ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

একই মাঠে বিদেশিরা ফিট বাংলাদেশিরা আনফিট!

চলতি বিপিএলে একই মাঠে দুই চিত্র দেখা যাচ্ছে। যেখানে বিদেশি ক্রিকেটাররা হরহামেশাই রান তুলে যাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা গড় রান তুলতে কাবি খাচ্ছে। দোষ কার? ‘কী জাত পিচ বানায়!’, সিলেট স্টেডিয়ামে খেলা শেষে বিরক্তির সুরে বলে উঠলেন একজন ভক্ত। রানের খেলায় রানের গতি কেমন- টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয়বস্তু এটিই। গত মঙ্গলবার দিনের ম্যাচে ১৬৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমেছিল কুমিল্লা। সেখানে রংপুরের বিপক্ষে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন খেলেছিলেন ৫৫ বলে ৬৩ রানের একটা ইনিংস। স্ট্রাইক রেট ১১৪.৫৪। না, সংবাদ সম্মেলনে এসে তাকে একটি প্রশ্নও শুনতে হয়নি এ নিয়ে। ভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য তিনি নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন এ প্রসঙ্গে।

বললেন সাধারণত স্ট্রাইক রেট নিয়ে ক্রিকেটারদের নিজের পক্ষেই কথা বলতে শোনা যায়। সেটা এদেশে কেন, ভিনদেশিদের বেলায়ও। বাবর আজম কিংবা লোকেশ রাহুল তাদের ধীরগতির ব্যাটিংয়ের সাফাই গেয়েছেন অনেকবারই। দলের চাহিদার কথা শোনা গেছে তাদের মুখে। আর এখানে কিনা অঙ্কন বললেন ভিন্ন কথা। তিনি নিজেই যেখানে বললেন, দলের পরিকল্পনা ছিল ১৫ ওভার পর্যন্ত একজনের একপাশে খেলে যাওয়া। তিনি সে দায়িত্ব পালন করে আউট হয়েছেন ১৭তম ওভারে, তবুও টি-টোয়েন্টির চাহিদা মেটাতে না পারাটা অস্বীকার করেননি এ তরুণ ব্যাটার। ‘আমি ফিল করি যে আমার ইনিংসে আরো কিছু শট খেলতে পারতাম। একটু কম ডট হলেও ভালো হতো।’- অঙ্কনেরই মুখের কথা। আরেক প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ‘আমার ইনিংসে যদি আরো ১০ রান বেশি হতো, তাহলে আমরা সহজে জিততে পারতাম।’

