নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ মে, ২০২৪

এসএমই মেলা

নারী উদ্যোক্তাদের জয়জয়কার

৬০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী নারী উদ্যোক্তা * পোশাক খাতের ৭৫ প্রতিষ্ঠান * পাটজাত পণ্যের ৪২ প্রতিষ্ঠান * চামড়াজাত পণ্যের ৩২ প্রতিষ্ঠান * প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) গত রবিবার থেকে শুরু হয়েছে ৭ দিনব্যাপী ১১তম জাতীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) মেলা। এবারের মেলায় তিন শতাধিক উদ্যোক্তা অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী নারী উদ্যোক্তা। গত বুধবার সরকারি ছুটি থাকায় বেশ জমে ওঠে মেলা। স্টলগুলোয় ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।

মেলা ঘুরে দেখা গেছে, এ মেলা যেন নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য বিপণনের জন্য সেরা জায়গা হয়ে উঠেছে। মেলায় যেমন অধিকাংশ নারী বিক্রেতা, তেমনি নারী ক্রেতাদেরও সংখ্যা বেশি। মেলায় কথা হয় অংশগ্রহণকারী বেশকিছু নারী উদ্যোক্তার সঙ্গে। তারা বলেন, মেলায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় পণ্য দেশি পোশাক ও গৃহস্থালি পণ্য। দেশি পণ্যের এমন সমাহার আর কোনো মেলায় থাকে না। এতে নারীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। আবার যারা আসছেন, তারা কিছু না কিছু পণ্য কিনছেনই। এছাড়া হাতে তৈরি পাটজাত পণ্য, হস্ত ও কারুশিল্প, জুয়েলারি, প্লাস্টিক পণ্যেল কাটতি বেশি মেলায়। এছাড়া চামড়াজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, খাদ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স পণ্যসহ ফার্নিচার সেক্টরের পণ্য এখানে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে।

মেলায় ধানমন্ডি থেকে আসা আফরোজা বেগম শতরঞ্জি, শাড়ি ও ঘর সাজানো পাটের কিছু সামগ্রী কিনেছেন। তিনি বলেন, নিজেও টুকটাক কিছু পণ্য অনলাইনে বিক্রি করি। সেজন্য এখানে বিভিন্ন উদ্যোক্তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলছি। অন্য কোথাও একসঙ্গে এত উদ্যোক্তা পাওয়া যায় না। নারী উদ্যোক্তা ফোরাম প্রায় ২ হাজার নারী উদ্যোক্তা নিয়ে কাজ করা একটি প্ল্যাটফরম। মেলায় তাদের স্টলে দেখা গেছে, বাহারি পোশাক থেকে শুরু করে ঘর সাজানো বিভিন্ন পণ্য। যেগুলো ওইসব উদ্যোক্তা ঘরে বসে তৈরি করেছেন।

নারী উদ্যোক্তা ফোরামের সভাপতি রাফিয়া আক্তার বলেন, মেলায় আমাদের পণ্যর চাহিদা খুব ভালো। এসব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার পণ্য যেন রপ্তানি করতে পারি, সেজন্য মেলায় বিদেশি ক্রেতা খুঁজছি। সেদিকে সরকারকেও নজর দিতে হবে। এমন আরো বিভিন্ন প্রদর্শনীতে নারীদের পণ্য প্রদর্শনে রাখতে হবে। মেলায় ২০১১ সাল থেকে স্বপ্না রানী সেন অংশ নিচ্ছেন রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শতরঞ্জি নিয়ে। তার প্রতিষ্ঠান রংপুর ক্রাফর্ট। তিনি বলেন, এ আয়োজন নারী উদ্যোক্তাদের সবচেয়ে বড় মিলনমেলা। একে অন্যের আইডিয়া ও পণ্য যাচাই করা যায়। ক্রয়-বিক্রেয়ের ক্ষেত্রে একটি বড় পরিসর তৈরি হয়।

পাটের বহুমুখী পণ্য তৈরির প্রতিষ্ঠান তুলিকা মেলায় অংশ নিয়েছে। এ স্টলে রয়েছে পাটের তৈরি ব্যাগ, শপিং ব্যাগ, ওয়াই ব্যাগ, গ্রোসারি ব্যাগ, হ্যান্ডিক্রাফট, হোম ডেকোরেশনের সামগ্রী। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ইশরাত জাহান বলেন, যাদের পণ্যের গুণগতমান ভালো এবং আকর্ষণীয়, তারা খুব সহজেই সাধারণ ক্রেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন এ মেলার মাধ্যমে। তবে তিনি এ-ও বলেন, দেশের মানুষের কাছে প্রচার এবং প্রসারের পাশাপাশি বিদেশি ক্রেতাদের আরো কীভাবে অংশগ্রহণ বাড়ানো যায়, সেজন্য কাজ করতে হবে।

মেলায় অনেক ঘরে তৈরি খাবারের স্টলও রয়েছে। সেগুলোয় হরেক রকমের পিঠাসহ মুখরোচক নানা খাবার বিক্রি হচ্ছে। রয়েছে বাচ্চাদের শিক্ষামূলক বইসহ খেলনাও। অন্যদিন মেলায় দর্শনাথী ও ক্রেতা কম হলেও বুধবার বেশ জমে ওঠে। আগামী শুক্র-শনি ছুটির দিনে মেলায় প্রচুর ক্রেতা আসবে বলে আশা উদ্যোক্তাদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ দিনব্যাপী এই এসএমই মেলার উদ্বোধন করেছেন। এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এ মেলা চলবে ২৫ মে পর্যন্ত। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকছে।

আয়োজক প্রতিষ্ঠান এসএমই ফাইন্ডেশন জানায়, এবারের মেলায় পোশাক খাতের সবচেয়ে বেশি, ৭৫টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। পাশাপাশি পাটজাত পণ্যের ৪২টি প্রতিষ্ঠান, হস্তশিল্পের ৩৮টি প্রতিষ্ঠান, চামড়াজাত পণ্যের ৩২টি প্রতিষ্ঠান এবং প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের ২৭টি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য প্রদর্শন করছে। একইসঙ্গে ২৩টি হালকা প্রকৌশল পণ্যের, ১৪টি খাদ্যপণ্যের, ১৩টি তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক (আইটি) পরিষেবা, ৫টি ভেষজ শিল্পপণ্যের ও ৫টি প্রতিষ্ঠান গহনা পণ্যের প্রতিষ্ঠান মেলায় পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানের ১২টি এসএমই ক্লাস্টারের উদ্যোক্তারা মেলায় অংশ নিয়েছে।

অন্যান্য খাতের মধ্যে প্লাস্টিক পণ্যের ৪টি, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস খাতের ৩টি, আসবাব খাতের ৩টি ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ১৯টি স্টল থাকবে মেলায়। এছাড়া ৩০টি ব্যাংক, ১৫টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ক্লাব ও প্রায় ৫০টি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশগ্রহণকারীদের সেবা দিচ্ছে। অন্যদিকে এসএমই ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে ঢাকা ও চট্টগ্রামের এসএমই বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টারগুলো তাদের কার্যক্রম প্রদর্শন করছে এ মেলায়। এছাড়া উইন্ডি টাউন হলে সহজ অর্থায়ন, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন, প্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি ও ক্লাস্টার উন্নয়ন বিষয়ে ৬টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close