দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর

  ২১ মে, ২০২৪

ফলন কমেও খুশি লিচু চাষিরা

মেহেরপুরের আঁটি জাতের লিচু বাজারে ২৬ কোটি টাকা বিক্রির আশা

সারি সারি করে রাখা বাঁশের ঝুড়ি। তাতে ঠাসা ঠাসা লিচু। এসব লিচু সবুজ পাতায় ঢেকে বিক্রি হচ্ছে। লাল-সবুজ রঙের থোকা থোকা লিচু দৃষ্টি কাড়ছে সবার। সুস্বাদু আমের জেলা মেহেরপুরের আঁটি (মোজাফফর) জাতের লিচু এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে পাইকারিপ্রতি ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। ভালো দাম পেয়ে কৃষকরা ভীষণ খুশি।

সপ্তাহখানেক পরে আসবে মাদ্রাজি, বোম্বাই, বেদানা, চায়না জাতের লিচু। মোজাফফর জাতের লিচু স্বাদে গন্ধে ভরা। স্থানীয় চাষিরা জানান, মোজাফফরসহ বিভিন্ন জাতের ৪৫০ হেক্টর জমিতে এবার লিচু চাষ হয়েছে। আর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ৬০০ টন লিচু উৎপাদন হবে। যার বাজারমূল্য ২৫ থেকে ২৬ কোটি টাকা। বাইরের থেকে ব্যবসায়ীরা এসে এসব লিচু কিনে নিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করছেন। ভৌগোলিক কারণে মেহেরপুরের লিচু বৈশাখের শেষ সপ্তাহ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথমেই পেকে যায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা বাঁশের ঝুড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছেন লিচু। কেউ ঝুড়ি ধরছেন, কেউবা সেসব ঝুড়ি চটের বস্তায় ভরছেন। ঝুড়ির ওপরে চটে লেখা হচ্ছে ঢাকার ব্যবসায়ীর ঠিকানা ও প্রেরকের নাম। বিকেল হলেই সেসব লিচুভরা ঝুড়ি লরিতে তোলা হচ্ছে। ছুটছে ঢাকা, চিট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহরে। এসব কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন লিচু চাষি, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।

আমণ্ডকাঁঠালের পাশাপাশি মেহেরপুরের লিচু সুস্বাদু। লিচুর কদর হিমসাগর আমের মতোই। লিচু ক্ষণকালীন ফল। তবে আগাম উৎপাদন ও অধিক দামের কারণে লিচু চাষে কৃষকরা অধিক উৎসাহী।

জেলায় উৎপাদিত লিচু দেশি ও আটি মোজাফফর জাতের (গুটি লিচুও বলা হয়ে থাকে) চাষ হয়। তবে লিচুর মধ্যে আতা বোম্বাই সর্বশ্রেষ্ঠ। কারণ মাংসল, রসালো, সুমিষ্ট ও ছোট বিচি ও টকটকে লাল এ লিচু স্বাদে-গন্ধে অতুলীয়। আটি মোজাফফর জাতির লিচু আগাম পাকে। সংখ্যায় বেশি ধরে। পোকার আক্রমণ কম হয়। ফলের ৭০ ভাগই রসালো। লিচু সংগ্রহের কাজে এই এক মাস মেহেরপুরে সহস্রাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়। গাছ থেকে প্রতিজন লিচু সংগ্রহকারী ৬০০ টাকা করে মজুরি পেয়ে থাকেন।

লিচু সংগ্রহকারী শ্রমিক আবদুস সাত্তার জানান, মজুরির পাশাপাশি কাজ শেষে রসালো ৫০টি করে এবং অবিক্রিত শতাধিক লিচু পেয়ে থাকেন। ফলে পরিবারের সবাই মৌসুম জুড়ে লিচুর স্বাদ পেয়ে থাকেন।

সদর উপজেলার আমদহের লিচু বাগান মালিক কোরবান আলী বলেন, তাপপ্রবাহের কারণে এবার লিচু অন্য বারের মতো মোটাতাজা হয়নি। তবে দাম স্মরণকালের ভালো। বিগত বছরগুলোয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় ১০০ লিচু বিক্রি হয়েছে। এবার (পাইকার) ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা শ বিক্রি হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, জেলার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় লিচু বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন লিচু বাগান মালিকরা। দিন-দশেকের মধ্যে বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ২৫ থেকে ২৬ কোটি টাকার লিচু বেচাকেনা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close