নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ মার্চ, ২০২৪

পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের হঠাৎ না শঙ্কা চালেও

অনির্দিষ্টকালের জন্য পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের দপ্তর (ডিজিএফটি) থেকে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। এদিকে অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ৩০টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৮৩ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেয় বাংলাদেশ সরকার। তবে ভারত থেকে চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ হওয়ায় আমদানি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বেনাপোলের ব্যবসায়ীরা।

দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য তদারক করে ডিজিএফটি। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নেওয়া এমন পদক্ষেপ বিদেশি বাজারে পেঁয়াজের উচ্চমূল্যকে আরো বাড়িয়ে তুলবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে ভারতের পেঁয়াজ এবং দেশের বাজারে নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় খুচরা বাজারে এখন পেঁয়াজের দাম অনেকটাই কমেছে। বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে।

ভারতীয় ব্যবসায়ীরা আশা করেছিলেন যে, শিগগিরই রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে সরকার। কারণ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আসার পর থেকে স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম অর্ধেকেরও বেশি নেমে গেছে। এছাড়া চলতি মৌসুমের ফসল বাজারে আসা শুরু করেছে। তবে এ বিষয়ে কর্ণপাত করেনি সরকার। শুক্রবার বিকেলে জারি করা এক আদেশে বলা হয়েছে, ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পেঁয়াজের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।’

বিশ্বের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ রপ্তারিকারক দেশ ভারত। ডিসেম্বরে পেঁয়াজের রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটি। সেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ৩১ মার্চ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই নতুন করে নিষেধাজ্ঞার বার্তা দিল দেশটি। তবে চলমান নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই বাংলাদেশে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেশটির কর্তৃপক্ষ।

রয়টার্স জানিয়েছে, ভারতের এই নিষেধাজ্ঞা শিগগিরই তুলে নেওয়া হবে বলে আশা করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর থেকেই ভারতের স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। এছাড়া চলতি মৌসুমের ফসলের নতুন সরবরাহও শুরু হয়েছে।

এদিকে, সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ উৎপাদনকারী রাজ্য মহারাষ্ট্রের কিছু পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের ব্যাপক দরপতন হয়েছে। ডিসেম্বরে প্রতি ১০০ কেজি পেঁয়াজের মূল্য সাড়ে চার হাজার রুপি ছিল। তা কমে এখন ১ হাজার ২০০ রুপিতে নেমেছে।

২০২৩ সালের ৩১ মার্চ অর্থবছরে ভারত রেকর্ড ২৫ লাখ টন পেঁয়াজ রপ্তানি করেছে। গত মৌসুমে উৎপাদন কম হওয়ায় গত কয়েকমাস ধরেই পেঁয়াজের দামের ঝাঁজ দেখে আসছে বাংলাদেশের ভোক্তারা। আর ভারত রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দাম বাংলাদেশে দাম আরো বাড়ে। এরই মধ্যে রোজার মাস এগিয়ে আসতে থাকায় দাম নাগালে রাখতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সে দেশের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়।

চাল নিয়েও শঙ্কা : খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেশের ৩০ ব্যবসায়ীকে চাল আমদানির অনুমতি দেয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান হোছাইনি স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ৮৩ হাজার টনের মধ্যে ৪৯ হাজার টন সিদ্ধ চাল ও ৩৪ হাজার টন আতপ চাল রয়েছে।

চাল আমদানির শর্তে বলা হয়, চালে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ ভাঙা দানা থাকতে পারবে। অনুমোদিত আমদানিকারকরা বরাদ্দ অনুযায়ী আগামী ২৫ এপ্রিলের মধ্যে পুরো চাল বাংলাদেশে বাজারজাত করবেন। আমদানি করা চালের পরিমাণ, গুদামজাত ও বাজারজাত করার তথ্য সংশ্লিষ্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে জানাতে হবে। বরাদ্দের অতিরিক্ত আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) ইস্যু/জারি করা যাবে না। আমদানি করা চাল স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান নামে ফের প্যাকেটজাত করা যাবে না। আমদানি করা বস্তায় চাল বিক্রি করতে হবে বলেও শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে।

সম্প্রতি দেশের সর্বত্র চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজার নিয়ন্ত্রণে বেসরকারিভাবে প্রথম ধাপে এই চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এদিকে ২০২২ সালের ২০ জুলাই থেকে (অ-বাসমতি) সিদ্ধ ও আতপ চাল রপ্তানি বন্ধ রেখেছে ভারত। পরের মাসে আধা সিদ্ধ চালে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে এবং সেপ্টেম্বরে বাসমতি চালের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য টনপ্রতি ১ হাজার ২০০ ডলার বা ৯৯ হাজার রুপিতে বেঁধে দেয়।

বছরে দেশে চালের চাহিদা ২ কোটি ৫৮ লাখ টনের মতো। চাল উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় বাংলাদেশ। চাল উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ চাল আমদানিতেও রয়েছে তৃতীয় স্থানে। দেশে চাহিদার তুলনায় চাল উৎপাদন বেশি হলেও ভ্যবিষৎ মজুদ আর প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন মোকাবিলায় চাল আমদানি করে মজুদ করতে হয়, যার বড় একটি অংশ আসে ভারত থেকে। তবে ভারত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে দেশের বাজারে প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বেনাপোলের ব্যবসায়ীরা।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, বাংলাদেশ সরকার চাল আমদানির অনুমতি দিলেও ভারতে চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা ও বাড়তি শুল্ক এখনো বহাল থাকায় চাল আমদানি সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে দেশের বাজারে একটা প্রভাব পড়বে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close