মো. দিদার আলী সরকার, চবি
ক্যারিয়ার গঠনে শিক্ষা বিষয়
শিক্ষা বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির নামই (ব্যাচেলর অব এডুকেশন) বিএড ও (মাষ্টার অব এডুকেশন)এমএড। শিক্ষকতায় পেশায় যারা আসতে চান এবং শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী তাদের জন্যই এসব কোর্স। বর্তমানে বাংলাদেশে ৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে ৪-৫ বছর মেয়াদি শিক্ষা বিষয় চালু রয়েছে। এ ছাড়াও ১১৬টি বিএড কলেজ রয়েছে, এগুলোর মধ্যে ১৫টি সরকারি ও ১০১টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি চালু রয়েছে। তবে ১১৬টি বিএড কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। শিক্ষা বিষয় ডিগ্রিধারীদের সব সরকারি/বেসরকারি স্কুল ও কলেজে ২য় শ্রেণির স্কেলে বেতন প্রদান করা হয়।
যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে শিক্ষা বিষয়
বাংলাদেশে শিক্ষা বিষয় আছে, এমন উল্লেখযোগ্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয় হলো: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস।
শিক্ষা সম্পর্কে অবগত
শিক্ষা মানুষকে জ্ঞান, দক্ষতা ও মূল্যবোধ দান করে। একজন শিক্ষার্থী যে সব বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন সবই পাচ্ছে এখানে পড়াশোনা করলে। এখানে ভাষা শিক্ষা, আনুষ্ঠানিক শিক্ষা, অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা, স্ব-শিক্ষা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষা, সামাজিক বিজ্ঞান শিক্ষা, শিক্ষা মনোবিজ্ঞান, বিজ্ঞান শিক্ষা, শিখন, মূল্য যাচাই, প্রতিফলনমূলক অনুশীলন, এডুকেশনাল ইভালুয়েশন, বিশেষ শিক্ষা, প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা, শিক্ষা প্রশাসন, টিপ্যাক মডেল, শিক্ষণ দক্ষতা, শিক্ষার ভিত্তি, শিক্ষাক্রম, জেন্ডার এডুকেশন, শিক্ষা গবেষণা, মাধ্যমিক শিক্ষা, শিক্ষাক্রম ও শিশুর ক্রমবিকাশ, মৌলিক কম্পিউটার দক্ষতা, কর্মসহায়ক গবেষণা, শিক্ষা পদ্ধতি এছাড়াও শিক্ষার্থীরা বাস্তব কর্মক্ষেত্রে বোঝা ও জ্ঞানার্জনের জন্য ছয় মাসের একটি ইন্টার্নশিপ করতে হয়।
বহির্বিশ্বে উচ্চশিক্ষার সুযোগ
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করলে বহির্বিশ্বে উচ্চশিক্ষায় ব্যাপক সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বে উচ্চ শিক্ষার সুবিধা অনেক বেশি। বিশ্বের উন্নত দেশে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা বৃত্তি দিয়ে থাকে এগুলো হচ্ছে কলোম্বিয়া ইউনিভার্সিটি; যুক্তরাষ্ট্র, মোনাস ইউনিভার্সিটি; অস্ট্রেলিয়া, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি; কানাডা, জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি; যুক্তরাষ্ট্র, নরোজিয়ান ইউনিভার্সিটি অব লাইফ সাইন্স; নরওয়ে। এছাড়াও যুক্তরাজ্য, জাপান, কোরিয় প্রভৃতি দেশে শিক্ষা নিয়ে পড়ার জন্য আলাদা বিশ্বিবদ্যালয় রয়েছে। দেশে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষার্থীদের।
ফুলব্রাইট স্কলারশিপ, ইকুইটি অ্যান্ড মেরিট স্কলারশিপ, কমনওয়েলথ শেয়ার্ড স্কলারশিপ, কমনওয়েলথ স্কলার শিপে এখানে ইউজিসি কর্তৃক আইইআরের জন্য আলাদা ক্যাটাগরি রয়েছে। তাছাড়াও শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষার্থীরা সারা বিশ্ব থেকে যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ শিক্ষা নিতে পারবে।
শিক্ষাবিদদের ক্যারিয়ার
আইইআর থেকে পড়ে অনেকেই দেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় শিক্ষা বিভাগে চাকরি করছে। ব্যাচেলর-অব-এডুকেশন/বিএড ও মাস্টার্স অব এডুকেশন/এমএড সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের চাকরির ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা রয়েছে। তবে শিক্ষার জন্য রয়েছে এর নিজস্ব কাজের ক্ষেত্র। যেমন: বিসিএস, বিসিএস (শিক্ষা), শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, শিক্ষা অধিদপ্তর, জেলা শিক্ষা অফিসার, শিক্ষা বোর্ড, নায়েম, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা রিসোর্স সেন্টার ইন্সট্রাক্টর, এনটিআরসিএ, এনসিটিবি, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসমূহ এবং পিএসসি