কুবি প্রতিনিধি

  ০৫ মে, ২০২৪

পাহাড় কেটে রেস্টুরেন্ট বানাচ্ছেন কুবি প্রক্টর

ব্যবহার করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি * পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই * রাতের আঁধারে চলে পাহাড় কাটার কাজ * শব্দ হবে বলে এক্সকাভেটর ব্যবহার হয় না

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারিত অংশের সামনে পাহাড় কেটে তিন তলাবিশিষ্ট ব্যক্তিগত রেস্টুরেন্ট বানাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী। এরই মধ্যে ১৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট উচ্চতার একটি পাহাড় কাটা হয়েছে। এর জন্য নেওয়া হয়নি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। তবে পাহাড় কাটার ওই অংশটি নিজের জমি নয় দাবি করলেও শিক্ষকদের অভিযোগ তিনি আত্মীয়ের নামে এ জমি কিনে রেখেছেন। এ জন্য ব্যবহার করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাহাড় কাটা হয় রাতের আঁধারে। শব্দ হবে তাই ব্যবহার করা হয় না কোনো এক্সকাভেটর। সরেজমিনে রমজানে রাতের বেলা গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা পাহাড় কাটছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক বলেন, ‘আমাদের পাহাড় কাটতে বলা হয়েছে আমরা পাহাড় কাটতেছি। এ জায়গা ভার্সিটির প্রক্টর স্যারের। আমরাতো শ্রমিক। এতো বিষয়ে আমরা জানি না’। সেখানে নাইট গার্ড হিসেবে দায়িত্বরত আছেন কামাল হোসেন। তিনি বলেন, রমজানে রাতের বেলা পাহাড় কাটা হয়েছে। কাজ দেখতে রাতের বেলা গাড়ি নিয়ে আসেন প্রক্টর স্যার। খোঁজ নিয়ে আবার চলে যান।

সার্বিক কাজ পরিচালনা করছেন শামীম মিয়া নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, এখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন ঠিকাদার কাজ করেছে। আমি এখন শুধু দেখাশোনা করি। পাহাড় কাটা হয়েছে জায়গাটা সমান করার জন্য। এখানে ৮টি পিলার বসানো হবে।

পাহাড় কাটার অনুমতির বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীব বলেন, পাহাড় কাটার ব্যাপারে আমাদের জানানো হয়নি। আমরা সেখানে লোক পাঠাবো এবং পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।

জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী এ রেস্টুরেন্ট তদারকির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুমিল্লা-চ ৫১০০৮৪) নাম্বারের গাড়ি ব্যবহার করছেন। গত ২২ এপ্রিল রাত ৯টায় প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীকে গাড়িসহ সেখানে দেখা যায়। প্রতিবেদকের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি সেখান থেকে সরে যান। এরপর রাত ১০টায় ওই গাড়ির ড্রাইভার আকতারকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, স্যার সেখানে রেস্টুরেন্ট দেখতে গেছেন। আমাকে স্যার যা বলছেন তাই করছি।

সাবেক প্রক্টর ও শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সদস্য মোহাম্মদ আইনুল হক বলেন, প্রক্টরিয়াল বডির কাজে এবং উপাচার্যের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে এ গাড়ি ব্যবহার করতে হবে। অন্য কাজে ব্যবহার করলে সেটা অপরাধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যখন এ সব ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িয়ে যায় তাহলে ওই শিক্ষকের মাঝে আর শিক্ষকতার মূল্যবোধ থাকে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারিত অংশে তিনি ভূমি অধিগ্রহণের পূর্বে বিভিন্ন দাগে নিজ নামে জমি ক্রয় করেছেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ওমর সিদ্দিকী বলেন, ওইটা আমার জায়গা না। আমি সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি নিয়ে যাইনি। তোমার কাছে ভিডিও থাকলে তুমি নিউজ করে দাও। ব্যক্তিগত বিষয়ে নিয়ে ঘাটাঘাটি করো না। জানতে চেয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএফ আবদুল মঈনকে মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। এর আগে ব্যাস্কেটবল গ্রাউন্ড তৈরির জন্য পাহাড় কাটে কুবি কর্তৃপক্ষ। পরে প্রতিদিনের সংবাদে সংবাদ প্রকাশের পর চাপের মুখে কাজ স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close