মিজান রহমান

  ২৫ মে, ২০২৪

অর্থনীতির সংকট উত্তরণে পথ খুঁজছে সরকার

টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভা গঠনের পাঁচ মাস পার হয়েছে। নবীন-প্রবীণ নিয়ে গঠিত সরকার অনেক বিষয়ে সতর্ক হয়ে পথ চলতে চায়। এর মধ্যে মোটা দাগে রয়েছে ডলার সংকট কাটিয়ে ওঠা, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফেরানো, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরা। নানা অনিয়ম, দুর্নীতি রোধ করা। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের জন্য বড় চিন্তা এখন অর্থনীতি।

রপ্তানি আয়, বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সৃষ্ট টানাপোড়েন তথা সম্পর্কের বরফ গলানোর মতো বিষয়গুলোও ভাবাচ্ছে সরকারকে।

সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, নতুন সরকারের জন্য বড় চিন্তা এখন অর্থনীতির সংকট উত্তরণের। আসছে বাজেট সামনে রেখে অর্থনীতির সংকট উত্তরণের পথ খুঁজছে সরকার। অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন কূটনীতিক আবুল হাসান মাহমুদ আলী। খুব চেষ্টা করছেন বাজেটে সুখবর দিতে।

সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই দেশের সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য কিনতে নাভিশ্বাস, মার্কিন ডলারের সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদে ঘাটতি এবং ব্যাংকগুলোয় ভঙ্গুর অবস্থা বিরাজমান। এর বাইরে নানা অব্যবস্থাপনা, দ্রব্যমূলের চড়া দাম মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে। তাই সরকারকে নানা দিক ভেবেচিন্তে পা ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

দেড় দশকে অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় ইশতেহার ঘোষণার সময় এই স্বপ্ন দেখান তিনি। সে পথেই হাঁটছে বর্তমান সরকার। বর্তমানে যেসব সংকট রয়েছে, সেগুলো সমাধানের জন্য সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করে সামনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন রাজনীতি, সমাজ ও অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন, দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ প্রকাশ্যে রূপ নিতে পারে। সে কারণে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ আনাকে সরকারের অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক। বিশেষত রিজার্ভ সংকট ও মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির জন্য বড় সংকট সৃষ্টি করেছে। দ্রব্যমূল্য কমিয়ে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে দেওয়া নতুন সরকারের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। এখন ডলার সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ব্যবসায়ীরা ঠিকমতো এলসি খুলতে পারছেন না। কাজেই দ্রুত এ সংকট সমাধান করতে হবে। ব্যাংক খাতেও নানা সংকট চলছে। খেলাপি ঋণ আদায় হচ্ছে না। অনেকে সঠিক কাগজপত্র দিয়েও ব্যাংকের ঋণ পান না। আবার অনেকে ভুয়া কাগজ দেখিয়ে কোটি কোটি ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন। সেগুলোও উদ্ধারে সঠিক পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়।

এ প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ডলার সংকট নিয়ে আমরা আগে থেকেই বলে আসছি, অনেক দেরিতে হলেও সরকার সে পথেই হাঁটছে। ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে দিচ্ছে। যদিও এতে টাকার অনেক অবমূল্যায়ন হয়েছে। এতে মাকের্ট কিছুটা হলেও স্থিতিশীল হবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে একটু সময় লাগবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এই নীতি ধরে রাখলে কিছুদিন পর মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করবে, ছেড়ে দিলে হবে না। ব্যাংকিং খাতের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করা প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ব্যাংক খাতের অনিয়ম দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়। এই সমস্যা আইন করে সমাধান করা যাবে না। রাজনৈতিকভাবেই করতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করে অনিয়ম থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ব্যাংক একীভূতকরণের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটাও বাস্তবায়ন করতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান বলেন, অর্থনীতিতে সংকট আছেই। রিজার্ভ বাড়ানো দরকার। মুদ্রাস্ফীতির হার মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। ব্যাংক থেকে যেসব টাকা চলে গেছে, সেগুলো উদ্ধারে উদ্যোগ নিতে হবে। ঋণখেলাপি বা অর্থপাচারকারীদের শুধু জেল দিলেই সমস্যার সমাধান হবে না। জেল দেওয়ার পাশাপাশি অর্থ উদ্ধারের উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে, সেগুলো বন্ধ করতে হবে। বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে চাইবে। তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এ ছাড়া সরকারবিরোধী সামাজিকমাধ্যমে অপপ্রচার রোধে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে।

অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. মীর্জ্জা এ বি আজিজুল ইসলাম বলেন, নতুন সরকারকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, তা তাৎক্ষণিকভাবে সৃৃষ্ট কোনো সমস্যা নয়। এসব সমস্যা আগে থেকেই বিদ্যমান রয়েছে। এখন নতুনভাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সরকারকে বিদ্যমান সেসব সমস্যা সমাধানের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে সরকারকে বিশেষভাবে ভাবতে হবে। কারণ ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া অধিকাংশ ব্যাংকেই অভ্যন্তরীণ সুশাসনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close