প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৬ মে, ২০২৪

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ আরো শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে আজ রবিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির ৭০ শতাংশ বাংলাদেশ এবং ৩০ শতাংশ ভারতে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলেই তখন তাকে ‘রেমাল’ নামে আখ্যায়িত করা হবে। এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়তে শুরু করবে আজ বিকেল ৩টা থেকে। আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল শনিবার ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। এ সতর্কতা সংকেত আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আবহাওয়া ডটকম জানায়, ঘূর্ণিঝড় রেমাল শনিবার বিকেল ৫টায় খুলনার খেপুপাড়া থেকে ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ থেকে ৪২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড় রেমাল সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ওপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। উপকূলে আঘাতের সময় বাতাসের গতিবেগ ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। দমকা হাওয়াসহ ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেশের আট বিভাগে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে অতিদ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক শনিবার বিকেলে বলেন, রবিবার (আজ) সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টার মধ্যে যেকোনো সময়ে এটি উপকূল অতিক্রম করতে পারে। রেমালের গতিবেগ নিয়ে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, সিডরের মতো এত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় না এটি, ঘূর্ণিঝড় রেমাল সিডরের থেকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় দেখা দিলে তার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক বেশি হয় এবং বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়। পূর্ণিমার সময় জোয়ার বেশি থাকে। এটি যদি জোয়ারের সময়ে আঘাত হানে, তাহলে জলোচ্ছ্বাস বেশি হবে। আর যেহেতু এটি ‘সিভিয়ার সাইক্লোন’ আকারে আঘাত করার সম্ভাবনা আছে, তাই বৃষ্টির পরিমাণও বেশি থাকবে। আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, রেমাল অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় নয়, এটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়। আর প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সময় সাধারণত ৩ থেকে ৭ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়ে থাকে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকদিন ধরেই ভ্যাপসা গরম পড়েছে। আর এ ভ্যাপসা গরম অনুভূত হওয়ার সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের সম্পর্ক আছে। আলিপুর আবহাওয়া অফিস জানায়, কলকাতাসহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ছয় জেলায় জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। সেখানে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।

আজ রবিবার কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরে জারি রয়েছে লাল সতর্কতা। পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ববর্ধমান, নদিয়ায় জারি রয়েছে কমলা সতর্কতা। সেখানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। দক্ষিণের বাকি জেলায় হতে পারে ভারী বৃষ্টি। সেখানে জারি হলুদ সতর্কতা। আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে বারণ করা হয়েছে। সমুদ্রেই প্রবল আকার নেবে এ ঘূর্ণিঝড়। রবিবার গভীর রাতে বাংলাদেশের খেপুপাড়া এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মধ্যবর্তী অংশে আছড়ে পড়তে চলেছে এ ঘূর্ণিঝড়। সে সময়ে উপকূলে বাতাসের বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। কোথাও কোথাও ১৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত ঝড়ের বেগ উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সমুদ্র উত্তাল থাকতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চাষের জমির ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

যদি কোনো নিম্নচাপ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার গতিবেগ অর্জন করে, তখন সেটাকে ‘আঞ্চলিক ঝড়’ বলে মনে করা হয়। কিন্তু সেটি যদি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১১৯ কিলোমিটার গতিবেগ অর্জন করে, তখন সেটিকে ‘সিভিয়ার সাইক্লোন’ বা ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। বাতাসের গতিবেগ যদি এর থেকেও বেশি হয়, তখন তা ‘ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোন’ বা ‘অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে’ রূপ নেয়। এর পরের ধাপ হলো ‘সুপার সাইক্লোন’। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে আঘাত হানা সর্বশেষ সুপার সাইক্লোন ছিল ২০০৭ সালের সিডর (চোখ)। এটির গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৩ কিলোমিটার। তখন ১৫-২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close