রকি উল হাসান, কুবি

  ২২ মে, ২০২৪

ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় দুর্দিনে ব্যবসায়ীরা

‘এমন কোনো কথা আছিলো যে, হঠাৎ ভার্সিডি বন্ধ হয়া যাইবো? নিজের জমানো অর্থ খাইয়ালাইছি। জীবনে শিখছি ফটোকপি আর প্রিন্ট দেওয়া। আর ত কিছু শিখি নাই। এডা নিয়েই ত কর্ম। এহন বন্ধ। আমরা সাধারণ পাব্লিক যারা এইডার ওপর নির্ভর, তারা কলের চিপায় আছি। উনারা মন চাইলে ভার্সিডি বন্ধ করে, মন চাইলে খুলে। আমার চাইরজন বাচ্চাসহ পরিবারে ছয়জন। এইডার ওপরই নির্ভর।’ এভাবেই তাদের দুর্দশা আর হতাশার কথা বলছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) মূল ফটকের সামনের ফয়সাল ফটোস্ট্যাটের মালিক সাখাওয়াত বেপারী। কুবি উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বের ফলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপর যেমন পড়েছে, তেমনি প্রভাব পড়েছে ক্যাম্পাসের আশপাশে অবস্থান করা ব্যবসায়ীদের ওপর। তাদের ওপর নির্ভরশীল পোষ্যের ওপর। ক্যাম্পাসের ওপর নির্ভর করে গড়ে তোলা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা আদতে ভালো নেই। কেউ কেউ চিন্তা করছেন ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার। এ ব্যাপারে সাখাওয়াত প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আমার লগের সব দোকানদারই চইলা গেছে। আমি হতভাগা এইডার দিকে চাইয়া চাইয়া থাইকা গেছি। তবে এইবার খুব চিন্তা ভাবনা আছে, ফটোকপি বিক্রি কইরা দিমু।’

দিন শুরু হওয়ার পর থেকেই আশপাশের খাবারের দোকানগুলোয় ভিড় বাড়তে থাকে। এটাই ছিল নিয়মিত বাস্তবতা। কিন্তু কিছুদিন যাবত দেখা যাচ্ছে, তার উল্টো চিত্র। খাবারের দোকানগুলোয় নেই কোনো হাঁকডাক, নেই লোক সমাগম। শিক্ষার্থী না থাকার ফলেই এমন অবস্থা, বলছেন ব্যবসায়ীরা। মক্কা হোটেলের মালিক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আসলে ভালো নেই। তিন বাপ-পুৎ মিলে শ্রম দিই। দুজন মহিলাসহ ১০ জন কাজ করে। একজন বাবুর্চি আছে। তারে রোজ ১ হাজার দেওয়া লাগে। স্টাফ রুম ভাড়া আছে একটা, এই দোকানের ভাড়া আছে ৯ হাজার, কারেন্ট বিল আইয়ে ৪-৫ হাজার। দৈনিক আমার তিন-চার হাজার টাকা লস আছে। ভার্সিডিতে ছাত্রই যদি না থাকে, চলব কারে দিয়া।’

মূল ফটকের পাশে গড়ে উঠা ঝালমুড়ি ও ফুচকার দোকানগুলোয় রীতিমতো উপচে পড়া ভিড় থাকত। কিন্তু গত রবিবার বিকেলে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, সব দোকানই বন্ধ। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দীন নামের এক শিক্ষার্থী নিয়মিত ঝালমুড়ি ও হালিম বিক্রি করতেন। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার ফলে নিয়মিত আসেন না। সপ্তাহে শুক্র- শনিবার বা মাঝেমধ্যে খুলেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা যারা শিক্ষার্থী, উদ্যোগ নিয়েছি- এখানে ব্যবসা করে পেট চালাব, পরিবার চালাব। এটা হচ্ছে না আরকি। সব সময় ক্রাইসিস তো লেগেই থাকে। তবে এইবার একটু বেশি ডিপ্রেশন কাজ করতেছে। আজকে চলতেছি, কাল চলতে পারব কি না, এমন চিন্তা হচ্ছে।’

ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করা সায়েম কনফেকশনারির মালিক ইউসুফের সঙ্গে কথা হয় এ ব্যাপারে। কেমন আছেন জানতে চাইলেই ছাড়েন দীর্ঘশ্বাস। তিনি বলেন, ‘এই অবস্থায় ভালো থাকি কেমনে। এখন যে অবস্থা চলতেছে। গত দুই মাস ধরে পুঁজি ভেঙে খাচ্ছি। আমার প্রায় ৬০ হাজার টাকা ধরা। বেচাকেনার অবস্থা খুবই খারাপ। যেখানে ১৮-২০ হাজার টাকা দৈনিক বিক্রি আসতো, সেখানে ৪ হাজার হয় না। আমি দৈনিক ৪০০ সিঙ্গারা-সমুচা বেচতাম, এখন বানাই না। খাইবো কেডা? কার জন্য বানাইবো? বিশ্ববিদ্যালয়েই কেউ নাই। আসলে কী করার, পরিস্থিতির শিকার। এইনের ব্যবসাই হচ্ছে ক্যাম্পাস দিয়া। এ ছাড়া তো বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নাই। আল্লাহ ভরসা। দেখা যাক আল্লাহ কী করে।’ এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি হতাশায় আছেন ব্যবসায়ীরা। অপেক্ষায় আছেন কবে খুলবে কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close