তুহিন খান নিহাল

  ২৯ জানুয়ারি, ২০২০

টনি ডায়েসের সঙ্গে ৪৫ মিনিট

নব্বই দশকের জনপ্রিয় অভিনেতা টনি ডায়েস

বাংলার চিরসবুজ প্রকৃতি আর হলুদে ঘেরা সরিষার সতেজ ঘ্রাণে আন্দোলিত হয়ে নিজ দেশে ছুটে এলেন নব্বই দশকের জনপ্রিয় অভিনেতা টনি ডায়েস। ফিরলেন দীর্ঘ পাঁচ বছর পর। ২৩ জানুয়ারি নিজের ফেসবুক ওয়ালে সরিষার মাঠে দাঁড়িয়ে দুহাত বাড়িয়ে জানান দিলেন তিনি বাংলাদেশে। ছবির নিচে প্রশ্ন ছুড়েছেন অনেকেই আপনি-তুমি-তুই বাংলাদেশে? তখনো অনেকেই বুঝতে পারেননি।

২৪ জানুয়ারি কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের একটি ছবি পোস্ট করেন তিনি। ক্যাপশনে লিখেছেন ‘আহা কী শান্তি’। পরবর্তীতে নিজের বন্ধুদের সঙ্গে ছবি পোস্ট করে লোকেশনের ঘরে সমুদ্রসৈকত থাকায় সবাই আঁচ করলেন তিনি দেশে এসেছেন।

সবার মধ্যে জানাজানিটা যেন টনির ভালো লাগার জন্ম দিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুদেবার্তা আর দেখা করার প্রবল ইচ্ছাটা টনির আনন্দটা যেন কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিল। যদিও বন্ধুবান্ধবের জন্যই এবার টনির দেশে আসা। তাইতো প্রাণবন্ত আড্ডা হলো সহকর্মী, বন্ধুদের সঙ্গে। সোমবার রাতে নিউইয়র্কে ফেরার আগ মুহূর্তে বনানীর একটি রেস্তোরাঁয় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মগ্ন ছিলেন তিনি। পরনে সাদা-পেস্ট কালারের ফুলহাতা গেঞ্জি ও জিন্সের প্যান্ট। সেই পরিচিত মুখ, একসময় যার অভিনয় দর্শককে মোহিত করে রেখেছিল। দেখা হলো টনি ডায়েসের সঙ্গে। সেখানেই কথা হলো, খানিকটা আড্ডা হলো। ঠিক ঘড়ি ধরা ৪৫ মিনিট।

কক্সবাজারে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা শেষে ঢাকায় এসে নিজের বেড়ে ওঠা শহরের প্রতি খানিকটা অনুরাগের কথা বললেন টনি! জানালেন, ঢাকায় এসেই ঘুরতে বের হলাম, কিন্তু মনে হলো আমি আকাশ দেখতে পাচ্ছি না। নগরজুড়ে বিশাল বিশাল অপরিকল্পিত অট্টালিকা; যা পৃথিবীর কোনো দেশেই নেই। আর নির্বাচনী পোস্টার। মোটকথা পরিকল্পিত নগরী নয় ঢাকা। মনটা খারাপ হয়ে গেল। মনে হলো, এই নগরীর মানুষগুলো খুব কষ্টে আছে।

নিজের ছোটবেলার স্মৃতি উল্লেখ করে টনি বলেন, ‘আমার বেড়ে ওঠা ক্যান্টনমেন্টে। সেই সুবাধে ছোটবেলায় বনানী ঘুরে বেড়িয়েছি। সাইকেল নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায়, খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকতাম। অবশ্য তখন বেশ কয়েকটা খেলার মাঠ ছিল। ছিল ফাঁকা রাস্তা। বর্তমান বনানীর মতো ডিভাইডার ছিল না। এখন দেশে এলে ছোটবেলার সেই স্মৃতিগুলো ভীষণ ভাবায় আমাকে। বর্তমানে ঢাকার বড় সমস্যা যানজট। এই যানজট, গাড়ির শব্দ মানুষের মেধাকে হ্রাস করে দিচ্ছে। মানুষের মধ্যে হতাশা কাজ করছে।’

