কক্সবাজার প্রতিনিধি

  ২১ মে, ২০২৪

গাড়িতে সরকারি স্টিকার, ইয়াবা পাচার গ্রেপ্তার ৪

কক্সবাজারে ‘আত্মসমর্পণ করে সাজা ভোগকারী’ এক মাদক কারবারিসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এ সময় সরকারি দপ্তরের স্টিকার লাগানো বিলাসবহুল গাড়ি থেকে জব্দ করা হয়েছে সাত লাখ ইয়াবা।

গতকাল সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তাররা পরস্পরের নিকটাত্মীয় এবং সংঘবদ্ধ মাদক কারবারি চক্রের সদস্য। যারা মুদির দোকানদার ছিলেন। এখন মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এনে সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

গত রবিবার মধ্যরাতে উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের মেরিন ড্রাইভের পাটুয়ারটেকে একটি প্রাইভেট কারে তল্লাশি চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলো টেকনাফ পৌরসভার ডেইলপাড়ার হাজী মোহাম্মদ আলীর ছেলে আবদুল আমিন (৪০), একই এলাকার প্রয়াত দীল মোহাম্মদের ছেলে জাফর আলম (২৬), টেকনাফ সদর ইউনিয়নের গোদারবিল এলাকার আবু ছৈয়দের ছেলে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ (৩৫) এবং একই এলাকার মোহাম্মদ কাশেমের ছেলে নুরুল আবছার (২৮)।

গত সোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সহ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ শরীফুল আহসান বলেন, গ্রেপ্তারদের মধ্যে আবদুল আমিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি। আমিন ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। পরে সাজাভোগ শেষে কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। আমিন ইয়াবার বড় একটি চক্র নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে টেকনাফসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ১১টি মামলা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ চিহ্নিত ইয়াবা কারবারি। তিনি আমিনের ভাগনে। তার বিরুদ্ধে দুটি মাদক মামলা রয়েছে। নুরুল আবছার মোহাম্মদ আবদুল্লাহর ভগ্নিপতি। তার বিরুদ্ধেও একটি মাদকের মামলা রয়েছে। এ ছাড়া জাফর আলম সংঘবদ্ধ মাদক কারবারি চক্রের সক্রিয় সদস্য এবং মাদকের বড় চালান পাচারে তথ্য সরবরাহের দায়িত্ব পালন করত।’

সংবাদ সম্মেলনে আরো শরীফুল আহসান বলেন, ‘সোমবার আবদুল আমিনের নেতৃত্বে প্রাইভেট কারে মাদকের বড় একটি চালান টেকনাফ থেকে কক্সবাজার শহরের দিকে যাচ্ছিল। এমন খবর পেয়ে র‌্যাবের একটি দল মেরিন ড্রাইভ সড়কে তল্লাশি চৌকি স্থাপন করে। রাত সোয়া ২টার দিকে টেকনাফ থেকে সড়ক ও জনপদ বিভাগের স্টিকার লাগানো একটি প্রাইভেট কার থামার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে গাড়িটি দ্রুত চালিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে সেটির গতিরোধ করা হয়। গাড়িতে থাকা লোকজনের আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা মাদক পাচারের কথা স্বীকার করে।’ পরে গাড়ির পেছনের আসনের নিচে বিশেষ কায়দায় রাখা দুটি বস্তায় সাত লাখ ইয়াবা পাওয়া যায়; যার আনুমানিক মূল্য তিন কোটি টাকা বলে জানান শরীফুল আহসান।

গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার আবদুল আমিন কুখ্যাত মাদক কারবারি, ইয়াবা সম্রাট ও মাদক সিন্ডিকেটটির অন্যতম সদস্য। সে প্রথমে মুদির ব্যবসা এবং বিভিন্ন গরুর হাটের ইজারাদারি করত। পরে সে পলিথিন ও কার্পেট ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। এসব ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। বার্মাইয়া সিরাজের ইয়াবার বিশাল সব চালান সমুদ্রপথে মাছ ধরার ট্রলারযোগে আবদুল আমিনের কাছে পৌঁছাত। এসব ইয়াবার চালান দেশের অভ্যন্তরে নিয়ে এসে কয়েক দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে মজুদ করত। পরে মজুদ করা মাদকের চালান স্থানীয় মাদক কারবারি, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তার নির্ধারিত এজেন্টদের কাছে সুবিধাজনক সময়ে বিক্রি করে থাকে। র‌্যাবের জব্দ করা ইয়াবার চালানটি কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তার এজেন্টদের চাহিদা মোতাবেক পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রাইভেট কারযোগে টেকনাফ থেকে মেরিন ড্রাইভ হয়ে কক্সবাজার শহরের উদ্দেশে নিয়ে আসছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়। তিনি জানান, গ্রেপ্তার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, আবদুল আমিনের ভাগনে। সে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে গরু চোরাচালানের জড়িত এবং ক্রমান্বয়ে এটিকে পারিবারিক ব্যবসায়ে রূপান্তর করেছে বলে স্বীকার করে। এ ছাড়া ইয়াবার ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় গরুর ব্যবসা করাকালীন আবদুল আমিনের সঙ্গে ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে এ সংক্রান্তে বার্মাইয়া সিরাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং গরু ব্যবসার অন্তরালে সিন্ডিকেটটি মাদকের রমরমা কারবার শুরু করে। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close