জোবায়ের রাজু

  ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৭

সন্ধ্যা রাতের ভূত

সন্ধ্যার ছায়া নামার মিনিট ত্রিশেক আগে রাজ্যের ভয় নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করল শুভ। আজ স্কুল থেকে এত দেরি করে ফেরার অপরাধে আম্মু নিশ্চয় পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে দেবে। এত দেরিতে স্কুল থেকে ফেরার কারণ কী-আম্মুর কাছে অক্ষরে অক্ষরে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। তারপর সামান্য অপরাধের আঁচ পেলেই আম্মুর অবিরাম ধোলাই থেকে রক্ষা পাওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।

ভীরু ভীরু পায়ে বাসায় এসে টেবিলের ওপর স্কুলব্যাগটা রেখে আম্মুর ঘরে উঁকি দেয় শুভ। আম্মু গোমড়া মুখে জানালার পাশে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে। ইদানীং আম্মুকে খুব মন খারাপ অবস্থায় বেশি দেখা যায়। হাসি খুশি আম্মুর আজকাল কী যে হলো।

শুভকে দেখে, তার আম্মু নরম গলায় বলল-‘ভাত খেয়ে নাও শুভ। এত দেরি করে স্কুল থেকে এলে যে! আমি তো চিন্তায় অস্থির।’ আম্মুর এমন মধুমাখা কণ্ঠ শুনে শুভর ভয়ের ঘোর কেটে গেল। আম্মু আজ এত সুন্দর করে কথা বলছে দেখে মন ভরে গেল শুভর। কিন্তু একটু আগে যে আম্মুর গোমড়া মুখ দেখেছে সে! নাকি ভুল দেখেছে! হ্যাঁ ভুলই হবে।

ভাত খেতে খেতে শুভর মনে পড়ল একটু আগে স্কুল থেকে ফেরার পথে দেওয়ান বাড়ির মাঠে তার বয়সী ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলার কথা। প্রতিদিন দেওয়ান বাড়ির সামনে দিয়ে স্কুলে যায় ও আসে শুভ। আজ সে ফেরার পথে দেখল, দেওয়ান বাড়ির মাঠে কতগুলো ছেলে মহানন্দে ফুটবল খেলছে। ফুটবল শুভর খুব প্রিয় খেলা। তাই ছেলেগুলোর কাছে আবদার করতেই তারা শুভকে তাদের খেলার সাথী করে নিল। একটি নয়, দুটি নয়, পর পর সে তিনটি গোলও দিয়েছে। শুভ ফুটবল খেলার গুণ দেখে নাসির নামের একটা ছেলে বলল-‘তুমি তো ভালোই ফুটবল খেলতে পার। রোজ আমাদের সঙ্গে খেলতে চলে এসো।’

শুভ ভালো ফুটবল খেললেও শেষ পর্যন্ত তার দলটি হেরেই গেল দেখে মন খারাপ হয়ে গেল শুভর। তার চেয়ে বেশি মন খারাপ হলো তার পরনের সাদা স্কুল ড্রেসটির বেহাল দশা দেখে। খেলার তোড়ে কখন যে গায়ের সাদা স্কুল ড্রেসটায় ধুলাবালি আর খন্ড খন্ড কাদামাটি লেগে বিশ্রী হয়ে গেছে। স্কুল ড্রেসের এই ময়লাচ্ছন্ন পরিণতি দেখে সবার আগে আম্মুকে মনে পড়ল শুভর। আজ বাসায় গেলে ড্রেসের এ অবস্থা দেখে আম্মু তার কী হাল করবে, সেটা ভেবেই শরীর ঠা-া হয়ে এলো তার।

ভাত খাওয়া শেষ করেই শুভর মনে হলো স্কুল ড্রেসটি এক্ষুনি ধুয়ে না দিলে কাল ক্লাস করা যাবে না। এমনিতেই তাদের স্কুলের রোশনী ম্যাডাম স্কুল ড্রেস না পরে এলে ক্লাসে ঢুকতে দেন না। এটা ভাবতে ভাবতে শুভ সিদ্ধান্ত নিল সে স্কুল ড্রেসটি এখনই ধুয়ে উঠোনের তারে ঝুলিয়ে রাখবে। রাতভর সেটা শুকিয়ে যাবে এবং কাল ক্লাসও করা যাবে।

যে ভাবা সেই কাজ। বাথরুমে ঢুকে শুভ স্কুল ড্রেসটি ধুয়ে যখন উঠোনের তারে ঝুলিয়ে দিল, তখনই মাগরিবের আজান পড়ে গেল। চারদিকে ঘন কালো অন্ধকার। জীবনে এই প্রথম শুভ তার কোনো জামা ধুয়েছে এবং এত ধবধবে সাদা হয়ে গেছে দেখে শুভ নিজেই অবাক।

উঠোন থেকে ঘরে ঢুকতেই শুভকে তার দাদি বলল, ‘মসজিদে যাও। আজান হচ্ছে।’ নামাজ সাধারণত শুভ ফাঁকি দেয় না। তাই টুপি মাথায় দিয়ে সোজা মসজিদের দিকে রওনা দিল সে।

নামাজের পর বাসায় এসে পড়ার টেবিলে বসে গেল শুভ। শুভর পড়ার টেবিলটা জানালার পাশে। চারদিকে সন্ধ্যার সুনসান নীরবতা। রাতে শুভ যখন পড়তে বসে, সাধারণত দাদি তার ঘরে বসে থাকে। কারণ শুভ যখন সুর করে ছড়া পড়ে, সেটা নাকি দাদির কাছে ভীষণ ভালো লাগে।

আজও শুভ পড়তে বসার পর তার দাদি এলো। কিন্তু অন্য দিনের তুলনায় আজ দাদিকে কেমন কেমন যেন লাগছে। কেমন ভয় ভয় চেহারা। ভয়ার্ত চোখে তিনি বারবার জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকাচ্ছেন। শুভ দাদির এ ব্যাপারটা লক্ষ করল। আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘আজ তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?’ দাদি নরম গলায় বলল, ‘বাড়িতে মনে হয় ভূত এসেছে।’ বলেই দাদি আবার জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল।

ভূত সাধারনত ভয় পায় না শুভ। তাই দাদির কথাকে সেভাবে পাত্তা না দিয়ে সে প্রতিদিনের মতো জোরে জোরে ছড়া পাঠে মনোযোগী হতেই দাদি সতর্কতার সহিত বলল, ‘আস্তে পড়ো ভাই। দেখো উঠোনে ভূত দেখা যাচ্ছে। জানালার দিকে তাকাও। আমার তো ভয় লাগছে দাদুভাই।’

এবার খানিকটা ভয় শুভও পেল। দাদি তো আর মিথ্যে বলছে না। ভয় ভয় চোখে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। তারপর শুভকে উচ্চৈস্বরে হাসতে দেখে দাদি তো অবাক।

-তুমি হাসছো কেন? অদ্ভুত তো। হাসি থামাও। থামাও বলছি।

-ওহ দাদি! তুমি এতো বোকা। ওটা তো ভূত না। হা হা হা। ওটা তো আমার সাদা স্কুল ড্রেস।

শুভর কথা শোনে দাদি ভালো করে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে ওটা আসলেই ভূত নয়। অন্ধকারে শুভর সাদা স্কুল ড্রেসটাকে ভূত ভেবে দাদি এতক্ষণ কি যে গভীর ভয়ের ঘোরে ছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist