সালাহউদ্দিন শুভ, কমলগঞ্জ ও আবদুস শুকুর, শ্রীমঙ্গল

  ০১ মে, ২০২৪

শ্রীমঙ্গলে আগামজাত

আনারসের বাম্পার ফলন দামে খুশি চাষি

চায়ের রাজ্যখ্যাত মৌলভীবাজারে চা-লেবুর পরই রয়েছে আনারসের ব্যাপক চাষ। এখানকার পাহাড়ি উঁচু-নিচু টিলায় উৎপাদিত আনারস দেশখ্যাত। এসব পাহাড়ি আনারস স্বাদে-গন্ধে অনন্য। তাই এর রয়েছে আলাদা চাহিদা। আর এ চাহিদার কারণে দেশের দূরদূরান্ত থেকে পাইকাররা আসেন এখানকার আনারস কিনতে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সারা বছরই কমবেশি এসব আনারস পৌঁছে যায়। চলতি মৌসুমে অনুকূল আবহাওয়ার কারণে শ্রীমঙ্গলে আগামজাতের আনারসের বাম্পার ফলন হয়েছে, দামও ভালো পাচ্ছেন চাষিরা।

ন্যায্য দাম পেয়ে উপজেলার মোহাজিরাবাদ, বিষামণি, মাজদিহি, এমআর খান, নন্দরানী, বালিশিরা, নূরজাহান, ডলুছড়া, সাতগাঁও, হোসনাবাদসহ বিভিন্ন এলাকার আনারস চাষির মুখে হাসি ফুটেছে। অন্যদিকে হিমাগার না থাকায় সংরক্ষণের অভাবে আনারস ব্যবসায়ী ও চাষিরা বরাবরের মতো লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছেন বলেও জানান তারা। গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার মোহাজিরাবাদ, বিষামণিসহ উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়-টিলায় দেখা যায়, কাঁটাযুক্ত গাঢ় সবুজের পাতার ডানার মাঝে লুকানো আনারস। টিলার বিশাল এলাকাজুড়ে সারি সারি করে চাষ করা অপরূপ আনারসের খেত দেখলে নয়ন জুড়িয়ে যায়।

ভোরবেলা দেখা যায়, বিভিন্ন বাগান থেকে শত শত ঠেলাগাড়ি ও জিপযোগে আনারস নিয়ে শ্রীমঙ্গল শহরে আসার দৃশ্য। ঠেলাগাড়িতে আনারসকে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা হয়। দূরদূরান্ত থেকে ছোট-বড় আড়তদার ও পাইকারি-খুচরা ক্রেতারা সেখান থেকেই আনারস পছন্দ করেন। একেকটা ঠেলাগাড়িতে ২০০ থেকে ৫০০ পিস আনারস সাজিয়ে রাখা হয়। প্রতি পিস বড় সাইজের আনারস ৪০ থেকে ৬০, মাঝারি সাইজের ২০ থেকে ৩০ এবং ছোট সাইজের আনারস ১০ থেকে ১৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, ‘গরমের কারণে রসালো ফল আনারসের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলের আড়তজুড়ে প্রায় কোটি টাকার আনারস বেচাকেনা হয়েছে।

তারা বলেন, বাজারে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার আনারস বেচাকেনা হয়। তবে আগামজাতের এ আনারস চাষে চাষিদের খুব বেগ পেতে হয়েছে। তবে আগামজাতের আনারসে ভালো দাম মেলে। শুষ্ক মৌসুমে সেচ সংকট মোকাবিলা ও অধিক দামের কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়েছে বলেও চাষিরা জানান। উপজেলার মোহাজিরাবাদ এলাকার চাষি মো. ইউনুছ খান বলেন, ‘এ মৌসুমে আগামজাতের আনারসের ভালো ফলন হয়েছে। ভালো দাম পাওয়া গেছে।’ উপজেলার বিষামণি এলাকার আনারস বাগান মালিক বিল্লাল মিয়া বলেন, ‘এবার আমার বাগানে আগামজাতের আনারসের ফলন ভালো হয়েছে, বিক্রি করা শুরু করেছি। কিন্তু যখন আনারস একসঙ্গে পাকতে শুরু করে, তখন সংরক্ষণের অভাবে অনেক আনারস নষ্ট হয়ে যায়।’

চাষি সামছুল হক জানান, ‘এ বছর ৩ থেকে ৪টি টিলায় আনারস চাষ করে ২০ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকার আনারস বিক্রি করেছি।’ বেগুনবাড়ী এলাকার আনারস বাগান মালিক ইরেশ পাল জানান, ‘আগাম বৃষ্টি হওয়ায় এবার আনারসের ফলন খুব ভালো হয়েছে। ভালো দামে চাষিরা খুশি। তবে আনারস সংরক্ষণের হিমাগারের খুব প্রয়োজন।’ শ্রীমঙ্গল নতুন বাজার আড়ত সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. আবু তাহের আগামজাত আনারসের উৎপাদন খরচ বেশি জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের আড়তে কম হলেও প্রায় কোটি টাকার আনারস বেচাকেনা হয়েছে। মৌসুমে আরো কোটি টাকার বেচাকেনা হওয়ার আশা করছেন তিনি।’ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, ‘মে থেকে জুন পর্যন্ত আনারসের ভরা মৌসুম। তবে আগাম আনারসে খরচ বেশি হলেও লোকসানের ভয় থাকে না। এ বছর মৌলভীবাজার জেলার প্রায় ১ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ২০ হাজার ৬৫০ টন। এ অঞ্চলে জলডুবি, হানিকুইন ও জাইনকিউ নামের আনারসের উৎপাদন হয়ে আসছে।’

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা উজ্জ্বল সূত্রধর বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলে এবার হানি কুইন ও জায়ান্ট কিউ- দুই ধরনের আনারসের চাষ বেশি রয়েছে। চাষিদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, অনেক কৃষক আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন, আনারস পচে নষ্ট হয়ে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আনারস সংরক্ষণের জন্য শ্রীমঙ্গলে একটি হিমাগার স্থাপন জরুরি। শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি শ্রীমঙ্গলে একটি হিমাগার স্থাপনের জন্য।’ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘মৌলভীবাজারের উৎপাদিত আনারস শিগগিরই রপ্তানির বিষয়ে সরকার একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে চাষিরা আরো লাভবান হবেন।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close