reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৭ মে, ২০২৪

সাক্ষাৎকার

‘সুষ্ঠু উপজেলা নির্বাচনে সরকারের সদিচ্ছা আছে’

ড. মোহাম্মাদ হুমায়ুন কবির

প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে আগামীকাল। এই নির্বাচনে সরকারি দল প্রতীক ছাড়াই অংশ নেবে। বিএনপিসহ বেশির ভাগ বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ হুমায়ুন কবির এবং অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান। হুমায়ুন কবির বর্তমানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর। তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করেছেন। অন্যদিকে অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য এবং বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিরও নির্বাচিত কাউন্সিল সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই দুই রাজনৈতিক বিশ্লেষকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আশিকুর রহমান শুভ। সঙ্গে ছিলেন মো. জামিন মিয়া

বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে ছাড়াই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনটিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

দেখুন, বাংলাদেশের ইতিহাসে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন সব সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ইতিহাস বিশ্লেষণ করে বলতে পারি, জনগণ সংসদ সদস্য নির্বাচনের চেয়ে এই নির্বাচন কোনো অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন বর্জনে বিএনপি দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আপনারা জানেন বিএনপি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনও বর্জন করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকতে হয়। এবার ক্ষমতাসীন দল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তাদের দলীয় প্রতীক দেয়নি। সুতরাং সুষ্ঠু উপজেলা নির্বাচন করতে সরকারের সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে দলটি নির্বাচনে এলে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হয়তো হতো।

সরকারি দল এবার নৌকা প্রতীক ছাড়াই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এর পেছনে কী কারণ আছে বলে আপনি মনে করেন?

গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। সে সময় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার জন্য আওয়ামী লীগের বিকল্প প্রার্থী কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বড় একটা অংশ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে। সুতরাং এই কৌশল থেকে আমার মনে হয় স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার জন্য দলটি নির্বাচনটিকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আবার ক্ষমতাসীন দলের প্রতীক না থাকলে অধিক প্রার্থী প্রতিযোগিতা করবেন, এতে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। এটিও অন্যতম একটি কারণ হতে পারে।

দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন হওয়ায় সরকারি দলের অনেক প্রার্থীই নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করবেন। এতে সহিংসতা তুলনামূলক বেশি হওয়ার আশঙ্কা আছে?

বাংলাদেশে নির্বাচন সব সময় উৎসবমুখর হয়। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা, প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের যথার্থ ভূমিকার ওপর সহিংসতার ব্যাপ্তির বিষয়টি নির্ভর করে। আমাদের উপমহাদেশে নির্বাচনী সহিংসতা একটি কমন বৈশিষ্ট্য। তবে আমার মনে হয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ নির্বাচন হলে সহিংসতা তুলনামূলক কম হবে।

নির্দলীয় প্রতীকে সরকারি দল নির্বাচনে অংশ নিলেও মন্ত্রী কিংবা স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি আলোচনায় আছে। বিশেষ করে তারা ‘মাইম্যান’ তৈরির লক্ষ্যে অর্থাৎ পছন্দের প্রার্থী নিয়ে মাঠে থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ভারতীয় উপমহাদেশে ও এশিয়ার অনেক দেশে গণতন্ত্রের মধ্যে রাজতন্ত্রের চর্চা দেখা যায়। ভারতের জওহরলাল নেহরু পরিবার, ইন্দোনেশিয়ার আহমদ সুকর্ণ, শ্রীলঙ্কার বন্দরনায়েক পরিবার কিংবা পাকিস্তানের পিপিপির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মধ্যেও রাজতন্ত্রের পলিসি গত ৩০ বছরে দলগুলোর মধ্যে তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যন্ত ঢুকে পড়েছে। অস্বীকার করার সুযোগ নেই, এখন আওয়ামী লীগেও এসব ঢুকে পড়েছে, যা দলটির জন্য একটি অশনিসংকেত। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, দল গুছানোর জন্য বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিত্ব পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগে আগে নিয়মিত কাউন্সিল হতো এবং গণতান্ত্রিক উপায়ে নেতা নির্বাচিত হতো। তৃণমূল থেকে নেতা নির্বাচনের সুযোগ ছিল। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, দলটি জন্মের পর থেকে গণতান্ত্রিক চর্চা করে আসছে। যাই হোক, আপনি মাইম্যান তৈরির বিষয়টি বলছিলেন। আপনারা দেখে থাকবেন প্রতিটি জেলায়, থানায় এমনকি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত দলীয় পোস্টারে দলীয় প্রধান, দলের আদর্শিক নেতার ছবির পাশাপাশি এমপি, মন্ত্রীদের আবার তাদের পরিবারেরও অনেকের ছবি ব্যবহার করা হয়। এটি শুধু আওয়ামী লীগের নয়, বিএনপিতেও একই চিত্র। ফলে একটি পরিবারতন্ত্রের প্রতিচ্ছবি হচ্ছে এগুলো। ফলে দলীয় গণতন্ত্রের চর্চার অভাবে পরিবারের লোক বা মাইম্যান তৈরি করা হয়। আপনারা দেখে থাকবেন, কয়েক দিন আগে আওয়ামী লীগ এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা দিয়েছে। সেখানে মন্ত্রী ও এমপির আত্মীয় স্বজনদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে মাইম্যান তৈরির পরিকল্পনা তেমন কাজে আসবে বলে মনে হয় না। কিন্তু সেই নির্দেশনা কতটুকু বাস্তবায়ন করা যায়, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।

আপনাকে ধন্যবাদ

ধন্যবাদ আপনাদেরও।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close