প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৫ মে, ২০২৪

এমপি আজিম খুন

নির্মম হত্যার হাড়হিম বর্ণনা জিহাদের

চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার। তার মরদেহ অবশ্য এখনো উদ্ধার করা যায়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমপি আজিম হত্যাকাণ্ডের তদন্তের যত গভীরে যাচ্ছে এবং যত সময় গড়াচ্ছে, ততই ভয়ানক সব তথ্য সামনে আসছে। তদন্তের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সামনে এসেছে কতটা নিপুণভাবে এ অপরাধের পরিকল্পনা সাজানো ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

এরই মধ্যে আজিমকে হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি। এদের মধ্যে একজন জিহাদ হাওলাদার; যার এ খুনে রুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তাকে মুম্বাই থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী হিসেবে সেখানে কসাইয়ের কাজ করতেন। এমপি আজিমকে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় জিহাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলা বারাকপুর এলাকার জয়নাল হাওলাদারের ছেলে। অন্যজন হলেন জাহিদ। তাকে গত বৃহস্পতিবার বনগাঁও এলাকা থেকে গভীর রাতে গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে আমাদের খুলনা বুরো জানায়, জিহাদ

হাওলাদারের পরিবার দাবি করেছে, প্রায় দেড় বছর ধরে জিহাদ ভারতে পলাতক এবং সেখানে তিনি রঙের কাজ করেন। গতকাল শুক্রবার জিদাহের খুলনার বাড়িতে গিয়ে এ তথ্য পাওয়া যায়। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের শুরুর দিকে যশোরের একটি মামলায় বাড়িতে ডিবি পুলিশের অভিযান চালায়। এরপর থেকে জিহাদ ও তার বড় ভাই জাহেদ হাওলাদার পলাতক রয়েছেন। কয়েক মাস পর ফোন করে জিহাদ তার স্ত্রীকে জানান তিনি ভারতে রঙের কাজ করছেন। এরপর থেকে আর কোনো যোগাযোগ নেই। তবে জিহাদের বিরুদ্ধে দিঘলিয়া থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

এলাকাবাসীর জানান, গণমাধ্যমের মাধ্যমে জিহাদের পরিবার ও তারা জানতে পারেন যে এমপি হত্যার সঙ্গে জিহাদ জড়িত। জিহাদরা চার ভাই, এদের মধ্যে জিহাদ সবার ছোট। জিহাদের বিরুদ্ধে ডাকাতি মামলা হয়। একটি হত্যা মামলার পর থেকে পলাতক রয়েছেন তিনি। এলাকায় শান্ত স্বভাবেরই ছিলেন জিহাদ। কিন্তু হঠাৎ করেই মামলা মোকদ্দমায় জড়ান তিনি। এ নিয়ে জানতে চাইলে জিহাদের স্ত্রী বলেন, ‘বাড়িতে নেই প্রায় দেড় বছরের মতো। আর আমার সেজো ভাসুরের যশোরে কী যেন একটা সমস্যা হয়েছিল। সেই ঘটনার পর আমার ভাসুরের সঙ্গে সেও (জিহাদ) চলে যায়। এরপর কই গেছে, তা আর জানি না। ৯ মাস আগে কল করেছিল, ২ মিনিট কথা হয়েছে। ছেলেটা কেমন আছে, সেটা শুধু জিজ্ঞেস করছে। তারপর আমার সঙ্গে আর যোগাযোগ নেই।’

কয়েকটি সূত্রের বরাতে শুক্রবার এক প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলেছে, কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিবা গার্ডেন অ্যাপার্টমেন্টে এমপি আজিমকে হত্যার পর তার চামড়া ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। চামড়া ছাড়ানোর পর টুকরো টুকরো করা হয় তার মরদেহ। এরপর সেই সেগুলো প্লাস্টিকের প্যাকেটে করে শহরের বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেওয়া হয়। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, জিহাদ হাওলাদারকে গ্রেপ্তারের পর পশ্চিমবঙ্গের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অনুসন্ধানে বড় অগ্রগতি এসেছে। তার ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বারাসাতের একটি আদালত।

সিআইডি সূত্রের বরাতে এনডিটিভি জানায়, জিহাদ জেরার মুখে এমপি আজিম হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। সঞ্জিবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে আজিমকে খুন এবং তার দেহ টুকরো টুকরো করে কাটার কাজে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন জিহাদ। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, জিহাদ জানিয়েছেন এ নৃশংস অপরাধের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আক্তারুজ্জামান। তার নির্দেশে আরো চার বাংলাদেশিকে নিয়ে সঞ্জিবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে এমপি আজিমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন জিহাদ।

এদিকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, আজিম প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের স্বর্ণ আত্মসাৎ করার জেরে তাকে হত্যা করা হয় বলে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানিয়েছে। ডিবি কর্মকর্তাদের বরাতে প্রতিবেদক জানান, আক্তারুজ্জামান দুবাই থেকে বাংলাদেশে স্বণের বার পাচার করতেন এবং সংসদ সদস্য আজিম স্বর্ণের চালান ভারতে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতেন। ডিবি ও একটি ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের কোনো একসময় আজিম তার পার্টনারের কাছে স্বর্ণ চোরাকারবারির টাকা থেকে বড় অংশ চান। তারা বলছেন, আজিম ১০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের দুটি চালান পেয়ে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে না দেওয়ায় তার ও আক্তারুজ্জামানের পার্টনারশিপ চরম খারাপ অবস্থায় পৌঁছায়।

এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, আজিমের প্রস্তাব আক্তারুজ্জামান প্রত্যাখ্যান করেন এবং উভয়ের সম্পর্কে ফাটল ধরে। এরপর আক্তারুজ্জামান টাকা চাইতে শুরু করেন আজিমের কাছে এবং ভারতে স্বর্ণ পৌঁছে দিতে পারে এমন লোক খুঁজে বের করেন। এ ঘটনায় আটক সন্দেহভাজনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাতে এক তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, দ্বন্দ্ব নিষ্পত্তি করার জন্য দুজনেই গত ছয় মাসে বেশ কয়েকবার দেখা করেন এবং আজিম বারবারই আক্তারুজ্জামানকে টাকা দিতে রাজি হননি। একপর্যায়ে আক্তারুজ্জামান এমপি আজিমকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যাওয়ার পর গত ১৪ মে থেকে নিখোঁজ ছিলেন এমপি আজিম। এরপর গত বুধবার বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, আজিমকে খুন করা হয়েছে এবং এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেই তিনজনের ৮ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। শুক্রবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথির আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন আমানুল্লাহ ওরফের শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি। এর আগে তাদের আদালতে আনা হলে তদন্তকারী সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রত্যেক আসামির ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close