ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি
শিক্ষক না থাকায় দপ্তরি দিয়ে চলে প্রাথমিকের পাঠদান
ঢাকার ধামরাইয়ে দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরী দিয়েই চলেছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান। এ ঘটনা ঘটেছে উপজেলার রোয়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গত রবিবার ও সোমবার ওই প্রাথমিকের দপ্তরি হযরত আলী বিদ্যালয়ের পাঠদান চালালেও গত মঙ্গলবার তিনি বহিরাগত লোক এনে স্কুলে পাঠদানের জন্য রেখে তিনিও চলে যান অন্যত্র। এমনই অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণে এমন হয়েছে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের। গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই প্রথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচ জন শিক্ষক কাগজে কলমে থাকলেও পাঠদানে সময় কাউকেই দেখা যায়নি।
শিক্ষার্থীরা জানায়, স্কুলের দপ্তরি দিয়ে গত রবিবার ও সোমবার স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম চালালেও গত মঙ্গলবার ওই বিদ্যালয়ের দপ্তরি হযরত আলীও ছিলেন না। তিনি বিদ্যালয় খুলে পাশেই এক আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াতের অনুষ্ঠানে চলে গেছে বলে জানা গেছে। দপ্তরি হযরত আলীর এক ফুপাত ভাই একাই পাঠদান পরিচালনা করেছেন। ওই সুযোগে শিক্ষার্থীদের বাইরে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা গেছে।
কেন বিদ্যালয়ে শিক্ষক নেই জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরি হযরত আলী জানান, বিদ্যালয়ে পাঁচ জন শিক্ষকের মধ্যে সেলিনা আক্তার নামে এক শিক্ষক পিটিআই ট্রেনিং এ আছেন, শিক্ষক মোনালিসা হক কনা রয়েছেন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে এবং শিক্ষক শর্মিষ্ঠা দাস সুমা ডেপুটেশনে ঢাকার মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছেন। বর্তমানে অত্র প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আফরিন সুলতানা ও সহকারী শিক্ষক জহুরা জেসমিন এতোদিন বিদ্যালয়ের পাঠদান করে আসছিলেন। কিন্তু গত রবিবার থেকে ওই দুই শিক্ষক সরকারি ট্রেনিং করতে চলে গেলে দপ্তরি হযরত আলী একাই বিদ্যালয় পরিচালনা করেন। পরে গত মঙ্গলবার তিনি আত্মীয়ের বাড়িতে চলে গেলে তারই ফুপাত ভাইকে পাঠদানের দায়িত্ব দেন। সাংবাদিক বিদ্যালয়ে আসার খবর পেয়ে তিনি বিদ্যালয়ে চলে আসেন ওই দপ্তরি। তারই ফুপাত ভাই কেন পাঠদান করিয়েছেন সেই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তর দেন নি।
দপ্তরির আত্নীয় ওসমান গনি বলেন, আমাকে স্কুলে রেখেই আমার ভাই হযরত আলী দাওয়াত খেতে যান।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, তিন দিন ধরে বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক নেই। স্কুলের দপ্তরি হযরত আলীই পাঠদান করাচ্ছেন। পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হচ্ছে তাদের জানায়।
ওই প্রতিষ্ঠানের সহকারি শিক্ষক জহুরা জেসমিন বলেন, আমাদের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা লিয়াকত হোসাইন স্যার ট্রেনিং করতে নামের তালিকা দিয়েছেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের বিষয়টি জানালেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
স্থানীয় বাসিন্দা নেপাল চন্দ্র পাল বলেন, শিক্ষক শূন্য বিদ্যালয় চলছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণে এমনটি হয়েছে।
ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি আশুতোষ মন্ডল জানান, তিনি জানতে পেরেছেন বিদ্যালয়ের এখন শুধু দপ্তরি ছাড়া আর কেউ নেই। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
এদিকে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আফরিন সুলতানা জানান, বর্তমানে দুই জন শিক্ষক আছে। বাকি বিভিন্ন কারণে ছুটিতে অনুপস্থিত। শুধুমাত্র দপ্তরি হযরত আলী রয়েছেন।
ধামরাই উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা লিয়াকত হোসাইন কে প্রশ্ন করলে তিনি এ বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। তবে তিনি সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাজমুন নাহারকে শিক্ষা অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মুঠোফোনে ফোন দিলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খান মো. আব্দুল্লা আল মামুন বলেন, আমি বিষয়টি দেখে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেব।