২৬ আগস্ট, ২০১৯

প্রাইভেট কারে ছিনতাইয়ের ফাঁদ

কর্মব্যস্ত রাজধানীতে অফিসে যেতে বা অফিস শেষে বাসায় ফিরতে দৈনন্দিন ভোগান্তি নতুন কিছু নয়। যান্ত্রিক জীবনে এ অসহনীয় যাত্রা অনেকটা সয়ে গেছে রাজধানীবাসীর। সপ্তাহের শেষ দিনে তো এ মাত্রা আকাশচুম্বি। বৃহস্পতিবার অফিস শেষে গুলশান ২ এ অনেকক্ষণ সিএনজি বা ট্যাক্সির এর জন্য অপেক্ষা করছিলো আরমান(ছদ্মনাম)। আরমান সাহেব সাদাসিধে ভদ্রলোক। উবার কিংবা পাঠাও কোনটাই ব্যবহার করে না সে। দুই একটা সিএনজিকে উত্তরা ১০ নাম্বার সেক্টরে যাবে কিনা জিজ্ঞেস করেও বিফল হলো। আধঘণ্টা অপেক্ষা করে যখন কোন বাহন খুঁজে না পেয়ে কিছুদূর হেঁটৈ যাবার মনস্থির করলো ঠিক তখনি একজন সার্ট প্যান্ট পরা মাঝ বয়সী লোক সামনে এসে বিনয়ের সঙ্গে সালাম দিলো।

আরমান সালামের জবাব নিতেই লোকটা জানতে চাইলে- সে তার গাড়িতে করে গন্তব্যে যাবে কিনা? সিএনজিকে যে ভাড়া দিতো তা দিলেই চলবে।

আরও পড়ুন : কৈশোরে যৌনতার ভয়াবহ পরিণতি

আরমানকে ইতস্তত করতে দেখে লোকটা জানালো- সে একটি গাড়ির ড্রাইভার। গাড়ি নিয়ে সে উত্তরার দিকেই যাচ্ছিলো। পথে একটা খ্যাপ মারতে পারলে তার জন্য উপকার হয়। লোকটা আঙুল দিয়ে তার গাড়িটা দেখালো। আরমান তাকিয়ে দেখে। এই গাড়িটা অনেকক্ষণ ধরে ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলো। ঢাকা শহরে এটা নতুন কিছু নয়। প্রাইভেট কারের ড্রাইভাররা এভাবে খ্যাপ মেরে বাড়তি টাকা ইনকাম করে যা গাড়ির মালিক টেরও পায় না।

আরমান ভাবলো মন্দ কি। গাড়িতে আরামসে যাওয়া যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ।

আরমানকে গাড়িতে তুলে ইঞ্জিন স্টার্ট দিলো লোকটা। অল্প কিছুদূর যাওয়ার পর রাস্তার পাশে একজন সুন্দরী তরুণীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গাড়ি থামালো লোকটা। জানালার কাঁচ নামিয়ে জানতে চাইলো- কই যাবে?

সুন্দরী তরুণী আরমানের দিকে এক পলক তাকিয়ে অবলীলায় বললো- এয়ারপোর্ট যাবে। কিন্তু কোনো কিছু পাচ্ছে না। তার তাড়াতাড়ি যাওয়াটা খুবই জরুরি। বিদেশ থেকে গেস্ট আসবে। তাকে রিসিভ করতে হবে। ড্রাইভার আরমানের দিকে তাকালে আরমান বিব্রতবোধ করলেও না করলো না।

সুন্দরী তরুণী আরমানের পাশে উঠে বসে। আরমান শিহরণ অনুভব করে। আড়চোখে তাকিয়ে মেয়েটির ফিগার ও চেহারা যা দেখেছে তাতে এই মেয়ের পাশে বসে কোথাও যাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। মনে মনে ভাবলো সে।

গাড়ি চলতে শুরু করলো। আরমান খেয়াল করলো মেয়েটা একটু নড়েচড়ে আরমানের পাশে ঘনিষ্ট হবার চেষ্টা করেছে। আরমানের বুকের ভিতর ধুঁকফুকানি শুরু হয়ে গেছে এতে। মেয়েটার শরীর থেকে মিষ্টি একটা ঘ্রাণ আসছে। এরপর মেয়েটা অবলীলায় আরমানের সঙ্গে কথা বলা শুরু করলো। আরমানও মোহাবিষ্টের ন্যায় জবাব দিতে থাকে। এ কথা সে কথা করে অনেক প্রশংসাসুলভ কথাবার্তাও হলো। তার কিছুক্ষণ পর মেয়েটা তার পার্স খুলে রূপচর্চার সরঞ্জাম বের করে সাজগোজে ব্যস্ত হলে আরমান তাকে প্রাণভরে দেখতে থাকে। ইতোমধ্যে সুন্দরীর প্রতি কিছুটা দুর্বলতাও টের পায় সে।

এরপর মেয়েটা পার্স থেকে একটা পারফিউম বের করে আরমানকে দেখিয়ে বলে- গতমাসে সিঙ্গাপুর থেকে আমার এক বন্ধু এনেছে। দেখুননা কেমন কড়া ও নাইচ ঘ্রাণ। বলেই কিছু বুঝে উঠার আগে আরমানের নাকেমুখে স্প্রে করে খিলখিল করে হাসতে থাকে মেয়েটি। ওদের দুষ্টুমি দেখে ড্রাইভারও মুচকি মুচকি হাসে। গাড়ি তখন এয়ারপোর্টের কাছাকাছি।

আরমান ঘ্রাণ নেয়। সত্যিই চমৎকার। আরমান তাকায় সুন্দরী তরুণীর দিকে। সে হাসছে তখনো। কিন্তু তার হাসিটা এমন উদ্ভট দেখাচ্ছে কেন। মনে হচ্ছে তার সামনে একজন নয় কয়েকজন সুন্দরী মেয়ে। আরমানের খুব ঘুম পাচ্ছে। এরপর আর কিছু মনে নেই আরমানের।

ঘুম ভেঙে আরমান দেখে সে একটি অপরিচিত জায়গায় মাটিতে পড়ে আছে। সবকিছু মনে পড়তে তার কিছুক্ষণ সময় লাগলো। যখন মনে পড়লো তখন হায়হায় করে উঠল সে। তার কাছে কম করে হলেও ত্রিশ থেকে বত্রিশ হাজার টাকা ছিলো। ছিলো মোবাইল। হাতে স্বর্ণের আঙটি। কিছুই নেই। আরমান বুঝলো সে প্রতারকের খপ্পরে পড়েছিলো।

আরমান নিজেকে দুষতে থাকে বারবার। কেন সে এভাবে প্রাইভেট কারে উঠেছিলো। কেন সে এতটা অসচেতন হলো। এখন উপায়?

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রাইভেট কার,ফাঁদ,ছিনতাই
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close