ঢাকায় আসার আগেই নিজের বন্ধুদের সঙ্গে চমৎকার সময় কাটিয়েছেন কক্সবাজারে। টনি বলেন, ‘এবারে দেশে আসার পরিকল্পনাটা একটু ব্যতিক্রম। শুধু শৈশবের বন্ধুদের সঙ্গে ভালো কিছু সময় কাটানোর জন্যই বাংলাদেশে আসা। স্কুলজীবনের ৪০ জন বন্ধু এক হয়েছি কক্সবাজারে। বন্ধুদের অনেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকে। সবাই কিন্তু প্রাণের টানে ছুটে এসেছি নিজ দেশে কিছুটা সময় একসঙ্গে কাটানোর জন্য। মোটকথা খুবই চমৎকার কেটেছে। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে বন্ধুরা গিয়ে পানিতে নেমেছি, শৈশবের বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছি, সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত উপভোগ করেছি, নানা রকম মাছ ধরেছি, নিজের দেশের প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য ক্যামেরাবন্দি করেছি, নাফ নদ দেখতে গিয়েছি, দেশের চিরচেনা সেই খাবার সবাই মিলে খেয়েছি, মোটকথা বন্ধুরা মিলে স্মৃতিকাতরতার এক শহরে পাড়ি দিয়েছি।’

দীর্ঘ মাইল দূরে বসবাস করলেও নিজের দেশের ছবি দেখা হয় টনির। জানালেন, ছবি দেখা হয়। চেষ্টা করতেছি নিউইয়র্কে নিজের দেশের ছবি প্রদর্শনী বাড়ানোর। সেখানকার বাঙালিদের অভ্যাস রয়েছে হলে গিয়ে ছবি দেখার। কলকাতার ছবি এখানে নেই, তাই বাংলাদেশের ছবি ভালো চলে। একটি ছবি সপ্তাহজুড়ে প্রদর্শনী হয়। হলগুলোর ২০০ সিটের মধ্যে প্রায় একশর মতো লোক হয়। এটা অনেক বড় বিষয়। সম্প্রতি নিউইয়র্কে প্রদর্শিত হয় অনম বিশ্বাস পরিচালিত ‘দেবী’ এবং গোলাম সোহরাব দোদুলের ‘সাপলুডু’ চলচ্চিত্রটি। সেখানে দুটি ছবিই বেশ প্রশংসিত হয়।

নিজের সময়কার থিয়েটার অনেক জনপ্রিয় ছিল উল্লেখ করে টনি বলেন, ‘আমাদের সময় থিয়েটার অনেক জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু স্টেজ এত ভালো ছিল না। বর্তমানে অনেক ভালো কাজ হচ্ছে। অনেকেই ভালো কাজ করতেছে, শো হাউসফুল হচ্ছে। কয়েক দিন আগেই চলে গেলেন নিশাত আপা। খুব খারাপ লেগেছে ওনার জন্য। মাঝে একবার নিউইয়র্ক গিয়েছিলেন নিশাত আপা, সেখানে দেখা হয়েছিল।’

অভিনয়ের জন্য কেউ যদি চায় আবারও প্ল্যান করে ঢাকায় আসার কথা জানান জনপ্রিয় এ অভিনেতা। বলেন, ‘এবার তো অভিনয়ের জন্য আসা হয়নি। তবে কেউ যদি চায়, তাহলে প্ল্যান করে ঢাকায় আসব। মাঝে মধ্যেই অনেকে স্কিপ্ট পাঠায়, কিন্তু আমার মনের মতো হয় না।’

মাঝেই এক ভক্ত এতে হাজির। স্যার আমি অনেক দিন থেকেই আপনাকে খুঁজছি। আমি ক্যামেরায় সহকারী হিসেবে কাজ করি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রীকে দেখি। কিন্তু আমি সব সময় আপনাকে খুঁজি। একটি সেলফি তুলতে চাই! সেলফি তুলে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন টনি ডায়েস।

এমন গল্প-আড্ডা যেন শেষ হতেই চায় না। কিন্তু সেদিন রাতেই ফ্লাইট তার। সময় স্বল্পতার কারণে বন্ধুদের আড্ডা ছেড়ে সোমবার রাতেই নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন টনি ডায়েস। বর্তমানে সেখানে অবস্থান করছেন তিনি। ৪৫ মিনিট আলাপকালে দর্শকের জন্য রেখে গেছেন অনেক মধুময় স্মৃতি। তারই চুম্বক অংশবিশেষ এই প্রতিবেদনে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
টনি ডায়েস,অভিনেতা,আড্ডা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close