্ছাসেবক। এছাড়া ৬৪৩ টন চাল ও ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলার সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ এলাকা নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুরে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করেন কোস্টগার্ডের সদস্যরা। এ সময় তারা খাপড়াভাঙ্গা নদীতে অবস্থানরত ট্রলারগুলোয় থাকা জেলেদের ঘূর্ণিঝড়ের সময় করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেন। নিজামপুর কোস্টগার্ডের কনটিজেন্ট কমান্ডার আবু রাশেদ সুমন জানান, সকাল থেকেই সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করেছি। সাগরে আমাদের টিম কাজ করছে। তীরে রয়েছে অধিকাংশ মাছ ধরার ট্রলার। মহিপুর মৎস্য আড়ত মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি মো. দিদার উদ্দিন আহম্মেদ মাসুম বলেন, সমুদ্রে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞার কারণে সাগরে কোনো মাছ ধরার ট্রলার নেই। সবাই নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে।

মোংলা (বাগেরহাট) : মোংলার পশুর নদীসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সচেতনতামূলক মাইকিং করেছেন কোস্টগার্ডের সদস্যরা। দুর্যোগ থেকে উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণ, মৎস্যজীবী ও নৌযানের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন উপকূলীয় অঞ্চলে জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। সুন্দরবন উপকূল এলাকায় কোস্টগার্ডের স্টেশন এবং আউটপোস্টগুলো মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করে। দুর্যোগকালে নিকটবর্তী সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে বলা হচ্ছে। মোংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মো. মুনতাসীর ইবনে মহসীন বলেন, গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।

ভোলা : জেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক জরুরি সভা হয়। সভায় সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা, সিপিপি ও রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ, মেডিকেল টিম গঠন ও কন্ট্রোলরুম খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান সভাপতিত্ব করবেন। এদিকে সাগরে থাকা সব মাছ ধরার ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনা হচ্ছে। চরাঞ্চলে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে কোস্টগার্ডের মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডে নিরাপদ স্থানে আনার কাজ চলছে।

কয়রা (খুলনা) : খুলনার কয়রার ৭টি ইউনিয়নে বিভিন্ন প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপজেলার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে কর্মস্থল ত্যাগ না করতে বলা হয়েছে। প্রস্তুতি রাখা হয়েছে ১১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র। শনিবার কয়রা উপজেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে এক প্রস্তুতি সভা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) বি এম তারিক-উজ-জামানের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কয়রা-পাইকগাছার সংসদ সদস্য মো. রশীদুজ্জামান। এছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ সিপিপি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তারিক-উজ-জামান বলেন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি ভবনগুলোও প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। গৃহপালিত প্রাণীর জন্যও নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্যোগের খবর আদান-প্রদানের জন্য উপজেলা পরিষদে কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। ৭ ইউনিয়নের জন্য ৭টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া সেন্ট্রাল হাসপাতালের জন্য ১টি মেডিকেল টিম প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।

উপজেলা সিপিপির টিম লিডার জি এম আবদুল্লাহ আল মামুন লাভলু বলেন, দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে ৭ ইউনিয়নে ১ হাজার ৪৬০ ভলান্টিয়ার প্রস্তুত রয়েছেন। উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মো. মামুনার রশীদ বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকারীদের খাদ্য, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close