পরিচালিত সব ধরনের পরীক্ষাসহ সব ধরনের চাকরির পরীক্ষা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতো দিতে পারবে। এছাড়াও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে নিজস্ব অনেক সুযোগ-ইউনিসেফ, ইউনেস্কো, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, সেভ দ্য চিলড্রেন, ব্রাক, প্রশিকা, রুম টু রিড, ইউএনএইড, গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন, অক্সফাম, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, এডুকেশন ফার্স্ট, গ্লোবালক্যাম্পেইন ফর এডুকেশন, ব্রিটিশ কাউন্সিল, ইউএন গার্লস এডুকেশন, এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল ব্যুরো অব এডুকেশন, ইউএসএইড, আহসানিয়া মিশন ইত্যাদি।
সহশিক্ষা কার্যক্রম
এখানে শিক্ষার্থীরা তাদের একাডেমিকের বাহিরেও বিভিন্ন সংগঠনে যুক্ত হয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষার্থীরা সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোতেও বলিষ্ঠ পদচারণা আছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কৃতিত্ব রয়েছে। এখানে কয়েকটি সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলো হলো বির্তক ক্লাব, ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, সাম্য ক্লাব, বৃহন্নলা ক্লাব, ডিবেটিং ক্লাব, বিজ্ঞান ক্লাব, ন্যাচার স্টাডি ক্লাব, গবেষণা সমন্ধসমূহ, আবৃত্তি, অভিনয়, বক্তৃতা, কুইজ প্রতিযোগিতা, রচনা লিখন, নাচ, গান, থিয়েটার, খেলাধুলা, রোভার স্কাউট, বিজনেস ক্লাব, লেখালেখি, আর্ট ক্লাব, ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলন, যুব রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, দেয়ালিকা, কিরাত, ক্যারিয়ার ক্লাব, রক্তদান কর্মসূচি, স্বাক্ষরতা অভিযান, বার্ষিক ম্যাগাজিন, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, শিক্ষা ভ্রমণ, প্রদর্শনী, বিজ্ঞান মেলা, বই মেলা, কুটির মেলা, উপস্থাপন, লাইব্রেরি, পরিবেশ ক্লাব, সাহিত্য ক্লাব ইত্যাদি।
শিক্ষা বিষয়ের সম্পর্কে শিক্ষার্থীর অভিমত
শিক্ষা বিষয়ের সম্পর্কে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষার্থী নাজমা আক্তার রিপা বলেন, ‘শিক্ষাবিদ হওয়া মানে শুধু পড়ানো নয়, এটি একটি সম্মানজনক ও সমাজসেবা পেশা। সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে এবং শিক্ষা দিতে ভালোবাসেন, তাহলে আপনার জন্য শিক্ষাবিদ হওয়া একটি চমৎকার পছন্দ হতে পারে।
শিক্ষা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ অভিমত
শিক্ষা বিষয়ের সম্পর্কে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক মো. কবির হোসাইন বলেন, “আমি মনে করি, ‘শিক্ষা’ বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়া অন্য ডিসিপ্লিনের চেয়ে কোনো অংশে কম নয় বরং একটু বেশিই সুযোাগ রয়েছে। বাইরে উচ্চ শিক্ষার সুযোাগ যেমন রয়েছে, তেমনি দেশেও রয়েছে অগাধ সুযোগ। যেমন- পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্বিবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর, পিটিআই ইন্সট্রাক্টর, থানা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার, ডিস্ট্রিক্ট ট্রেনিং কো অর্ডিনেটর, ব্যাংকার (সরকারি ও প্রাইভেট), বিভিন্ন স্বায়ত্বশাসিত সরকারি প্রতিষ্ঠানের সহকারী ব্যবস্থাপক ও অন্যান্য, বিভিন্ন এনজিও তে কারিকুলাম ডেভেলপার, লার্নিং ম্যাটেরিয়াল স্পেশালিস্ট, রিসার্চার, ক্যাডার-নন ক্যাডার বিভিন্ন পোস্ট, বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ড, ন্যাশনাল+ ইন্টারন্যাশনাল এনজিওতে এজুকেশনাল প্রজেক্টে রিসার্চার, সরকারিভাবে পরিচালিত বিভিন্ন প্রজেক্ট, শিক্ষার উন্নয়নে কর্মরত দেশি-বিদেশি এনজিওসমূহ। এছাড়া বেসরকারী প্রতিষ্ঠানেও কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশে শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- NCTB, NAEM, NAPE, DSHE, NTRCA, PTI, TTC প্রভৃতিতে এখনো শিক্ষার শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। দেশ-বিদেশে দিন দিন শিক্ষা গ্র্যাজুয়েটদের চাহিদা বাড়ছে। কারণ একবিংশ শতাব্দীতে এসে দক্ষ শিক্ষক ছাড়া কার্যকর শিক্ষণ শিখন কার্যক্রম প্রায়ই অসম্ভব।
"