reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৭ মে, ২০২৪

বেদখলে থাকা বন পুনরুদ্ধারে চাই কঠোর পদক্ষেপ

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষায় গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। গাছ পরিবেশের অতিরিক্ত তাপমাত্রা শোষণ করে পরিবেশকে যেমন নির্মল রাখে, তেমনি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে প্রাণীর বেঁচে থাকার মূল উপাদান অক্সিজেন নির্গমন করে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে বৃক্ষরাজি শুধু কার্বন নিঃসরণ কমায় না; রোধ করে শব্দদূষণও। অথচ জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে বনের জমি পাইকারি হারে ব্যবহৃত হচ্ছে।

দেশ স্বাধীনের পর আমাদের বনসম্পদ, পানিসম্পদ কিংবা নদী ও বাতাসকে কীভাবে পেয়েছিলাম এবং বর্তমানে সেগুলোর কী অবস্থা, তা পর্যালোচনা করা জরুরি। আমরা পরিবেশ বা প্রাকৃতিক সম্পদকে কতটুকু ভালোভাবে ব্যবহার করেছি এবং কতটা ক্ষতি করেছি সেসবের পর্যালোচনা জরুরি। বৈশি^ক যে মানদ-গুলো রয়েছে, সেখানে বিশেষ করে বায়ুদূষণে আমরা সবচেয়ে এগিয়ে। তাছাড়া বায়ুদূষণের কারণে মৃত্যুহারও দেশে বেশি। দেশের অনেক ভালো দিক আছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু গত পাঁচ দশকেরও বেশি ধরে পরিবেশের যে ক্ষতিগুলো হয়েছে, এখন তার মূল্যায়ন করা খুবই জরুরি। ফুল-ফসলে ভরা মাঠ, সড়কের দুই পাশে গাছের সারি এখন তেমন চোখে পড়ে না। ১ হাজার ৩০০ নদী, নদীর ধারে পথ, পথের ধারে গ্রাম, সবুজ মাঠ, সবুজ বনও যেন উধাও হয়ে গেছে। সবুজ মাঠ গিলছে কংক্রিটের ভবন; দখল হয়ে যাচ্ছে নদী, নদীর ধারের পথটুকুও। এ অবস্থায় ২০৩০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ বনের গাছ কাটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবু বনের গাছ কাটা থামছে না। ফলে প্রতি বছরই তাপপ্রবাহের শিকার হচ্ছে দেশের মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন রক্ষায় সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে। প্রয়োগ করতে হবে আইন। বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ বন বেদখল হয়ে গেছে। বছরের পর বছর ধরে এই বেআইনি ও পরিবেশ ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চলে আসছে। গতকাল প্রতিদিনের সংবাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বনের জমি দখলের তালিকায় আছে ৮৮ হাজার ২২৫ ব্যক্তি ও সংস্থার নাম। বন দখল করে শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কল-কারখানা নির্মাণ করেছেন তারা। সম্মিলিতভাবে দখল করেছেন ১ লাখ ৩৮ হাজার একর সংরক্ষিত বন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২৮ জেলায় ১ লাখ ৬০ হাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সারা দেশে ২ লাখ ৫৭ হাজার একর বনভূমি দখলের ফিরিস্তি তুলে ধরে পাঁচ হাজার পৃষ্ঠার নথিতে বনখেকোদের তথ্য সংসদীয় কমিটিকেও জানিয়েছে বন বিভাগ। বন অধিদপ্তরের প্রতিবেদন মতে, সারা দেশে বনের জমির ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৫৮ দশমিক ৮৪ একর বেদখল হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৩ একর সংরক্ষিত বনের জমি। বন উজাড়ের সঙ্গে বৈশি^ক তাপমাত্রাও ক্রমাগত বাড়ছে। গাছ বেড়ে ওঠার সঙ্গে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে। কিন্তু যখন কোনো বন কেটে ফেলা হয় বা পুড়িয়ে ফেলা হয় তখন আর্দ্রতা কমে যায়; ফলে অন্য সব গাছপালা শুকিয়ে যায় এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে। বর্তমানে জলবায়ুর আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এ অবস্থায় বন উজাড় বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বৃক্ষ নিধনের ক্ষতিগ্রস্ত পরিণতিগুলো সম্পর্কে জনগণকে অবশ্যই সচেতন করতে হবে। একই সঙ্গে বেদখলে থাকা বনভূমি পুনরুদ্ধারের জন্য কঠোর ও ব্যাপক অভিযান চালানো প্রয়োজন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close