বজ্র আঁটুনির ফসকাগেরো
বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। পরীক্ষার্থী ২০ লাখ। পরীক্ষার আগে শিক্ষামন্ত্রীকে অনেক তর্জন-গর্জন করতে শোনা গিয়েছিল। উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে নিজেদের অনৈতিকতা, যোগ্যতা আর ব্যর্থতাকে ধামাচাপা দিতে গোয়েবেলসের কাঁধে চেপে সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে বাজারজাত করার চেষ্টা করেছেন। পণ্য সমাদৃত না হলেও কুইনাইনের মতো তা গেলানো হচ্ছে পাবলিককে।
পরীক্ষার প্রথম দিনেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। গতবারের মতো এবারও প্রশ্ন এসেছে ফেসবুকে, পরীক্ষা শুরুর আধঘণ্টা আগে। কাগুজে বাঘের গর্জনের সঙ্গে সঙ্গে ভেজাল প্রকল্পের ভেজাল নিরাপত্তা ঠেকাতে পারেনি প্রশ্নপত্রের গোপন যাতায়াত। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। বজ্র আঁটুনির ফসকাগেরোর মতো অবস্থা তৈরি হলেও আমাদের বলতে হচ্ছে, ‘আহা কী সুন্দর!’ ভেজালের দেশে ভেজাল খেতে খেতে আমাদের যেন এর সঙ্গে একটা সখ্য গড়ে উঠেছে। আসলের সঙ্গে দেখা হলেই আমরা যেন আঁতকে উঠে বলতে থাকি, আবার কোন ভেজালে না পড়লাম। তিন ঘণ্টার পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে ফেসবুকে আসা প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। বিষয়টি জানানো হলেও শিক্ষা কর্মকর্তারা ফাঁস হওয়ার কথা মানতে নারাজ।
তাদের এই নারাজি পিটিশন দাখিলের বিষয়টি কোনো নতুন ঘটনা নয়। কয়েক বছর ধরে আমরা তা দেখে আসছি। ‘কিন্তু কেন দেখব’, এমন কথা বলার লোকের সংখ্যা আজ কমতে কমতে যেন শূন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকেছে। সুশীলসমাজের দাবিদার হিসেবে যারা আছেন তারাও যেন কোনো এক অজ্ঞাত কারণে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। তাদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, আমরা যেন হীরক রাজার দেশের গণ্যমান্য নাগরিক হয়ে রাজার তাঁবেদারিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি, যা কারোর জন্যই মঙ্গলজনক নয়। অন্তত ‘হীরক রাজার দেশে’ কাব্যনাট্যে সে রকমটাই দেখানো হয়েছে। আমরা মনে করি, সে রকম একটি দেশের নাগরিক হয়ে বেঁচে থাকার জন্য আমরা জন্মগ্রহণ করিনি। একটি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশের শরীরে জড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের লালিত স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্ন থেকে বিচ্যুতির কথা আমরা ভাবতেই পারি না। আমরা মুক্তিযুদ্ধের সন্তান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই যাদের অস্তিত্ব। সেই অস্তিত্বে ফেরার লড়াইয়ে আবার আমরা একত্র হব-এটাই প্রত্যাশা।
"