মো. মঈনুদ্দীন ইরফান, কুবি

  ০৪ মে, ২০২৪

এক টেবিলে ১৮ পরীক্ষার্থী

স্নাতক প্রথম বর্ষের ‘বি’ ইউনিটের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা

দেশের ২৪টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ‘বি’ ইউনিটের গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা গতকাল শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) অন্তর্গত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে বেশ কয়েকটি ডিপার্টমেন্টের সেমিনার লাইব্রেরি কক্ষে পরীক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসে পরীক্ষা দিতে দেখা গেছে। শিক্ষক সমিতির নেতাদের অভিযোগ, ভিসি ইন্টেনশনালি অনভিজ্ঞ এবং মোস্ট জুনিয়র শিক্ষকদের ভর্তি পরীক্ষার দায়িত্ব দিয়ে ভর্তি পরীক্ষার মতো একটি আয়োজনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের সব সেমিনার লাইব্রেরিতেই ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। সেখানে এক টেবিলে ১৮ থেকে ২০ পরীক্ষার্থীকে বসতে দেখা যায়। প্রশাসনিক ভবনের হলরুমেও ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। আগের ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায়ও এভাবে সেমিনার লাইব্রেরিগুলোয় আসন বিন্যাস করা হয়েছে। সেমিনার লাইব্রেরিতে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থীর বলেন, সেমিনার কক্ষে তাদের কোনো সিট প্ল্যান বসানো হয়নি। শিক্ষকরা যাকে যেখানে বসতে বলেছেন, তারা সেখানেই বসে পরীক্ষা দেন। একসঙ্গে এক টেবিলে এতজন গাদাগাদি করে পরীক্ষা দেওয়ায় মনোযোগের সমস্যা হচ্ছিল। এভাবে ঠাসাঠাসি করে বসে পরীক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতা তার এখানেই প্রথম।

এনিয়ে বিজ্ঞান অনুষদের ৫ম তলার হল পরিদর্শক ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ককে প্রশ্ন করতে বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আহ্বায়ক ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন বলেন, আমি ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আহ্বায়ক। কিন্তু সিট প্ল্যানের জন্য ‘কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটি’ নামে আলাদা একটি কমিটি রয়েছে। সেই কমিটিই আসনবিন্যাসের ব্যাপারে ভালো বলতে পারবে। বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. প্রদীপ দেবনাথ বলেন, আমার অনুষদের প্রতিটি বিভাগের সেমিনার লাইব্রেরিতেই পরীক্ষা হয়েছে। এভাবে এক টেবিলে ১৮-২০ জন পরীক্ষা দিলে সেটার স্বচ্ছতা কতটুকু থাকবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটিই বলতে পারবে।

শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী মো. কামাল উদ্দিন বলেন, আগের ভর্তি পরীক্ষাগুলো আমরা খুব ভালোভাবে শেষ করেছি। কিন্তু ভিসি এবার আসন বণ্টনের যে কমিটি করেছেন, সেখানে তিনি তার আস্থাভাজন একেবারে অনভিজ্ঞ, জুনিয়র শিক্ষকদের দায়িত্ব দিয়েছেন। যার ফলে ল্যাব, সেমিনারের মতো রুমগুলোয়ও পরীক্ষা নিয়েছে। যেখানে ৫ জন বসতে পারবে, সেখানে ১০ জন বসিয়েছে। এটা আসলে তাদের অনভিজ্ঞতার ফল। আর এ দায়ভার সম্পূর্ণ ভিসির। তিনি ভর্তি পরীক্ষার মতো একটি আয়োজনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। দেশবাসীর কাছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে হাস্যকর করে তুলছেন।

কেন্দ্র ব্যবস্থা কমিটির সদস্য সচিব আবু উবায়দা রাহিদ এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এমন অদ্ভুত আসন বিন্যাসের দায়ভার তিনি নেবেন কি না- সেই প্রশ্ন করা হলে তিনি নিজে কোনো দায় না নিয়ে কমিটির আহ্বায়কের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক ও লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. রশিদুল ইসলাম শেখ বলেন, এবার আমরা চেয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সর্বোচ্চসংখ্যক পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নিতে। সেজন্যই সেমিনার লাইব্রেরিগুলোয়ও পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এ অল্পসংখ্যক পরীক্ষার্থীর জন্য আরেকটা কেন্দ্র ব্যবস্থা করা কঠিন ছিল।

এক টেবিলে ১৮ থেকে ২০ জন একসঙ্গে পরীক্ষা দিলে সেখানে স্বচ্ছতা থাকে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেখানে আমাদের শিক্ষকরা দায়িত্বে ছিলেন। তারা সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছেন। এখন যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে পরবর্তী সময়ে এভাবে সেমিনার লাইব্রেরিগুলোয় আমরা আর পরীক্ষা নেব না। প্রসঙ্গত, গুচ্ছভুক্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে এবার ৪ হাজার ২৯২ পরীক্ষার্থীর আসনের ব্যবস্থা করা হয়। এর মধ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুমিল্লা টিচার্স ট্রেনিং সেন্টার এ দুটি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close