শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি

  ২৭ মে, ২০২৪

সুন্দরবন ফের বুক চিতিয়ে রক্ষা করল উপকূলবাসীকে

সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় পুরো শক্তি নিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। মুষলধারে বৃষ্টির সঙ্গে প্রবল ঝড়ে ঘর-বাড়ি, দোকানপাট তছনছ হয়েছে, ভেঙে পড়েছে গাছ-পালা। তবে সিডরের পর এবার ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাত থেকেও ঢাল হয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে ভয়ানক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেছে সুন্দরবন। বাতাসের গতিবেগ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে এই বন।

সাতক্ষীরা উপকূলের বুড়িগোয়ালীনি এলাকায় অবস্থান করা সাংবাদিক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমাল জেলাজুড়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। অনেক গাছপালা উপড়ে গেছে। জোয়ারে মাছের ঘের ভেসে গেছে। তবে সুন্দরবনের এবারও রক্ষা করেছে। বাতাসের গতিবেগ অনেক কমিয়ে দিয়েছে।

সাতক্ষীরার স্থানীয় মুনজিতপুর এলাকার আমিনুর রহমান আলম বলেন, রেমালের কবল থেকে সাতক্ষীরার উপকূল এখন প্রায় বিপদমুক্ত বলা যায়। শুধু বেড়িবাঁধের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, যেন নদীর পানি ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে।

আমিনুর আরো জানান, সাতক্ষীরা শহর ও আশপাশের এলাকায় ঝোড়ো বাতাসের গতিবেগ মাঝে মাঝে এত বেশি ছিল যে, মোটরসাইকেল চালিয়ে অফিস থেকে বাড়ি পর্যন্ত আসা খুবই কষ্টকর ছিল। মাঝে মাঝে মনে হয়েছে, এই বুঝি বাইকসহ উল্টে গেলাম। যদিও বাইক ১০ কিলোমিটারের নিচে ছিল। বাসায় আসার পথে দেখলাম, অধিকাংশ দোকানের সাইনবোর্ড ছিঁড়ে পড়ে গেছে। কোনোটা ঝুলে আছে।

কালিগঞ্জের ওলিউর রহমান বলেন,‘আল্লাহর রহমতে আবারো সুন্দরবন বুক চিতিয়ে রক্ষা করলো আমাদের সাতক্ষীরা উপকূলকে।’


* ঝড়ের বাতাসের গতিবেগ অনেকটাই কমিয়ে দেয় বন

* বৃষ্টিতে বাঁধের মাটি নরম হয়ে ভাঙনের ঝুঁকি

* ভাটিতে পানি কমছে না

* গাছপালা উপড়ে গেছে, ভেসে গেছে ঘেরের মাছ


সাতক্ষীরা সদরের বাসিন্দা মমিনুর রহমান সবুজ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙ্গা বাজারের কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’

শ্যামনগরের সুলতান শাহজাহান বলেন, বৃষ্টিতে বাঁধের মাটি নরম হয়ে গেছে। ভাটিতে পানি কমার কথা থাকলেও পানি কমছে না। এতে অনেক এলাকায বাঁধে ফাটল দেখা দিতে পারে। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটা জানা যায়নি।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি সাতক্ষীরা অতিক্রম করেছে। রাত ১টায় এখানে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ৭২ কিলোমিটার। সন্ধ্যা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত এই জেলায় ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মতিউর রহমান সিদ্দিকী জানান, গভীর রাতে সুন্দরবন সংলগ্ন মুন্সিগঞ্জ-শ্যামনগর সড়কের উপর ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে অনেক গাছ-গাছালি ভেঙে পড়ে। ফলে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে ওই সময়ই শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নেতৃত্বে পুলিশ দা-কুড়াল ও করাত দিয়ে গাছ কেটে রাস্তা যানবাহন চলাচলের উপযুক্ত করে তোলে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close