নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৬ মে, ২০২৪

এমপি আজীম খুন

আগেও দুবার হত্যার পরিকল্পনা করা হয়

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে এর আগে দুবার খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি জানান, গত জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশে এ খুনের পরিকল্পনা করা হয়। রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান।

ডিবিপ্রধান জানান, দুবারের পরিকল্পনায় ব্যর্থ হয়ে তৃতীয়বারের পরিকল্পনায় কলকাতায় তাকে খুন করা হয়। লাশ পাওয়া গেল না, তাহলে কীসের পরিপ্রেক্ষিতে আপনারা এ ঘটনাকে মার্ডার বলছেন- এমন প্রশ্নে হারুন বলেন, এমন ঘটনা আছে বছরের পর বছর লাশ পাওয়া যায়নি। ৩ বছর লাশ পাওয়া যায়নি এমন ঘটনাও আমাদের কাছে আছে। তিনি বলেন, মূল পরিকল্পনা ছিল সংসদ সদস্যকে হত্যা করা। তবে এর আগে তারা (খুনিরা) চেয়েছিল কলকাতার সেই ফ্ল্যাটে নিয়ে তাকে দুদিন রেখে ব্ল্যাকমেইল করে কিছু টাকা আদায় করতে। কিন্তু অতিরিক্ত চেতনানাশক প্রয়োগের কারণে চেতনা না ফেরায় আগেই সংসদ সদস্যকে খুন করা হয়। এরপর খুনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সংসদ সদস্যের মুঠোফোন নিয়ে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে সবাইকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হারুন বলেন, খুনিরা আনারকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অচেতন করে তার নগ্ন ছবি তুলতে চেয়েছিল। তারা তাকে জিম্মি করে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা নিতে চেয়েছিল। দুদিন পর হত্যার পরিকল্পনা ছিল। আনারের জ্ঞান না ফেরায় খুনিরা তার মরদেহ এমনভাবে টুকরো টুকরো করে; যাতে মানুষের দেহাবশেষ হিসেবে শনাক্ত করা কঠিন হয়- বলেন তিনি। ডিবিপ্রধান বলেন, মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান (শাহীন মিয়া নামে পরিচিত) গত ১০ মে ঢাকায় ফিরে আসার পর হিটম্যান শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ পরিকল্পনাটি সম্পন্ন করে। গত ২০ মে আক্তারুজ্জামান ঢাকা ছেড়ে দিল্লি, কাঠমান্ডু ও দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন বলেও জানান হারুন।

গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান সংসদ সদস্য আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ আনোয়ারুল আজীম। বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচ দিন পর গত ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনার নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলেনি তিনবারের এ সংসদ সদস্যের। বুধবার হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জিভা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে সংসদ সদস্য আনার খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ। হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার অভিযোগে গ্রেপ্তার সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাহাজি ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমানের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকার আদালত। অন্যদিকে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদকে ১২ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন ভারতের বারাসাতের আদালত।

এদিকে আনোয়ারুল আজীম আনারের দেহাংশের খোঁজে আবারও অভিযানে নেমেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। সঙ্গে ছিল কসাই জিহাদ। গতকাল শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার পোলেরহাট থানার কৃষ্ণমাটির বাগজোলা খালে তল্লাশি শুরু করে সিআইডি। খালে জাল ফেলে ও নৌকা দিয়ে চলছে এ তল্লাশি অভিযান। মরদেহের অংশ খুঁজতে ড্রোনও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সন্ধান মেলেনি দেহাংশ। এর আগে শুক্রবারও কলকাতার একাধিক খালে তল্লাশি চালায় সেখানকার পুলিশ। কলকাতার সিআইডি জানতে পারে, খুনের পর লাশ গুম করার জন্য খণ্ডিত করার কাজে কসাই জিহাদকে ব্যবহার করা হয়। এরও আগে বৃহস্পতিবার রাত থেকে জিহাদকে সঙ্গে নিয়ে দফায় দফায় চলে এ অভিযান। অন্যদিকে কালীগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ‘আমাদের একই কথা আমরা এমপি আনারের দেহের এক টুকরো হলেও ফেরত চাই। আমরা সেই টুকরোকে লাশ মনে করে জানাজা পড়ব।’

শনিবার সকালে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শহরে এমপি আনারের বাড়ির সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এমপি আনার হত্যার প্রতিবাদ, সুষ্ঠু বিচার, মূল পরিকল্পনাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এ অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সাধারণ জনতার মধ্যে কয়েকজন ক্ষোভে ফুঁসে উঠে বলেন, ‘শুনেছি আমাদের এমপির শরীর কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। খুনিরা কি তার জামাকাপড়, জুতাণ্ডস্যান্ডেলও কেটে কেটে টুকরো করেছে। আমরা এমপির ব্যবহৃত জামাকাপড়-সামগ্রী ফেরত পেতে চাই।’ অবস্থান কর্মসূচি থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠাণ্ডু বলেন, ‘আমাদের প্রিয় নেতা এমপি আনার হত্যাকারীদের ধরতে হবে। শুনছি নৃশংসভাবে তাকে কেটে টুকরো টুকরো করেছে। আমরা তার মরদেহ বা টুকরো অংশ বা ডেথ সার্টিফিকেট পেতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’

জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠু মালিতা বলেন, ‘আমাদের একই কথা আমরা এমপি আনারের এক টুকরো মাংস হলেও ফেরত চাই। আমরা সেই মাংস টুকরোটাকে লাশ মনে করে জানাজা পড়ব। এছাড়া এমপি আনার হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। এ হত্যার যে মাস্টারমাইন্ড তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে।’ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী, কালীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ, সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন সোহেল, আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম প্রমুখ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close