কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

  ০১ মে, ২০২৪

সিলেট-আখাউড়া রেলপথ

চুরি হচ্ছে নাট-বল্টু-ক্লিপ ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন

সিলেট-আখাউড়া রেলপথের শ্রীমঙ্গল থেকে কুলাউড়া পর্যন্ত বেশকিছু পাহাড়ি এলাকা, ৮টি কালভার্ট ও সেতু ঝুঁকিপূর্ণ। এই পথ দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই চলছে ট্রেন। নাট-বল্টু বা ক্লিপ মাঝে মধ্যে পরিবর্তন করা হলেও রেললাইন সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। নাট-বল্টু বা ক্লিপার (ক্লিপ) না থাকায় তীব্র গরমে রেললাইন বেঁকে গিয়ে বাকলিং হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া নিয়মিত দেখাভালের অভাবে রেললাইনের ক্লিপ-হুক চুরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কোথাও নাট থাকলেও বল্টু নেই। সেখানে বল্টুর পরিবর্তে সুতো দিয়ে বাধা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেট-আখাউড়া রেলপথের শ্রীমঙ্গল থেকে কুলাউড়া পর্যন্ত রেললাইনের শ্রীমঙ্গল, ভানুগাছ, শমশেরনগর, মনু, টিলাগাঁও, লংলা ও কুলাউড়াস্টেশনের মাঝে অনেক স্থানে ক্লিপ-হুক নেই। ক্লিপ, হুক, ফিশ প্লেটসহ লোহার যন্ত্রাংশ চুরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তবু কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা করছে না। অনেক স্থানে রেললাইনের স্লিপারে নেই নাট-বল্টু। কোথাও নাট থাকলে বল্টুর পরিবর্তে সুতো দিয়ে বাঁধা হয়েছে। মেরামতের জন্য পুরাতন কাট ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক যন্ত্রাংশ চুরি হওয়ার পরও লাগানো হচ্ছে না। এগুলো জোড়াতালি দিয়ে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নাট-বল্টু ও ক্লিপ না থাকার কারণে তীব্র গরমে লাইন বাকলিং হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পুরাতন সেতু ও কালভার্ট ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সংস্কার না হওয়ায় অনেক সময় বড় বড় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রেন। ২০১৮ সালে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সেতু ভেঙে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। গত বছর লাউয়াছড়ায় গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ট্রেনের কয়েকটি বগি উল্টে যায়। এ ছাড়া রেলপথ ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় লাউয়াছড়া উদ্যানের পাহাড়ি এলাকায় নিয়মিত ট্রেন আটকা পড়ে। ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী ঝুলন চক্রবর্তী ও রুনা চক্রবর্তী বলেন, আমরা প্রায় সময় বিভিন্ন কাজে ট্রেনে আসা-যাওয়া করি। সিলেট থেকে শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন পর্যন্ত রেলপথ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এই অঞ্চলে ট্রেন চলার সময় অনেক ভয় হয়। কোথাও দ্রুতগতিতে চলে আবার কোথাও ধীরগতিতে। রেলওয়ের তদারকির অভাবে রেলপথের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যাচ্ছে। পুরাতন এই লাইনকে নতুন করে মেরামতের দাবি জানান তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গলস্থ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) গুলজার আহমদ বলেন, রেলের এই সমস্যাগুলো দীর্ঘদিনের। লাইনের সমস্যা সমাধানে আমরা সবসময় কাজ করি। রেলপথে হুক, ক্লিপসহ লাইন মেরামত নিয়মিত করে থাকি। লাউয়াছড়া বনাঞ্চলে যে মাঝে মধ্যে ট্রেন আটকা পরে এ রকম ঘটনা আগেও হয়েছে। এখনো হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করা হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ কালভার্টগুলো সবসময় কাজ করা হয়। হুক, ক্লিপ চুরি হলে সেগুলো আমরা দ্রুতই লাগানোর চেষ্টা করি।

কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার রুমান আহমেদ, শ্রীমঙ্গল স্টেশন মাস্টার শাখাওয়াত হোসেন ও ভানুগাছ স্টেশন মাস্টার কবির আহমদ বলেন, ট্রেন আসার আগে লাইন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য যা যা প্রয়োজন আমরা তাই করি। আমাদের দায়িত্ব স্টেশনে। রেলপথ দেখাশোনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছে। তবে পুরাতন কাঠের লাইন থেকে মাঝে মধ্যে হুক-ক্লিপ চুরি হয়। নতুন পাকা লাইন থেকে এগুলো কম চুরি হয়। অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে কোথাও কোথাও লাইন বাকলিং হয়। এসব স্থানে আমারা পানি, কচুরিপানা বা কাদা মাটি ব্যবহার করি।

কুলাউড়া রেলওয়ে জংশনের সিনিয়র উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান বলেন, আমাদের আয়ত্তে যত রেললাইন আছে এগুলো আমরা নিয়মিত লোক পাঠিয়ে মেরামত করি। যেখানে প্রয়োজন সেখানে নতুন স্লিপার লাগানো হয়। রেললাইনের নাট বা ক্লিপ কোথাও না থাকলে আমরা এগুলো আবার লাগিয়ে দেই। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা গেলে রেল লাইন মাঝে মধ্যে বাকলিং হয়। কারণ গরমে লোহা নরম হয়ে যায়। তবে অতিরিক্ত তাপমাত্রা হলে যেখানে প্রয়োজন সেখানে পানি বা কচুরিপানা ব্যবহার করি যাতে লাইন শীতল থাকে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close