নিজস্ব প্রতিবেদক

  ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮

এক নজরে গত ১০টি নির্বাচন

স্বাধীনতা পরবর্তী ১০টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র কয়েকটি। এর মধ্যে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ, ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ, ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ এবং ২০০৯ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও অংশগ্রহণমূলক হতে যাচ্ছে সবার অংশগ্রহণে। তবে, প্রতিটি নির্বাচনে ভোটার বাড়ার সঙ্গে প্রার্থীদের জামানতও বেড়েছে। শুরুতে ১ হাজার টাকা জামানত দিয়ে শুরু হয়ে বর্তমানে জামানত দিতে হয় প্রার্থীদের ২৫ হাজার টাকা।

প্রথম নির্বাচন : স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চে। দিনটি ছিল বুধবার। এ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা ছিল ১৪টি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ১০৯১ জন। এসব প্রার্থীদের ৩ কোটি ৫২ লাখ ৫ হাজার ৬৪২ জন। এ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিল ১ কোটি ৮৮ লাখ ৫১ হাজার ৮০৮ জন। মোট ভোট পড়েছিল ৫৩.৫৪ শতাংশ। প্রথম এই নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানত নির্ধারণ করেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি) ১ হাজার টাকা।

এ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ১৪টি দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ সংসদীয় ৩০০ আসনের মধ্যে এককভাবে আসন পেয়েছিল ২৯২টি, সংরক্ষিত মহিলা ১৫সহ এ সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব আসন দাঁড়ায় ৩০৭টি। এ নির্বাচনে দলটির ১১জন সদস্য বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিল। বাকি দলগুলোর মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ৩টি, ন্যাপ (ভাসানী) ১টি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ ১টি এবং স্বতন্ত্র ৩ জন প্রার্থী এমপি নির্বাচিত হয়েছিল।

প্রথম সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন ছিল ১৫টি, যার সব কয়টি পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। এ সংসররেদর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৭৯-৮২) : রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অধীনে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি (রোববার)। এ নির্বাচনে ২৯টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ১২৫ জন। এ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫৮ জন। ভোট ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিল ১ কোটি ৯৬ লাখ ৭৬ হাজার ১২৪ জন। মোট ভোট পড়েছিল ৫১.২৮ শতাংশ। এ নির্বাচনের জামানাত ছিল ২ হাজার টাকা।

এ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি বিজয়ী হয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসন ১৫ থেকে বাড়িয়ে ৩০ নির্ধারণ করেন।

নির্বাচনে বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে এককভাবে ২২০টি পায়। এর সঙ্গে সংরক্ষিত ৩০টি আসন যোগ হয়ে মোট আসন দাঁড়ায় ২৫০টি। ওই নির্বাচনে বিরোধী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পায় ৩৯টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ১২টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিকদল জাসদ ৮টি, ইসলাম ডেমোক্রেটিক লীগ ৬টি, আওয়ামী লীগ (মিজান) ২টি, জাতীয় লীগ ২টি, গণফ্রন্ট ২টি, বাংলাদেশ গণতন্ত্রিক আন্দোলন ১টি, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, জাতীয় একতা পার্টি ও ন্যাপ (মোজাফফর) ১টি করে আসন পায়। এছাড়া স্বতন্ত্র ৫ জন এমপি নির্বাচিত হন।

এ সংসদের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শাহ আজিজুর রহমান এবং সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন আসাদুজ্জামান খান।

তৃতীয় সংসদ নির্বাচন (১৯৮৬-৮৭): রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অধীনে এ সংসদ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালের ৭ মে (বুধবার)। এ নির্বাচনে ২৮টি দলের বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৫২৭ জন। মোট ভোটার ৪ কোটি ৭৩ লাখ ২৫ হাজার ৮৮৬ জনের মধ্যে ভোট দেন ২ কোটি ৮১ লাখ ৩ হাজার ৮৮৯ জন। আর মোট ভোটের হার ছিল ৫৯.৩৮ জন। জামানাত ছিল ৫ হাজার টাকা।