আচ্ছা, ১০টা রান যোগ করে দেখি তো। ৫৫ বলে ৭৩ হয়ে যায়, স্ট্রাইক রেট তখন ১৩২.৭২। এবার অঙ্কনের বাইরে গিয়ে একটু বাকিদের দিকে তাকানো যাক। কেন বিপিএলে দ্রুতগতিতে ব্যাট করতে পারেন না ব্যাটাররা? ১৩৫, এর চেয়ে ভালো স্ট্রাইক রেটে খেলতে পেরেছেন কতজন? চলতি বিপিএলে দেখা যাচ্ছে কমপক্ষে ৫০ রান করা ব্যাটার আছেন ৩৪ জন। তার মধ্যে ১৩৫ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে খেলা ব্যাটারের সংখ্যা ১২। এর মধ্যে বাংলাদেশি তিনজনের নাম খুঁজে পাওয়া গেল। কমপক্ষে ৫০ রান করা ১৯ বাংলাদেশি ব্যাটারের মাঝে শুধু মেহেদী মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও জাকের আলী অনিকই এ স্ট্রাইক রেটে খেলতে পেরেছেন। যেখানে ৫০ রানের বেশি করা ১৫ বিদেশি ব্যাটারের মধ্যে ৯ জনই তা করতে পেরেছেন। কী! পিচই কী তাহলে মূল দোষী? যেখানে বিদেশি ব্যাটাররা ঠিকই দ্রুত রান তুলতে সক্ষম হচ্ছেন, সেখানে বাংলাদেশিরা না পারলে তাতে পিচকেই কেবল কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেওয়া, তা আসলে কতটা যুক্তিযুক্ত? ত্রিশের বেশি গড় ও ১৩৫ এর বেশি স্ট্রাইক রেট আছে মোত আটজনের, আর বাংলাদেশের মাত্র দুজনের; মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মেহেদী মিরাজ। একই পিচে বাংলাদেশির চোখের সামনেই বিদেশিরা বেশি স্ট্রাইক রেটে খেলার সক্ষমতা দেখিয়ে যাচ্ছেন। তাহলে স্ট্রাইক রেটের এ ঘাটতি কেন, আরেকটা পরিসংখ্যানে তাকালে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। বাউন্ডারির বেলায় বাংলাদেশিরা যে বেশ পিছিয়েই। প্রত্যেক বাউন্ডারিতে পাঁচ বলের কম নিয়েছেন, এমন ব্যাটার পাওয়া যায় আটজন। তাদের মধ্যে মিরাজ আর রিয়াদ বাদে কোনো বাংলাদেশি নেই। ছক্কা হাঁকানোর ক্ষেত্রেও বিদেশিরাই এগিয়ে। ৯ বিদেশি প্রত্যেক ছয়ে বল খরচ করেছেন ১৫টির কম, আর বাংলাদেশি পাঁচজন- মিরাজ-রিয়াদের সঙ্গে জাকের, নুরুল ও নাঈম শেখ। প্রত্যেক চারে বল লেগেছে ১০টির কম- এ সীমায় অবশ্য বাংলাদেশিদেরই আনাগোনা বেশি। ৯ জন দেশির বিপরীতে আছেন ৭ বিদেশি। ছক্কা মারায় তাহলে বাংলাদেশিদের জানাশোনা ঘাটতিটাই ফুটে উঠল। এ পর্যন্ত চলতি আসরের ছক্কা মারার তালিকায় প্রথম চারটা নাম তাই অনুমিতভাবেই বিদেশিদের।

স্ট্রাইক রেটে আবার ফিরি। এবারের আসরের হিসাব তো খুব একটা বড় না। পুরো বিপিএলের দিকেই নজর ঘুরানো যাক। পিচ স্লো, লো, টার্নিং- ব্যাটিংয়ের জন্য ভীষণ চ্যালেঞ্জিং বলে দ্রুত রান করা যায় না। পরিসংখ্যান অবশ্য উল্টো দিকেও ইশারা দেয়। বিপিএলের ইতিহাসে ২৮ জন ব্যাটার এক হাজারের বেশি রান করেছেন। তাদের মধ্যে ১৩৫-এর অধিক স্ট্রাইক রেটে করেছেন বাংলাদেশের শুধু সাকিব আল হাসান। এক হাজারের বেশি রান করা ৯ বিদেশির মধ্যে চারজন তা করেছেন ১৩৫-এর ওপরে স্ট্রাইক রেটে। আর বাংলাদেশি ১৯ জনের মধ্যে সাকিব বাদে আর কেউই তা করতে পারেননি।

ছক্কা মারায় পিছিয়ে থাকাটা আবারও চোখে পড়ে এখানে। প্রতি বাউন্ডারিতে লেগেছে পাঁচের কম বল- এক হাজার রান করা কোনো বাংলাদেশি নেই। শুধু ক্রিস গেইল ও ইভিন লুইস। প্রতি ছক্কায় লেগেছে পনেরোর কম বল নেই কোনো বাংলাদেশি। এখানে তিন বিদেশি। গেইল ও লুইসের সঙ্গে থিসারা পেরেরা। প্রতি চারে দশ বলের কম দরকার পড়েছে এ তালিকায় অবশ্য ৭ বিদেশির সঙ্গে আছেন ১২ বাংলাদেশি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close