চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

  ২৬ মে, ২০২৪

চাঁপাইয়ে লিচু বিক্রয়ে ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা

ছবি : সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারে উঠেছে রসালো ফল লিচু। এরই মধ্যে বাজারে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে মৌসুমী এ ফলটি। তবে লিচু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ তুলেছেন ক্রেতারা। এর মধ্যে একটি হচ্ছে স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা লিচুকে দিনাজপুর বা ঈশ্বরদীর বলে বিক্রি করা হচ্ছে। আরেকটি অভিযোগ হচ্ছে ক্রেতাকে গণনা করে লিচু দেওয়ার সময় কায়দা করে সংখ্যায় কম দেওয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে উৎপাদিত সবচেয়ে ভালমানের লিচু হয় দিনাজপুর ও ঈশ্বরদীতে। সে কারণে দাম বেশি পাওয়ার আশায় লিচু ব্যবসায়ীরা স্থানীয় লিচুকে ‘দিনাজপুর’ বা ‘ঈশ্বরদী’র বলে বিক্রি করছেন। যাঁচাইয়ের কোনো উপায় না থাকায় ক্রেতারা সরল বিশ্বাসে লিচু কিনে ঠকছেন প্রতিনিয়ত। সদর উপজেলার মহারাজপুরের লিচু ব্যবসায়ী আক্তারুল ইসলাম জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে যে লিচু উৎপাদন হয়, তার আকার-স্বাদ কোন অংশেই কম নয়। সে ক্ষেত্রে এগুলোকে দিনাজপুর ও ঈশ্বরদীর লিচু বলে বিক্রির কোন প্রয়োজন নেই। চাঁপাইবাবগঞ্জের লিচু বলেই বিক্রি করা উচিত। এতে জেলার সুনাম বাড়বে আর ব্র্যান্ডিংও হবে। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করাটা ঠিক কাজ নয়।

লিচু নিয়ে খোঁজ-খবর নিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় পুরাতন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, লিচুর সংখ্যা নিয়ে বচসা করছেন হাবিবুর রহমান নামে এক ক্রেতা। শহরের চরজোতপ্রতাপ এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর ওই বিক্রেতার কাছ থেকে লিচু কিনেছিলেন ১০০টি। বাড়িতে গিয়ে দেখেন দুই আঁটিতে লিচু রয়েছে ৮৬টি। এর মধ্যে এক আঁটিতে ৪৪, অপর আঁটিতে ৪২টি লিচু ছিল। তিনি বলেন, আমি ১০০ লিচু কিনেছি ৩৬০ টাকায়। একটি লিচুর দাম সাড়ে ৩ টাকার বেশি। আমি ১৪টি লিচু কম পেয়েছি। এ প্রতারণা আমি কেন মেনে নেব? স্থানীয়রা জানান, পুরাতন বাজারে এমন বচসা নিত্যদিনের। লিচু ব্যবসায়ীরা সংখ্যায় কম দিয়ে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছেন। অভিযোগের সত্যতা যাঁচাই করতে পুরাতন বাজার, নিউমার্কেট ও বারঘোরিয়া বাজার থেকে লিচু সংগ্রহ করা হয়। তিন স্থান থেকে সংগ্রহ করা লিচুতেই ঘোষিত সংখ্যার চেয়ে কম মিলেছে। পুরাতন বাজারের থেকে সংগৃহীত ৫০টির আঁটিতে ছিল ৪৪টি লিচু। নিউমার্কেট থেকে সংগৃহীত লিচুর আঁটিতে ছিল ৪০টি ও বারঘোরিয়া থেকে সংগৃহীত লিচুর আঁটিতে মিলেছে ৪৫টি।

বারঘোরিয়ার লিচু বিক্রেতা আশরাফুল ইসলাম জানান, বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করার পর বাজারে এনে বিক্রি করা পর্যন্ত কয়েকটি লিচু ঝরে যেতে পারে। এ জন্য প্রতিটি আঁটিতেই দুই-একটি লিচু বেশি দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে যদি কোন বিক্রেতা ৪০ বা ৪২টি লিচু ক্রেতাকে দিয়ে থাকেন এটা ইচ্ছাকৃত করেছেন। এটা প্রতারণা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাগান মালিকদের সঙ্গে যোগসাজস করে খুচরা ব্যবসায়ীরা ৪০ থেকে ৪৫টি লিচু দিয়ে আঁটি বাঁধেন। এক ডালি লিচুর মধ্যে ৫-৬টিতে ৫০টি বা ৫২টি রাখা হয়। কোন ক্রেতা গুণে নিতে চাইলে আলাদা করে রাখা এসব আঁটি দেওয়া হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্রেতাই কেনার সময় গুণে নেন না। ফলে প্রতারণা সহজ হয়ে যায় বিক্রেতাদের। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাসুম আলী জানান, এক জায়গার লিচু আরেক জায়গার বলে বিক্রি বা সংখ্যায় কম দেওয়া ভোক্তা সংরক্ষণ আইন-২০০৯ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কেউ অভিযোগ করেননি তাদের কাছে। তবে শিগগিরই বিভিন্ন ফল বাজারে অভিযান চালানো হবে বলে জানান তিনি।

ভোক্তা সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর একটি ধারায় উল্লেখ রয়েছে- ‘কোনো ব্যক্তি প্রদত্ত মূল্যের বিনিময়ে প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করিলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন’।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close