সারমিন ইসলাম রত্না

  ১৮ নভেম্বর, ২০১৭

রাজকন্যা পাখি

দাদুর কাছে নাতনি দাবি করল, দাদু আমার ঘুম আসছে না, তুমি আমাকে খুব সুন্দর একটি রূপকথার গল্প শোনাও। দাদু চিন্তিত মুখে প্রশ্ন করলেন, কেন দাদু ঘুম আসছে না কেন? তোমার গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যাব। ঠিক আছে দাদু তুমি শোন আমি তোমাকে গল্প বলি। গল্পের মধ্যে কিন্তু একটা ধাঁধা আছে। সেই ধাঁধার উত্তরটা তোমাকে দিতেই হবে। ঠিক আছে দাদু আমি চেষ্টা করব। কিন্তু গল্পের মাঝখানে তুমি কোনো কথা বলতে পারবে না। প্রশ্ন করতে পারব? না দাদু সেটিও পারবে না। তবে শুনো আমি গল্প আরম্ভ করলাম।

সাত সমুদ্র তেরো নদীর পাড়ে এক রাজ্য ছিল। সেই রাজ্যের নাম সোনার কাঠি রুপোর কাঠি। সেই রাজ্যের রাজার একমাত্র মেয়ে, নাম তার রাজকন্যা পাখি। পাখি হয়ে জন্মেছে বলে রাজার কোনো আক্ষেপ নেই। রাজা সব সময় বলেন, আমার মেয়ে কত সুন্দরী, ঠিক যেন স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে একটি ছোট্ট পরি। দিনে দিনে রাজকন্যা পাখি বড় হতে লাগল, বিয়ের বয়স হলো। রাজকন্যা পাখির জন্য বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রাজ্যের রাজপুত্র খুঁজতে লাগলেন রাজা। কিন্তু কোথাও মেয়ে রাজকন্যা পাখির মনের মতো বর খুঁজে পেলেন না।

একদিন রাজা খুব দুঃখ নিয়ে মেয়ে রাজকন্যা পাখিকে বললেন, মা আমি তো তোমার পছন্দ মত বর খুঁজে পেলাম না, এখন আমি কি করব? বাবা তুমি যদি আমাকে সাহস দাও আমি একটি কথা বলতে পারি তোমাকে। বলো মা। বাবা আমি স্বপ্নে দেখেছি সাত সমুদ্র তেরো নদী ওপারে আমার জন্য কোনো এক রূপার কুমার অপেক্ষা করছে। রাজ্যটির নাম স্বপ্নরাজ্য। আমি সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে সেই রাজ্যে যাব। তুমি অনুমতি দিলেই আমি যাব। ঠিক আছে মা, আমি এই পর্যন্ত তোমার সব কথা রেখেছি এটিও রাখব। আমি তোমাকে অনুমতি দিলাম, যাও তুমি তোমার মনের মতো সঙ্গী খুঁজে নাও।

রাজকন্যা পাখি তার সোনার পাখা দুটো মেলে দিল আকাশে। পূর্ণিমা চাঁদের মতো ঝলমলে আলো ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। তাকে দেখে আকাশের পরিরাও লজ্জায় মুখ লুকাল। ফুলপরিরা সলজ্জ কণ্ঠে বলে উঠল, রাজকন্যা পাখি তোমার জন্য কী করতে পারি? তোমার কি আমাদের কোনো সাহায্য লাগবে? রাজকন্যা পাখি মিষ্টি হেসে বলল, অনেক ধন্যবাদ ফুলপরি, আমি আমার রূপের কুমারের কাছে একাই যেতে পারব। ঠিক আছে, তোমার জন্য শুভ কামনা।

