নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

শিশু-কিশোরদের বই বিক্রি বেড়েছে

মেলার সপ্তম দিন

অমর একুশে বইমেলার সপ্তম দিনে গতকাল বুধবার পাঠকদের সরব উপস্থিতি ছিল। পাঠক, লেখক ও প্রকাশকদের এক মহামিলন মেলায় রূপ নেয় সবার প্রিয় এ মেলা। এ এক প্রাণের মেলা। আত্মার সঙ্গে আত্মার যেমন সম্পর্ক, তেমনি বইয়ের সঙ্গে পাঠকের সম্পর্ক।

বাবার হাত ধরে এদিন মেলায় আসে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজনন্দীনি ও তার বোন দশম শ্রেণির ছাত্রী রূপকথা। মেলায় কেন এসেছো, এমন প্রশ্নের উত্তরে রাজনন্দীনি বলে- আমি বই কিনতে এসেছি। কাল (আজ) স্কুল বন্ধ। এজন্য আজ (গতকাল) এসেছি। সে আরো বলে, আনিসুল হকের গল্পের বই কিনেছি, গুড্ডু বুড়া। আরো বই কিনব। মেলায় ঘুরতে খুব ভালো লাগছে।

দশম শ্রেণির ছাত্রী রূপকথার পছন্দ সাইন্স ফিকশন ও কমিকস বই। সে বলে- মুহম্মদ জাফর ইকবালের সাইন্স ফিকশন ও হুমায়ূন আহমেদের অহক নামের বই কিনেছি। আহসান হাবিবের কিশোর উপন্যাস সমগ্র বই কিনেছি। পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্স থেকে বেসিক আলী, বাবু ও লাইলি সিরিজের বই সংগ্রহ করে রূপকথা।

পাঞ্জেরির এক বিক্রয়কর্মী বলেন, এবার বেলায় বিক্রি ভালো যাচ্ছে। বেশি বিক্রি হচ্ছে শিশু-কিশোরদের বই।

শুভ্র শ্যাম পাবলিকেশন্সের স্বত্বাধিকারী শ্যামল দাস বলেন, এবার মেলায় বেচাকেনা ভালো। শেষদিকে মেলা আরো জমবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

জানা গেছে, অমর একুশে বইমেলার শুরুটা হয়েছিল বাংলা একাডেমি চত্বরে চিত্তরঞ্জন সাহার হাত ধরে। দিনটি ছিল ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ। বর্তমান বাংলা একাডেমি তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন বর্ধমান হাউস প্রাঙ্গণের বটতলায় বই নিয়ে এসেছিলেন প্রকাশনা জগতের এক চিরস্মরণীয় ব্যক্তি, চিত্তরঞ্জন সাহা।

এখনকার মতো এমন স্টল আর সাজানো-গোছানো পরিবেশ তখন ছিল না। টেবিল-চেয়ারের আয়োজনও ছিল না। চিত্তরঞ্জন সাহা বই সাজিয়েছিলেন চটের ওপর। ১৯৭১ সালের মে মাসে তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন ভারতের কলকাতায়। কলকাতায় তখন বাংলাদেশের বহু লেখক, সাহিত্যিক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি বই প্রকাশের উদ্যোগ নেন এবং মুক্তিযুদ্ধের ওপর ৩২টি বই প্রকাশ করেন। সেসব বই নিয়েই আয়োজন করা হয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম বইমেলার।

সে বছর বাংলা একাডেমিও একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে হ্রাস করা মূল্যে বই বিক্রি করেছিল। তবে চিত্তরঞ্জন সাহার স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ (পরে মুক্তধারা প্রকাশনী) ছিল একমাত্র বেসরকারি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।

১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত চিত্তরঞ্জন সাহা নিজে চালিয়ে যান এ বইমেলা। চিত্তরঞ্জন সাহার আগ্রহ এবং মানুষের ভালোবাসার কারণে ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি এই উদ্যোগকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। ১৯৭৯ সালে মেলার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। সংস্থাটিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা। ১৯৮৪ সালে এসে গ্রন্থমেলার জন্য বিধিবদ্ধ নীতিমালা প্রণীত হয় এবং গ্রন্থমেলার নাম হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। সেই থেকে এ বইমলা প্রতি বছর প্রায় একই আঙ্গিকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close