গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ০৬ জানুয়ারি, ২০২৪

টুপি তৈরিতে প্রান্তিক নারী

পৌষের সকালে রোদে বসে সুই সুতোর নিপুণ হাতে টুপি বুনছেন নারীরা। বাহারি নকশার এসব টুপি তৈরি করার কাজে হাত লাগিয়েছে গ্রামের স্কুল পড়ুয়া বালিকা, বয়স্ক ও মধ্য বয়সি গৃহিণীরা। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের চরভানুডাঙ্গা গ্রামে শনিবার সকালে এমন দৃশ্যই চোখে পড়েছে। শুধু চরভানুডাঙ্গা গ্রামেই নয়, উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম, পাড়া, মহল্লার নারীরা টুপি তৈরির কাজ করছেন বলে জানা গেছে।

চরভানুডাঙ্গার টুপি বুনন করছেন মোছা. নারগিস খাতুন। তিনি বলেন, ‘১০ থেকে ১২ বছর ধরে এ কাজ করি। টুপি তৈরি করে যে মজুরি পাই, তা দিয়ে অভাবের সংসারে কিছুটা কাজে লাগে। এ টাকায় নিজের এবং বাচ্চাদের কাপড় চোপর কেনা, কাচা বাজার করা এবং হাত খরচে ব্যয় করি। একই গ্রামের আকলিমা খাতুন বলেন, আমি বাড়িতে গরু ছাগল পালন করি, গৃহকর্মের কাজ শেষ করে টুপি তৈরির কাজ করি। এর থেকে যা পাই তাতে সংসারের কিছুটা খরচ মিটে যায়। ছেলে মেয়ের বই খাতা কলম কিনতে পারি।

৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী লিজা খাতুন বলেন, লেখা পড়ার পাশাপাশি টুপি তৈরির কাজ শিখেছি। মা-চাচিদের কাছে শিখে এখন নিজেই টুপি তৈরি করছি। এর থেকে পাওয়া আয় আমার লেখাপড়ায় ব্যয় বহন করি। চালিতাডাঙ্গা গ্রামের নারী মরিয়ম খাতুন বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল। আমাদের কোনো জায়গা জমি নাই। এখন টুপি বুননের কাজ করছি। এ দিয়েই এখন সংসার চলে।’

এসব খণ্ডকালীন নারী শ্রমিকরা আরো বলেন, মূলত বগুড়া থেকে পাইকাররা এসে কাজিপুর থেকে টুপিগুলো কিনে নিয়ে যান। তারা সেগুলো দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন। এসব টুপির নামও রয়েছে। চান্দাফুল ৪০ টাকা, ঢেওফুল ৩৫ টাকা, মেহেদীপাতা ১০০ টাকা, করলার চাক ১০০ টাকা, মাকরাসা ৬০ টাকা। প্রতিজনের মাসিক আয় হয় কাজ ভেদে ১ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকার মত। কিন্তু সুতার দাম বেশি হওয়ায় টুপির এ দামে মজুরিতে টান পড়ে। বর্তমানে চিকন সুতার দাম ৬০ টাকা, মোটা সুতার দাম ৭০ টাকা। চিকন সুতার দ্বারা টুপি তৈরি হয় সবচেয়ে বেশি। এ ব্যাপারে উন্নত প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতার আহ্বান জানান তারা।

টুপি ব্যবসায়ী সাত্তার জানায়, কাজিপুরে তৈরি টুপির মান অনেক ভালো। বিভিন্ন জায়গায় এর চাহিদা আছে।

কাজিপুর উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা চিত্রা রানী সাহা জানান, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নারীদের টুপি তৈরির ব্যাপরে খোঁজ-খবর রাখছি। গ্রামীণ প্রান্তিক নারীর জীবনমান উন্নয়নে তাদের প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরকার চায় গ্রামীণ প্রান্তিক নারীর কর্মক্ষমতা বাড়ুক। মেয়েরা টুপি তৈরি করে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close