reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৮ মে, ২০২৪

রেলের সিগন্যাল ব্যবস্থার আধুনিকায়ন জরুরি

রেল যোগাযোগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হলো সিগন্যাল। এতে ত্রুটি থাকলে যেকোনো সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিগত সময়ে এর যথেষ্ট উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু আশ্চর্য বিষয়, যন্ত্র বিকল হওয়ায় রাজধানীর এফডিসি ও মগবাজার সিগন্যালে ট্রেন আসা-যাওয়ার কোনো খবর পান না লাইনম্যান। রেললাইনের দিকে তাকিয়ে থেকে ট্রেন দেখে সড়ক বন্ধ করতে হয়। এছাড়া ট্রেন আসার ঠিক খবর না পাওয়ায় সড়কের গাড়িও বন্ধ করতে হয় অনেক আগে। বেশ কিছুদিন ধরে সিগন্যালটি এভাবেই চলছে। টেলিফোন লাইন, সতর্কতার ঘণ্টা সবই নষ্ট। কিন্তু বড় ধরনের ঝুঁঁকির শঙ্কা থাকলেও এটি সচল করার কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের।

বলা সংগত, রেলপথে সিগন্যাল ত্রুটির কারণে একের পর দুর্ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি গাজীপুরে একই লাইনে আসা দুই ট্রেনের সংঘর্ষের এক দিন পর সিরাজগঞ্জেও দুই ট্রেনের মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা ঘটে। এদিকে রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে এখনো ‘ম্যানুয়াল’ সিগন্যাল ব্যবস্থায় চলছে ট্রেন। তাই বিভিন্ন সময় স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টসম্যানদের ভুল সিগন্যালের কারণে ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এজন্য পুরো রেলপথের সিগন্যাল ব্যবস্থা আধুনিকায়নের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। তাদের মতে, দীর্ঘদিনেও রেল পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল তৈরি করতে পারেনি রেলওয়ে। সেই সঙ্গে নিজস্ব কোনো প্রযুক্তি বিভাগই নেই গণপরিহনের সবচেয়ে বড় সেবা খাতটির। দেশব্যাপী রেল যোগাযোগব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের জন্য বর্তমান সরকার রেল খাতকে গুরুত্ব দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দিন দিন রেলের উন্নয়ন খাতে বাড়ছে বরাদ্দ। রেল যোগাযোগব্যবস্থার আধুনিকায়নে বড় বড় প্রকল্পের পাশাপাশি যাত্রীসেবার মান উন্নয়নেও গ্রহণ করা হচ্ছে নানা কার্যক্রম। কিন্তু এতকিছু সত্ত্বেও রেলের সিগন্যাল ব্যবস্থা ডিজিটাল করার ক্ষেত্রে তেমন কোনো নজর নেই কর্তৃপক্ষের। ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশে রেল চলে ব্রিটিশ আমলের এনালগ সিগন্যাল ব্যবস্থায়। ফলে ত্রুটিপূর্ণ সিগন্যাল ব্যবস্থা দিয়ে দেশে প্রতিদিন তিন শতাধিক যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে। জানা গেছে, বর্তমানে রেলওয়ে খাতে উন্নয়নের নামে প্রচুর অর্থ বরাদ্দ করা হলেও এগুলো সবই নতুন প্রকল্পের জন্য ব্যয় হচ্ছে। রেলের নিজস্ব অবকাঠামোর উন্নয়ন বা রেললাইন, পুরোনো রেলব্রিজ বা কালভার্ট মেরামত, পুরোনো সিগন্যালিং ব্যবস্থার আধুনিকায়ন দরকার। পাশাপাশি দুর্ঘটনা রোধে রেলের সিগন্যালিং ব্যবস্থার আধুনিকায়নে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

দেশে এ পর্যন্ত দুর্ঘটনাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, ভুল সিগন্যালের জন্য ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে নিরাপদ সিগন্যাল ব্যবস্থা, গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জনবল বৃদ্ধিতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকেও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। রেলকে নিরাপদ বাহন হিসেবে নিশ্চিত করতে হলে দুর্ঘটনা রোধ করতে হবে। রেলের সিগন্যালে দায়িত্বে অবহেলা, জনবল সংকট, দুর্ঘটনায় দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার প্রতি সংশ্লিষ্টদের কঠোর নজর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জরুরি। এতে রেল দুর্ঘটনা কমে আসবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। এ ক্ষেত্রে সিগন্যাল ব্যবস্থা এনালগ থেকে ডিজিটালে উন্নীত করলে রেল দুর্ঘটনা অনেকটা কমে আসবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close