নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

চার বছরে খনন হবে ১০০ কূপ

গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এবং ডলারের ঘাটতির মধ্যে ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলা অভ্যন্তরীণ গ্যাস উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর জন্য একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর আওতায় ২০২৫ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে ১০০টি নতুন এবং পুরোনো কূপ খনন করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।

পেট্রোবাংলা বর্তমানে দৈনিক অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ৪৮টি অনুসন্ধানমূলক, উন্নয়ন ও সংস্কারপূর্ণ কূপ খননের জন্য আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব কূপের মধ্যে ২৩টির খননকাজ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাপেক্স (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড) পরিচালনা করবে। বাকি ২৫টির কাজ আউটসোর্স করা হবে। পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী, দেশে গ্যাসের চাহিদা প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু আমদানি করা ৬৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসসহ দৈনিক গড় সরবরাহ মাত্র ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ প্রায় ১ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের দৈনিক ঘাটতি রয়েছে দেশে।

২০২৯-৩০ সালের মধ্যে দেশের গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৬ হাজার ৬৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট হবে বলে অনুমান করছে পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে ৪ হাজার ৩৫২ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পেট্রোবাংলার একটি নথির বিবরণ অনুযায়ী, এ ব্যবধান পূরণ করতে সরকার অভ্যন্তরীণ গ্যাস উৎপাদনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, অনশোর এবং অফশোর প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে। একটি আন্তর্জাতিক কোম্পানি এরই মধ্যে দুটি অফশোর ব্লকে নতুন মজুদ অনুসন্ধানে কাজ করছে। অফশোর তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে আরো বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য অফশোর মডেল প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট (পিএসসি) বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীতে পেট্রোবাংলা অফিসে দেশের গ্যাসের চাহিদা, সরবরাহ এবং অনুসন্ধানের সুযোগ নিয়ে এক সেমিনারে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ১০০টি কূপের মধ্যে বাপেক্স ৫২টি নতুন কূপ খনন করবে এবং বিদ্যমান ১৬টি কূপের সংস্কার করবে। এছাড়া বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড ৯টি নতুন কূপ খনন করবে এবং পুরোনো সংস্কারপূর্ণ ১২টিতে খননকাজ চালাবে এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড ৮টি নতুন কূপ খনন করবে এবং পুরোনো ৩টিতে সংস্কারকাজ চালাবে।এজন্য তিন শতাধিক সম্ভাবনাময় এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে ১০০টি কূপ চূড়ান্ত করা হবে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আমরা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করব এবং অবিলম্বে আমাদের বর্তমান এবং সাবেক প্রকৌশলী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করব।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আরো বলেন, ৪৮ কূপ খননের চলমান প্রকল্প দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ হবে। দেশ এরই মধ্যে এ গ্যাস অনুসন্ধান কর্মসূচির সুফল পেতে শুরু করেছে। জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ১০টি কূপ সফলভাবে খননের মাধ্যমে দৈনিক ১৩ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা বেড়েছে বাংলাদেশে। যদিও আমরা দৈনিক ১০ কোটি ঘনফুট উৎপাদন বৃদ্ধির আশা করেছিলাম। চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে সাধারণত ২ হাজার ৬০০ মিটার থেকে ৪ হাজার মিটার পর্যন্ত কূপ খনন করে গ্যাস তোলা হয়। তবে ফেঞ্চুগঞ্জ-২সহ কিছু কূপে ৪ হাজার ৯০০ মিটার পর্যন্ত খনন করা হয়েছে। পাবনার মোবারকপুরসহ ২টি কূপে আরো গভীর খনন করার কাজ শুরু করেছি। আমরা ডিপ ড্রিলিং থেকেও অনেক ভালো ফল আশা করছি। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব নুরুল আলম বলেন, আমরা মার্চের প্রথম সপ্তাহে আমাদের অফশোর বিডিং গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি। আমরা অফশোর তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য অবিলম্বে দরপত্র আহ্বান করতে প্রস্তুত।

এদিকে, সিলেটের গোলাপগঞ্জের কৈলাশটিলা গ্যাসক্ষেত্রে আরও ১.৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস পাওয়া যাবে বলে আমরা আশা করছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি জানান, আগামী চার মাসের মধ্যে খনন শেষ হবে, এরপর এ গ্যাস সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। গতকাল শনিবার অনুসন্ধান কূপ কৈলাশটিলা-৮ খনন প্রকল্প পরিদর্শন শেষে এ মন্তব্য করেন নসরুল হামিদ।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, কৈলাশটিলা ফিল্ডে আগে ৩ টিসিএফ মজুত ছিল। অনুসন্ধান কূপ খনন করায় মজুত আরও বাড়বে। দেশীয় ফিল্ড থেকে গ্যাস পেলে ৪ টাকায় পাওয়া যায়, একই পরিমাণ গ্যাস আমদানি করতে ৬০ টাকা খরচ হয়। মাত্র ২৩ শতাংশ গ্যাস আমদানি করতে না হলে অনেক সাশ্রয় হতো।

এ সময় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে নসরুল হামিদ বলেন, আপনারা উদ্যোগ নেবেন, আমরা সেই অপেক্ষায় বসে থাকি। মন্ত্রণালয় কোনো প্রকল্প গ্রহণ করে না। আমরা চাই প্রত্যেকে সক্ষমতা দেখাক, আমরা তাদের সক্ষমতার দিকটি দেখতে চাই। যারা ভালো করবে তাদের মূল্যায়ন করা হবে।

সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, কৈলাশটিলায় এর আগে সাতটি কূপ খনন করা হয়েছে। প্রতিটি কূপেই গ্যাস পাওয়া গেছে। সাড়ে ৩ হাজার মিটার খনন করা হবে। ১ টিসিএফের ওপরে গ্যাস পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি কৈলাশটিলা-৮ কূপের খনন কাজ শুরু হয়। চার মাসের মধ্যে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা। সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির এই কূপটি খনন করছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close