মো. মেহেরাব হোসেন রিফাত, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

  ৩০ মে, ২০২৪

রংপুরে ইয়ুথ জার্নালিস্ট বুট ক্যাম্প

‘সাংবাদিকতার নতুন দিগন্তে দেখা হবে রংপুরে’ এই স্লোগানকে ধারণ করে রংপুরের ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী ইয়ুথ জার্নালিস্ট বুট ক্যাম্প। আমরা জানি যে গণমাধ্যমকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। তবে বর্তমানে আমরা এমন একটি সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, যেখানে মিথ্যা, বানোয়াট, ভুয়া তথ্য খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের সমাজে। সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের ওপর থেকে সাধারণ মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভুয়া সংবাদের নিচে চাপা পড়ছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাজারো ইস্যু। ফলে অনেক ঘটনা থেকে যায় অন্তরালে। লাল সবুজ সোসাইটি মনে করে এ সমস্যা উত্তরণে তরুণদের অংশগ্রহণ জরুরি। তাই তরুণদের সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হিসেবে গড়ে তুলতে আয়োজন করা হয় এই বুট ক্যাম্পের। এই বুট ক্যাম্পে রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজপড়ুয়া তরুণ (শিক্ষানবিস) সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন।

লাল সবুজ সোসাইটি ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতা আয়োজিত এই বুট ক্যাম্পে নির্বাচিত ২০ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন। দক্ষিণের উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির নলছিটি, খুলনার বাগেরহাটের শরণখোলা, রংপুর, লালমনিরহাট, বরিশাল, দিনাজপুর, ঢাকা, রাঙামাটিসহ অনেক জেলা থেকে তরুণরা এই ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করেন, মনে হয়েছে রংপুর ব্র্যাক লার্নিং সেন্টার, এ যেন এক টুকরো বাংলাদেশ।

১০ থেকে ১৪ মে পর্যন্ত পাঁচ দিনের বুট ক্যাম্পের প্রথম দিনে ছিল মানবাধিকার ও শিশু রিপোর্টিং, এতে প্রশিক্ষক ছিলেন উইনিসেফ রংপুর ও রাজশাহীর প্রধান তৌফিক আহমেদ এবং গবেষক ও পলিসি মেকার ফাল্গুনী রেজা। বুট ক্যাম্পের দ্বিতীয় দিয়ে ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারের অডিটোরিয়ামে রংপুরের সিনিয়র সাংবাদিক, সুশীলসমাজের প্রতিনিধি ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে প্রশিক্ষাণার্থীদের মতবিনিময় সভা হয়। মতবিনিময় সভায় সিনিয়র সাংবাদিক আলোকিত বাংলাদেশ রংপুরের প্রধান আবদুর রহমান মিন্টু তরুণদের উদ্দেশে বলেন, ‘সাংবাদিকতা করতে হলে সবার আগে দেশপ্রেম জরুরি। এর পাশাপাশি প্রচুর পড়তে হবে এবং জানতে হবে, তাহলেই একজন ভালো সাংবাদিক হতে পারবে।’ মহানগর সুজনের সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেনজির বলেন, ‘বাঁচতে হলে জানতে হবে জানতে হলে শিখতে হবে, তোমরা তরুণরাই পারবে পরিবর্তন আনতে।’ বেরোবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সরোয়ার আহমেদ বলেন, ‘নিউজ সেন্স খুব জরুরি বিষয়। সাংবাদিকতা করতে হলে এটি থাকা জরুরি, শিখতে হবে প্রতিনিয়ত।’

বুট ক্যাম্পের তৃতীয় দিনটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ এদিন মোবাইল জার্নালিজম (মোজো) আদ্যোপান্ত আলোচনা এবং প্রাক্টিক্যাল দেখিয়েনছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা, মিডিয়া ও যোগাযোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জামিল খান। এই সেশন থেকে প্রশিক্ষণার্থীরা শিখেছেন কীভাবে নিজেদের হাতে থাকা মোবাইল দিয়ে সাংবাদিকতা করা যায়। ক্যাম্পের চতুর্থ দিনে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি মহসিনুল হাকিম ও চ্যানেল-২৪-এর ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট আশ্বাস চৌধুরী। তারা তরুণ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং তাদের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেন ও দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। পরে বিকেলে প্রশিক্ষণার্থীরা চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে ফিল্ড ভিজিটে যান এবং রংপুরের মানবাধিকারবিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তারা রিপোর্ট তৈরি করেন।

সর্বশেষ পঞ্চম দিনে প্রশিক্ষণার্থীরা তাদের রিপোর্ট জমা দেন এবং ফিডব্যাক গ্রহণ করেন। বিকেলে সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে প্রশিক্ষার্ণীদের মাঝে সার্টিফিকেট বিতরণ করেন যমুনা টেলিভিশন রংপুর ব্যুরোপ্রধান সরকার মাজারুল মান্নান এবং সময় টেলিভিশনের রংপুর ব্যুরোপ্রধান নাজমুল ইসলাম নিশাতসহ রংপুরের অনেক সিনিয়র সাংবাদিক।

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে অংশগ্রহণ করা আশিকুল ইসলাম বলেন, ‘সবার আগে ভালো লেগেছে, সামনে আমি মানবাধিকার নিয়ে কাজ করতে পারব। আমার কাজ আরো নির্ভুল হবে। সব মিলিয়ে অনেক উপকৃত হয়েছি।’ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংশগ্রহণ করা সাদিয়া আক্তার বলেন, ‘এই বুট ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করে নতুন অনেক কিছুই শিখতে পেরেছি রিপোর্টিংয়ের বিষয়ে যেটা আগে জানতাম না। যেমন রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে অনেক কিছুই অজানা ছিল আমাদের। এখন জানতে পেরেছি। সব মিলিয়ে পুরো প্রশিক্ষণটা অনেক শিক্ষণীয় ছিল। সামনের দিনগুলোতে আরো ভালো কিছু করতে পারব ইনশাআল্লাহ।’

বরিশাল থেকে প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া রাতুল বলেন, ‘ট্রেইনারদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে পেরেছি, মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে কীভাবে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হয় এবং রংপুরে ফিল্ড ভিজিটে গিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পেরেছি। বিভিন্ন জেলার অনেক তরুণ সাংবাদিকের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেছি খুবই ভালো লাগছে।’

লালমনিরহাট জেলা থেকে আসা আহসান ইসলাম বলেন, ‘এই প্রশিক্ষণ নতুন মাত্রায় অনুপ্রেরণা জোগায়। পিছিয়ে পড়া মানুষকে নিয়ে বারবার লিখতে এবং সমস্যা আর সম্ভাবনা তুলে ধরতে সাহায্য করবে। সেশন, গানের আড্ডা, মাঠের রিপোর্টি, সবার স্নেহ, ভালোবাসা সবকিছু বারবার ফিরে আসুক।’ লাল সবুজ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি তাহসিন উদ্দিন বলেন, ‘তৃণমূলের তরুণদের সাংবাদিকতায় আসা জরুরি। এ ক্ষেত্রে দক্ষতাবৃদ্ধির সুযোগ বা আয়োজন হচ্ছে না। সে কারণেই আমাদের এই ক্যাম্প। এখানে ৫ দিন ইনডোর ও আউটডোর নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা তরুণদের দক্ষ করার চেষ্টা করেছি। সামনে এই ধারা অব্যাহত থাকবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close