ডলার সংকট সমাধানে আরো সচেষ্ট হতে হবে
ডলারের দর নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘ক্রলিং পেগ’ হচ্ছে দেশীয় মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি। এতে একটি মুদ্রার বিনিময় হারকে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামার অনুমতি দেওয়া হয়। এত দিন ডলার বিক্রির আনুষ্ঠানিক দর ছিল ১১০ টাকা। ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালুর ফলে এখন থেকে ডলারের মধ্যবর্তী দর হয়েছে ১১৭ টাকা। এতে ডলারের বিপরীতে টাকার মুদ্রামান আরো কমেছে। এ ছাড়া হঠাৎ করে ডলারের দাম বাড়ার কারণে অস্থির হচ্ছে অর্থনীতির সব খাত। যার প্রভাব পড়বে বিদেশি ঋণ পরিশোধ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পণ্যের দামের ওপর। বাড়বে ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা। সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মত দিয়েছে ব্যবসায়ী এবং অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা।
বলা সংগত, এলসি খুলতে ব্যবসায়ীদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। খোলাবাজারে কোথাও কোথাও ডলারপ্রতি ১২৮ টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে তাদের। আমদানিকারকরা এলসি খুলতে ব্যাংকে গিয়ে ডলার পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে ১১৭ টাকার বেশিতে ডলার কিনতে হচ্ছে রপ্তানিকারকদের। গত সোমবার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যাংকের অর্থায়নে হাসপাতাল নির্মাণ-সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ব্যাংক চেয়ারম্যানরা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক যে নীতিগত সিদ্ধান্তের পরিবর্তন আনছে, সেটি ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে আর্থিক খাতে। বলা বাহুল্য, দীর্ঘদিন ডলারের দর নিয়ন্ত্রণ করা হলেও শেষ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ বাজার সমন্বয় ও আন্তর্জাতিক চাপে বাজারভিত্তিক ডলার মূল্য নির্ধারণের সিদ্ধান্তে যায় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে পুরোপুরি বাজারে ছাড়ার আগে ক্রলিং পেগ নীতিতে মধ্যবর্তী দর নির্ধারণ করে ১১৭ টাকা করা হয়। যার থেকে ১ টাকা কমবেশিতে ডলার বেচাকেনা করতে পারবে ব্যাংকগুলো। তবে ১১৭ টাকায়ও ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। রপ্তানিকারকদের কিনতে হচ্ছে আরো বেশি দরে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৮ মে ডলারের দাম ও ঋণের সুদের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন আনে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পালনের অংশ হিসেবে ডলারের দাম ১১০ টাকা থেকে এক লাফে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা করা হয়। এতে সরাসরি প্রভাব পড়েছে ব্যাংক ও খোলাবাজারে। ফলে এলসি খোলার ক্ষেত্রে ১২০ এবং খোলাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ১২৫ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞের মতে, দেশে বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের আগমন কমে যাওয়ায় ডলার সমস্যার প্রধান কারণ। যত দিন ডলার আয় না বাড়ছে, তত দিন সংকট কাটবে না। ডলারের বহির্গমন কমাতে আমদানিতে কড়াকড়ি চলছে। কিন্তু এভাবে কত দিন চলবে? দেশের প্রয়োজনেই একটা সময় এই সীমা তুলে দিতে হবে। কারণ বিদেশ থেকে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি না করলে দেশের উৎপাদন ব্যাহত হবে। কমে যাবে কর্মসংস্থান। তার সঙ্গে কমে যাবে জাতীয় প্রবৃদ্ধি। তাই সৃষ্ট এই সমস্যা সমাধানে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
সে ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের দিকে বেশি নজর দেওয়া উচিত। তাহলে দেশের উপকার হবে। ডলারের সংকট হ্রাস পাবে। কারণ এ ধরনের ব্যবসায়ীরা সর্বাংশে আমদানি-রপ্তানিনির্ভর নয়। তবে এ ক্ষেত্রে হতাশ না হয়ে আশান্বিত হওয়ারও ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রলিং পেগ পদ্ধতি ঘোষণা সঠিক হয়েছে। তবে হঠাৎ করে এই পদ্ধতির জন্য বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তা সামাল দিতে সরকারকে আরো সচেষ্ট হতে হবে।
"