শরীফ সাথী

  ২৮ জুলাই, ২০১৮

বেজি ও গোখরা

পড়ন্ত বিকেল। বর্ষার টাপুরটুপুর বৃষ্টির ফোঁটা জানালার পাশে দাদু ও নাতির দেহের পরশ ছুঁয়ে ছুঁয়ে শীতল বায়ুতে দোলা দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনের মতো আজও নাতির আবদার দাদু গল্প শোনাও না এই বৃষ্টি ভেজা লগ্নে। দাদু কচি ঘাসের মতো মুচকি হেসে গল্প বলা শুরু করল-গহিন অরণ্যে জরাজীর্ণ কুঠিবাড়িতে বাস করত দুই বন্ধু বেজি ঠুলি ও ফুলি। প্রকৃতিরা বাড়ির চারদিকে নিদারুণভাবে খেলা করত। পাশে পুকুরের চতুর্দিকে ফলের গাছ আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, পাকা লাল লাল ডালিম আরো কত কিছু সবুজ ছায়া ঘিরে থাকত। বাতাসের ঢেউয়ে পুকুরের জল থৈ থৈ করত। মাছের দল এঁকেবেঁকে, দুলে দুলে খেলা খেলত। ব্যাঙের ডাকে বর্ষা আসত। পাখিদের সবুজ শ্যামল ডালে নাচানাচি আর সুর তুলে ডাকাডাকি ছন্দ ফিরে পেত কুঠিবাড়ি। ঠুলি ও ফুলি শখের বসে বিভিন্ন পশুপাখির বিয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠান করত। কি না আনন্দ হতো? ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ, ঝিঁঝিঁ পোকার চিচি ঝিঝি বিভিন্ন মাছ দলের লাফালাফি আর পাখিদের সুমিষ্ট গানে ভরে উঠত কুঠিবাড়ির আঙিনা। খেয়েদেয়ে আনন্দে চলতে থাকে তাদের মধুময় জীবন। এবার প্রচ- খরা ও পানির স্তর নিচে নেমে পুকুরের জল কমে যাওয়ায় কষ্ট পেতে পেতে দেরিতে বৃষ্টির আগমন। দেরিতে হলেও পুকুর জলে ভর্তি হয়ে ব্যাঙের ও মাছ দলের আনন্দের সীমা নেই। সকাল-বিকাল ডাকাডাকি। গাছ থেকে পাকাপাকা ফল পড়ে জলে। মাছ নাচে, ব্যাঙ নাচে, নাচে ঘুগরো তালে। এভাবেই দিন যেতে থাকে। ব্যাঙের ডাকে বাদল নামে কত আনন্দে? বেশি সুখ কি আর কপালে সয়? হঠাৎ একদিন ভয়ংকর গোখরা চুপি চুপি এসে ফস করে একটি ব্যাঙ ধরে নিয়ে গেল, পরের দিন পাখির ছানা ধরে চলে যায়। এভাবে দিন মাস পেরুতে ব্যাঙ ও পাখিদের মধুময় ডাক আস্তে আস্তে কমতে শুরু করল। বন্ধু বেজিদ্বয় ঠুলি ও ফুলি ব্যাঙ ও পাখির ছন্দ তালের ডাকে ঘুমাত। তারা ভাবল ডাক্ এত কমে যাওয়ার কারণ কী? তাই ব্যাঙ ও পাখির সর্দারকে ডেকে পাঠাল। জি মহাশয়, কিছু বলছেন? হ্যাঁ। তোমাদের মায়া-মমতা ভরানো মিষ্টিমধুর প্রিয় ডাকাডাকি এত কম হওয়ার কারণ কী? ব্যাঙ ও পাখিদ্বয় সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। বেজিদ্বয় রেগে অস্থির। মাথা ঠান্ডা করে ওদের শিখিয়ে দিল, যখনই গোখরা ধরতে আসবে, তখনই তোমরা সুরে সুরে ডাকবে-‘এসেছে এসেছেরে বন্ধু, এসেছে এসেছেরে বন্ধু’। তারপরের দিন গোখরার আসতে দেখে, ব্যাঙ ও পাখির দল মিষ্টি সুরে ডাকতে লাগল-এসেছে এসেছেরে বন্ধু, এসেছে এসেছেরে বন্ধু? বন্ধু বলে সম্বোধন করায় গোখরা আনন্দে আটখানা। গোখরা মিছে মিছে হাসে, তালে তালে নাচে আর ভাবে মজায় মজায় খাব। ঠিক এই ঠুলি ও ফুলি হাজির। সামনে ফুলি ফুলের মতো বিকশিত হয়ে খেলা দেখায় আর পেছন থেকে ঠুলি এক লাফে গোখরোর ঘাড় মটকে দিয়ে, দাঁতের ধারালো কাইচে দিয়ে গলা কেটে দিল। গোখরা কুপোকাত। মুহূর্তে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলল। তারপর থেকে আবার আনন্দে গান গায়তে শুরু করল, ব্যাঙ ও পাখিদের দল। নাতি ফোঁকলা দাঁতে হেসে উঠে বলল, ঠিক হয়েছে দাদু ভাই... ঠিক হয়েছে উচিত শিক্ষা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist