মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

  ২৪ মে, ২০২৪

চা-শিল্পের সমস্যা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি

চায়ের নিলাম মূল্যবৃদ্ধি, চোরাচালান রোধ, ঋণের সুদ ৯% নির্ধারণ, ট্যাক্স-ভ্যাট পরিশোধ না করে অবৈধভাবে চা বিক্রি বন্ধ করে চা-শিল্পের বিদ্যমান সমস্যা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন চা বাগান মালিকরা। চা-শিল্পের সংকট উত্তরণে নানা দাবি দাওয়া সংবলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন চা বাগান কর্তৃপক্ষ।

স্মারকলিপিতে বাগান মালিকরা বলেন, ‘চা-শিল্পে সংকট চলছে। চা-শিল্পের সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ২০২২ সালে চা-শিল্প শ্রমিক আন্দোলনের মুখে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তা থেকে প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই চা-শিল্প, সেই সংকট থেকে উদ্ধার পেয়েছিল।’

স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, ‘বর্তমানে চায়ের নিলাম মূল্য উৎপাদন খরচের চেয়ে কম হওয়ায় এই শিল্পের ভিত নড়ে গেছে। কয়েক লাখ শ্রমিক-কর্মচারীর জীবন-জীবিকা চা-শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে নিলাম মূল্য উৎপাদন খরচের চেয়ে কম হওয়ায় অনেক বাগানে মালিক শ্রমিকদের মজুরি দিতে পারছেন না।’ এই পরিস্থিতি নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

সেখানে বলা হয়, ‘বর্তমানে চায়ের উৎপাদন খরচ প্রায় ২৫০ টাকা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চা বোর্ড, বাংলাদেশ চা সংসদ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ টি ট্রেডার্স অ্যাসোশিয়েশনের সমন্বয়ে চায়ের নিলামমূল্য নিম্নতম ৩০০ টাকা নির্ধারণ করলে চা-শিল্প আপাতত রক্ষা পেতে পারে। একই সঙ্গে চায়ের চোরাচালালান রোধ জরুরি।’

‘পঞ্চগড়ে কোনো নিয়মনীতি না মেনে খুবই নিম্নমানের চা উৎপদন এবং ট্যাক্স-ভ্যাট পরিশোধ ছাড়াই অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে। এই নিম্নমানের চা বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানসম্মত চা নিলাম বাজারে যথাযথ মূল্য পেতে পারছে না।’

চা মালিকরা আরো বলেন, ‘ছোট বড় প্রায় সব বাগানই বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে হাইপোথেটিক লোন নিয়ে থাকে। এই ঋণ পরিশোধের সুদের হার ৯% থেকে বর্তমানে ১৩%। বর্তমান অবস্থায় তা পরিশোধ করা বাগানগুলোর পক্ষে অসম্ভব।’ এজন্য বিশেষ বিবেচনায় ঋণ পরিশোধের সুদের হার ৯% নির্ধারণ, ঋণ পরিশোধের সময়সীমায় শিথিলনীতি গ্রহণ এবং রুগ্ণ ও উন্নয়নশীল চা বাগানকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের দাবি জানানো হয়।

চা বোর্ডের বাধ্যতামূলক ২.৫% সম্প্রসারণ আবাদ কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রেখে শূন্যস্থান পূরণ করার ওপর জোর দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলা হয়, ‘বর্তমানে বাগানগুলোর হাতে সম্প্রসারণ কার্যক্রমে বিনিয়োগ করার মতো পর্যাপ্ত তহবিল নেই। তাই এই সম্প্রসারণ কার্যক্রম কয়েক বছরের জন্য স্থগিত রাখতে প্রাধানমন্ত্রীর সদয় দিকনির্দেশনা কামনা করছি।’

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় ফ্যাক্টরিতে সবুজ কাঁচা চা পাতা (যা পচনশীল) প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যাহত হচ্ছে জানিয়ে বলা হয়, এতে চায়ের মান রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই চা ফ্যাক্টরিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানাই।

চা-শিল্পকে ভ্যাট ও ট্যাক্স থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়ার জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানান। চা-শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমদানির ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করে চা আমদানি নিরুৎসাহিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছেন বাগান মালিকরা।

স্মারকলিপি প্রদানকালে বাগান মালিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নিনা আফজাল ইন্ডাস্ট্রিজ লি. (খাদিম চা বাগান) ও বালিসিরা হিল টি কো লি.(জঙ্গলবাড়ি চা বাগান) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল রশিদ চৌধুরী। দি সিলেট টি কো. লি. (মালিনিছড়া চা বাগান), দি দলই টি কো. লি. (দলই চা বাগান) ও রাজনগর টি কো. লি. (রাজনগর চা বাগান) এর মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আজম আলী। এম আহমেদ টি অ্যান্ড ল্যান্ডস কো. লি., চাঁনভাগ চা বাগান, আমীনাবাদ চা বাগান, হাবিবনগর চা বাগান, খান চা বাগান, লালাখাল চা বাগান, আফিফানগর চা বাগান পরিচালক তেহসিন চৌধুরী। ফুলবাড়ী টি এস্টেট লি., ফুলবাড়ী চা বাগান, নুরজাহান চা বাগান, বুরজান টি ইন্ডাস্ট্রিজ লি. (বুরজান চা বাগান), দি নিউ সিলেট টি এস্টেট লি. (ফুলতলা চা বাগান) এর পক্ষে মহাব্যবস্থাপক আবদুস সবুর খান। ম্যাকসন ব্রাদার্স (বাংলাদেশ) লি., হাফিজ চা বাগান ও আয়েশাবাগ চা বাগানের পরিচালক এম এ জামান সোহেল, মাথিউরা টি কো. লি. (মাথিউরা চা বাগান), তাজ টি অ্যান্ড ট্রেডিং কো. লি. (মোমিনছড়া চা বাগান) এর পরিচালক রুকন উদ্দিন খান। কালিকাবাড়ী চা বাগানের পরিচালক মুফতি মোহাম্মদ হাসান। জোবেদা টি কো. লি. (কালিটি চা বাগান) এর পরিচালক এম এ মালিক হুমায়ুন। পুর্ব পাহাড় টি কো. লি. (রেহানা চা বাগান) মালিক প্রফেসর শফিকুল বারি। লোভাছড়া চা বাগানের পরিচালক ইউসুফ জোসেফ ফারগুসন। আল্লাদাদ চা বাগানের পরিচালক ইফজাল চৌধুরী। মেঘালয় চা বাগানের পরিচালক এম এ ওয়াকিল খান। তারাপুর চা বাগান ব্যবস্থাপক রিংকু চক্রবর্তী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close