বিএনপির নির্বাচন বর্জন করলেও জাতীয় পার্টি ১৮৩ আসন লাভ করে সরকার গঠন করে। বিরোধী দলে ছিল আওয়ামী লীগ তাদের প্রাপ্ত আসন ছিল ৭৬টি। বাকি দলগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ১০টি, কমিউনিস্ট পার্টি (পিসিবি) ৬টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ৫টি, মুসলীম লীগ ও জাসদ (রব) ৪টি করে, ওয়ার্কার্স পার্টি (নজরুল) ও জাসদ (সিরাজ) ৩টি করে, ন্যাপ (মোজাফফর) ২টি এবং স্বতন্ত্র ৪টি মোট ৩০০টি। আর সংরক্ষিত ৩০টিসহ মোট ৩৩০টি।

এ সংসদের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মিজানুর রহমান চৌধুরী এবং বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চতুর্থ সংসদ নির্বাচন (১৮৮৮-৯০) : রাষ্ট্রপতি এরশাদের অধীনে ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ (বৃহস্পতিবার) চতুর্থ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ৮টি দলের অধীনে ৯৭৭ জন প্রার্থী অংশ নেয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ অনেক দল অংশ নেয়নি। ৪ কোটি ৯৮ লাখ ৬৩ হাজার ৮২৯ জন ভোটারের মধ্যে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটদান করেন ২ কোটি ৮৮ লাখ ৭৩ হাজার ৫৪০ জন। মোট ভোট পড়েছিল ৫৪.৯৩ শতাংশ। জামানত ছিল ৫ হাজার টাকা।

এ সংসদেও জাতীয় পার্টি ২৫১টি আসন পায়। বাকি আসনগুলো পায় সম্মিলিত বিরোধী দল ১৯টি, জাসদ (সিরাজ) ৩টি, ফ্রিডম পার্টি ২টি এবং স্বতন্ত্র ২৫টি। এ সংসদের সংরক্ষিত আসন ৩০টি। প্রধানমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও কাজী জাফর আহমেদ এবং বিরোধীদলীয় নেতা আ স ম আবদুর রব।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন (১৯৯১-৯৬) : ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২৫টি রাজনৈতিক দলের বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন ২ হাজার ৭৮৭ জন। ৬ কোটি ২০ লাখ ৮১ হাজার ৭৯৩ জন ভোটারের মধ্যে ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৭৭ হাজার ৮০৩ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ভোট পড়ার হার ছিল শতকরা ৫৫.৫৪ শতাংশ। এ নির্বাচনেও প্রার্থীদের জানামত ছিল ৫ হাজার টাকা।

এ নির্বাচনে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং তার দল বিএনপি আসন পায় ১৪০টি (সংরক্ষিত-২৮টি), বিরোধী দলে থাকা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ পায় ৮৮টি, জাতীয় পার্টি ৩৫টি, সিপিবি ও বাকশাল ৫টি করে, ন্যাপ (মোজাফফর), জাসদ (সিরাজ), এনডিপি, ইসলামী ঐক্যজোট, ও গণতান্ত্রিক পার্টি ১টি করে, জামায়াতে ইসলামী ১৮টি (সংরক্ষিত-২টি) এবং স্বতন্ত্র ৩টি।

৬ষ্ঠ সংসদ নির্বাচন (১৯৯৬-৯৬) : এ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। অংশগ্রহণকারী ৪২টি দলের বিপরীতে প্রার্থী ছিল ১ হাজার ৪৫০ জন। এ নির্বাচনে ৫ কোটি ৬৭ লাখ ২ হাজার ৪২ জন ভোটারের মধ্যে তাদের ভোট দেন ১ কোটি ১৭ লাখ ৭৬ হাজার ৪৮১টি।