রাজকন্যা পাখি উড়তে উড়তে উড়তে উড়তে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত শরীর নিয়ে সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে অনেক দিন পর স্বপ্নরাজ্যে এসে পৌঁছল। সত্যিই রাজ্যটি দেখতে স্বপ্নের মতো সুন্দর। কোথাও কোনো অন্ধকার নেই। চারদিকে রং-বেরঙের আলো ছড়ানো। রাজকন্যা পাখির দু’চোখ জুড়িয়ে গেল। সে গান গাইতে গাইতে রাজার বাগানে এসে বসল। ঠিক তখনই বাগানে পায়চারী করছিল যুবরাজ রূপের কুমার। হঠাৎ তার কানে ভেসে এলো স্বর্গীয় সুললিত কণ্ঠের এক মধুময় সুর। কে গাইছে এমন মধুর কণ্ঠে মধুর গান। যুবরাজ রূপের কুমার হন্যে হয়ে খুঁজতে লাগল। খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ চোখ পরল রাজকন্যা পাখির দিকে। বাহ্ খুব সুন্দর পাখি তো। এত সুন্দর পাখি আমি আমার জীবনে কোনদিন দেখিনি। এই যে সোনার পাখি তোমার নাম কী গো? আমার নাম রাজকন্যা পাখি। তোমার দেশ কোথায়? আমার দেশ সাত সমুদ্র তেরো নদী ওপারে। এতদূর পাড়ি দিয়ে তুমি কেন এসেছ? আমি এসেছি তোমার জন্য যুবরাজ রূপের কুমার। যুবরাজ অবাক হয়ে বলল, আমার জন্য মানে! আমার জন্য তো আমার বাবা বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রাজ্যের রাজকন্যা খুঁজে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু কোথাও আমার মনের মতো রাজকন্যা খুঁজে পাচ্ছেন না। সে জন্যই তো আমি এলাম। আমি অনেক ক্লান্ত আমাকে একটু পানি খেতে দেবে। ঠিক আছে আমি এক্ষুণি নিয়ে আসছি। সঙ্গে সঙ্গে সোনার পাত্রে মিষ্টি পানি নিয়ে হাজির হলো যুবরাজ রূপের কুমার। রাজকন্যা পাখি সেই পাত্র থেকে মহা-আনন্দে পানি পান করল। তারপর আবার কথা বলা শুরু, যুবরাজ রূপের কুমার আকুল হয়ে জানতে চাইল, সত্যিই বল তো তুমি কেন এসেছ? রাজকন্যা পাখি আবারও বলল, আমি এসেছি তোমার জন্য গো। যুবরাজ রূপের কুমার রাজকন্যা পাখির সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে বলল, তুমি আমাকে বিয়ে করবে? হ্যাঁ অবশ্যই করব, আমার জন্মই তো হয়েছে তোমার জন্য। পৃথিবীর সব সুবাস নিয়ে যুবরাজ রূপের কুমার ও রাজকন্যা পাখি মিষ্টি একটা হাসি দিল। তাদের হাসিতে বাগানের সমস্ত কলি ফুল হয়ে ফুটে উঠল আর সে ফুলের সুবাস ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে।

রাজ্যময় ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করা হলো, অবশেষে যুবরাজের রাজকন্যা পছন্দ হয়েছে। সেই উপলক্ষে সাত দেশের সাত রাজ্যের সাত রাজা ও সমস্ত প্রজাদের নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রাজকন্যা পাখির বাবা-মা সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে ঝড়ের বেগে ছুটে এলেন। তারপর ঝিকিমিকি তারাদের আলো জ্বেলে যুবরাজ রূপের কুমারের সাথে রাজকন্যা পাখির মহা ধুমধামে বিয়ে হয়ে গেল। অতঃপর তারা সুখে শান্তিতে দিন কাটাতে লাগল।

এখন আমার গল্প শেষ। দাদু এটা তুমি কেমন গল্প বললে! পাখির সাথে মানুষের কখনো বিয়ে হয়? হয় দাদু ভালোবাসলেই হয়। মনের মিল থাকলে কি না হয়, স্বপ্নরাজ্যে সবকিছু সম্ভব, এই বলে দাদু কেমন আনমনা হয়ে গেলেন। কিন্তু দাদু তুমি যে বলেছিলে গল্পের মধ্যে একটা ধাঁধা আছে। হ্যাঁ, অবশ্যই আছে, তুমি খুঁজে নাও কে রাজকন্যা পাখি ও যুবরাজ রূপের কুমার- এটাই ধাঁধা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist