মো. জহুরুল ইসলাম খোকন, সৈয়দপুর (নীলফামারী)
নীলফামারীর সৈয়দপুর
সুগন্ধিতে নারীর দিনবদল
আগরবাতি তৈরি করে ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে সৈয়দপুরের প্রায় ১০ হাজার নারীর। প্রায় দুই যুগ ধরে তৈরি হচ্ছে এ আগরবাতি। বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব, মন্দির, মসজিদ ও গির্জায় জ্বালানো হয় আগরবাতি। এছাড়া সুগন্ধি হিসেবেও অনেকে ঘরে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ব্যবহার করেন এ পণ্য। ব্যবসায়িক শহর হিসেবে খ্যাত নীলফামারীর সৈয়দপুর। ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটিরশিল্প রয়েছে এ শহরে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ছোট ছোট অর্ধশত কারখানা। এর মধ্যে অন্যতম আগরবাতি তৈরির কারখানা। একসময় বাড়ি বাড়ি আগরবাতি তৈরি করা হতো। এখন কারখানায়ই তৈরি হচ্ছে সুগন্ধি এ পণ্য।
সরেজমিন সৈয়দপুর শহরের পাড়া-মহল্লায় দেখা যায়, বাড়ির আঙিনা বা দরজার সামনে বসে ছোট মেয়ে বা নারীরা কাঠের পিঁড়িতে বসে আরেক পিঁড়ির ওপর হাত দিয়ে ঘষে আগরবাতি বানাচ্ছেন। মহাজনরা আগরবাতি তৈরির উপকরণ বাড়িতেই দিয়ে যান। এসব উপকরণ নিয়ে অবসর সময়ে বাড়ির নারী সদস্যরা আগরবাতি বানাতে বসে যান। প্রতিদিন ৩ থেকে ৫ হাজার আগরবাতি বানাতে পারেন তারা। এ থেকে আয় হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। এছাড়া কিছু আধুনিকতার ছোঁয়াও লেগেছে এ শিল্পে। অনেকে স্থানীয়ভাবে ছোট ছোট মেশিন কিনে সেটা দিয়েও আগরবাতি তৈরি করছেন। শহরের ২২টি বিহারি ক্যাম্পের অধিকাংশ নারীসহ উপজেলার প্রায় নারী অবসর সময়ে আগরবাতি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছেন।
বাঁশবাড়ী এলাকার সাদরা লেনের আগরবাতি কারখানার মালিক মাসুম বলেন, আগে নারীরা হাত দিয়েই আগরবাতি তৈরি করতেন। কিন্তু যখন থেকে কারখানায় মেশিন বসিয়েছি, তখন থেকে তাদের খাটনি কমে গেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে শহরসহ উপজেলার পাড়া-মহল্লায় এমন একটা বাড়ি খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে বাড়ির নারীরা আগরবাতি বানাচ্ছেন না। এখন তাদের খাটনি কমে গেছে, মজুরিও পাচ্ছেন ভালো।
শহরের গোলাহাট বিহারি ক্যাম্পের ফরিদা পারভীন বলেন, ‘আমরা বাড়ির কাজ শেষ করে অবসর সময়ে আগরবাতি তৈরি করি। এক দিনে ২ থেকে ৩ হাজার পিস আগরবাতি তৈরি করতে পারি। মজুরি যা পাই, তা দিয়ে আমরা পরিবারের সদস্যদের শখণ্ডআহ্লাদ পূরণ করতে পারি।’ ওই ক্যাম্পের বিলকিস বলেন, ‘আগরবাতি তৈরির সঙ্গে আমি ২০ বছর ধরে জড়িত। শুরুর দিকে আগরবাতির কাঁচামাল বিভিন্ন মহল্লার নারীদের দিয়ে আসতাম। ওইসময় হাত দিয়ে তৈরি করা আগরবাতির ফিনিশিং ভালো হতো না। এখন মেশিন দিয়ে তৈরি করা আগরবাতির ফিনিশিং অনেক ভালো। এতে ব্যবহারকারীর চাহিদা বেড়েছে।’
সাহেবপাড়ায় আগরবাতি কারখানার স্বত্বাধিকারী শাহাজাদা বলেন, ‘সৈয়দপুরের ২২টি বিহারি ক্যাম্পের অনেক নারী আগরবাতি তৈরির সঙ্গে যুক্ত। অনেক নারী এ কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। নিজেদের উদ্যোগে অনেকের বাসায় ছোট ছোট কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ শিল্পে স্বল্প ঋণ সুবিধা ও সরকারি অনুদান পাওয়া পেলে ব্যবসার পরিধি বাড়ানো সম্ভব।’ বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের উপব্যবস্থাপক হুসনে আরা বলেন, উদ্যোক্তাদের আমরা সবসময় প্রাধান্য দিয়ে আসছি। আগরবাতির ক্ষেত্রেও কারিগরি প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতার পাশাপাশি অর্থও দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
"