আওয়ামী লীগসহ অনেকে অংশ না নেওয়ায় এ সংসদের বিরোধী দল ছিল না। মাত্র ৪ দিন সংসদ ছিল। অংশগ্রহণকারী দলের মধ্যে বিএনপি পায় ২৭৮টি (বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৪৮ জন), ফ্রিডম পার্টি ১টি ও স্বতন্ত্র ১০টি। এ সংসদের রাষ্ট্রপতি ছিলেন আবদুর রহমান বিশ্বাস এবং প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন (১৯৯৬-২০০১) : ১৯৯৬ সালের ১২ জুন এ নির্বাচন হয়। নির্বাচনে ৮১টি রাজনৈতিক দলের বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন ৫৭২ জন। ৫ কোটি ৬৭ লাখ ২ হাজার ৪২২ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দেন ৪ কোটি ২৮ লাখ ৮০ হাজার ৫৬৪ জন। মোট ভোট পড়ে ৭৫.৬০ শতাংশ। সব দলের অংশগ্রহণে এ নির্বাচন হয়। জামানাত ৫ হাজার টাকা।

দীর্ঘদিন পর এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬ (সংরক্ষিত-৩০) আসনে এবং জোট নিয়ে সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। বিরোধী দলের নেতা হন খালেদা জিয়া। তার দল বিএনপি এ নির্বাচনে আসন পায় ১১৬টি। বাকি আসনগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টি পায় ৩২টি, জামায়াত ৩টি, ইসলামী ঐক্যজোট, জাসদ (রব) ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১টি করে আসন পান।

অষ্টম সংসদ (২০০১-২০০৬) : ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনে ৫৫টি দলের বিপরীতে ১ হাজার ৯৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ৭ কোটি ৪৯ লাখ ৪৬ হাজার ৩৬৮ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দেয় ৫ কোটি ৬১ লাখ ৮৫ হাজার ৭০৭ জন। এ নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল ৭৪.৭৩ শতাংশ। প্রার্থীদের জামানত বেড়ে ১০ হাজার টাকা করা হয়।

তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ নির্বাচনে তার দল আসন পায় ১৯৩ (সংরক্ষিত-৩৬টি)। বিরোধী দলে থাকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তার দল আসন পায় ৬২টি, জামায়াত ১৭টি (সংরক্ষিত-৪টি), জাতীয় পার্টি (এন-এফ) ৪টি, ইসলামী ঐক্যজোট ২টি (সংরক্ষিত-২টি), জাতীয় পার্টি (ইসলামী ঐক্যফ্রন্ট) ১৪ (সংরক্ষিত-৩টি), জাতীয় পার্টি (ম) ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ১টি করে এবং স্বতন্ত্র ৬টি।

নবম জাতীয় সংসদ (২০০৮) : ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ভোট অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করার পর সব শর্ত পালন করে ৩৯টি দল নির্বাচনে অংশ নেয়। এ দলের বিপরীতে প্রার্থী হন ১ হাজার ৫৬৭ জন। প্রথম ছবিসহ ভোটার তালিকা অনুযায়ী ৮ কোটি ১০ লাখ ৮৭ হাজার ৩ জন ভোটারের মধ্যে ৭ কোটি ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৪৮৫ জন ভোটার ভোটদান করেন। ভোট পড়ার হার ছিল ৮৬.৩৪ শতাংশ। এ নির্বাচনের জামানত ১০ হাজার।

দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ, তাদের প্রাপ্ত আসন ছিল ২৩০ জন (সংরক্ষিত-৪১ জন), বিএনপি ৩০ জন (সং-৫), জাতীয় পার্টি ২৭ (সং-৪ জন), জাসদ ৩, ওয়ার্কার্স পার্টি ২, জামায়াত ২, বিজেপি ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ১টি করে এবং স্বতন্ত্র ৪টি।

এ সংসদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।

দশম জাতীয় সংসদ (২০১৪) : বিএনপিসহ কয়েকটি দলের বর্জনের মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ১১টি দল অংশ নেয়। একতরফা নির্বাচনে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। এ নির্বাচনে তার দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ। এ নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল ৪১ শতাংশ।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close