গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৯ এপ্রিল, ২০২৪

তৃণমূলে ভোট ঘিরে বিভক্তি

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ নিয়ে প্রচারের শুরুতেই প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অন্য প্রার্থীরা। ফলে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বাড়ছে ক্ষোভণ্ডহতাশা। এছাড়া দলীয় একাধিক প্রার্থী থাকায় তৃণমূলে ভোট ঘিরে বিভক্তি চরমে পৌঁছেছে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে দলীয় প্রধান ও নির্বাচন কমিশনে (ইসি) অভিযোগ আসা শুরু হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী-এমপির পরিবারের সদস্যরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। কিন্তু সেই নির্দেশ মানেননি অনেকেই। তারা নির্বাচনী প্রচার শুরুর ৫ দিন অতিবাহিত হলেও পরিবারের সদস্যদের নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখেনি। উল্টো নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মাঠে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি দলের অনেক সংসদ সদস্য নিজ সন্তানকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করেছেন। কেউ করেছেন নিজ ভাইকে। আবার কোনো এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তার অনুসারী ও নিজ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চাকরিজীবীকে প্রার্থী করে সংসদীয় আসনে তার বলয় ধরে রাখতে মরিয়া। এ নিয়ে তৃণমূলে বিভাজন এখন স্পষ্ট। মাদারীপুরের একজন প্রভাবশালী এমপি ও সাবেক মন্ত্রী তার ছেলেকে উপজেলায় প্রার্থী করায় দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছেন। এ নিয়েও নানা সমালোচনার ঝড় উঠে।

গতকাল রবিবার প্রথম অভিযোগ জমা পড়েছে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. তালেব উদ্দিনের। তিনি দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী। আর দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী এস এ এম জাকারিয়া আলম। তার অভিযোগ স্থানীয় এমপি আলী আজগর টগরের সহোদর ভাই উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনী পরিবেশ চরমভাবে ভেঙে পড়েছে। ফলে এখন দলীয় প্রধান ও ইসির সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে ওই প্রার্থীর আশঙ্কা। দলীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়া চিঠির কপি এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। আর সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী বদিউজ্জামান ফকির স্থানীয় এমপির প্রভাবে অনেকটা নিরুপায় হয়ে দলীয় প্রধান ও ইসির হস্তক্ষেপ চেয়ে অভিযোগ প্রস্তুত করছেন। কারণ স্থানীয় এমপি আবদুল মমিন মণ্ডল তার প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তাকে প্রার্থী করে প্রদর্শন করছেন ক্ষমতার অপব্যবহার। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা।

চুয়াডাঙ্গার সংসদ সদস্য আলী আজগর টগর তার ভাইকে প্রার্থী করে নির্বাচনে চরম প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এস এ এম জাকারিয়া আলম এবার দামুড়হুদা উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী। দলীয় এমপির ভাই প্রার্থী হওয়ায় উদ্বিগ্ন এই তিনি। গত ২০, ২৩ ও সর্বশেষ গতকাল পরপর তিনটি চিঠি পাঠিয়েছেন দলীয় সভাপতির হস্তক্ষেপ চেয়ে। দল এই প্রার্থীকে আশস্ত করে বলেছে ইসিকে তারা অবহিত করবেন নির্বাচন ফ্রি-ফেরার করার জন্য। অভিযোগে ওই প্রার্থী লিখেছেন, আসন্ন দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের এমপি আলী আজগর টগর তার সহোদর আলী মুনছুর বাবু দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে উপজেলায় ত্রাস সৃষ্টি করছেন। ভোটারদের আগামী ৮ মে ভোটকেন্দ্রে যেতে বারণ করছে। দলীয় নেতাকর্মীদের এমপির বাইরে গেলে অসুবিধা আছে বলে হুমকি দিচ্ছে। কেউ পোলিং এজেন্ট হলে তাকে খুন জখমের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে একজন প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও এবং দলের দুর্দিনে কর্মী হিসেবে খুবই অসহায়ত্ব বোধ করছি ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সুষ্ঠু ভোটের জন্য আপনার (দলীয় সভাপতি) কাছে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করছি।

এদিকে, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা পরিষদে স্থানীয় এমপি আবদুল মমিন মণ্ডল নিজ পরিবারের সদস্যকে চেয়ারম্যান না করলেও তার প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তাকে প্রার্থী করেছেন। তার প্রচারে নামিয়ে দিয়েছেন আপন ভাই ও পিএসকে। এমপির দাপটে মাঠে নেমেই প্রভাব বিস্তার শুরু করেছে বলে অভিযোগ জানানোর জন্য ইসিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান ফকির। প্রতিদিনই এই উপজেলায় সাধারণ ভোটারদের এমপির পছন্দের বাইরে না যেতে প্রকাশ্যে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন এই প্রার্থী।

অন্যদিকে, সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম (আনারস) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি স্থানীয় এমপি অধ্যক্ষ আবদুর রশিদের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। তাই স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবদুর রশিদের ছোট ভাই সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে রফিকুল ইসলামের পক্ষেই কাজ করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

এ উপজেলার স্বতন্ত্র প্রার্থী ও রফিকুল ইসলামের বিপক্ষে চেয়ারম্যান পদে (দোয়াত কলম) প্রতীক নিয়ে তালেব উদ্দিন মাঠে রয়েছেন। রফিকের পক্ষে এমপির পুরো বলয় নেমে যাওয়া তিনি এখন কোণঠাসা। তিনি গতকাল রবিবার ইসিতে এসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সচিব বরাবর আবেদন করেছেন। আবেদনে জানিয়েছেন, নির্বাচনে তার পক্ষে কেন্দ্রে কেউ দাযিত্ব পালন যাতে না করেন সেজন্য দুজন এজেন্টকে হুমকি দিয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্ট হয়ে কেন্দ্রে গেলে তাদের হাত ভেঙে নদীতে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। চরম আচরণবিধি লঙ্ঘন হওয়ায় ইসির দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তালেব উদ্দিন।

ইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, কমিশন এসব বিষয়ে নজর রাখছে। পরিস্থিতি অনুকূলে রাখতে অনিয়ম পেলে এমপি হলেও পার পাবেন না। কারণ উপজেলা নির্বাচন দলীয়ভাবে হচ্ছে না। আচরণবিধির অভিযোগে কোনো আবেদন এলে সেটিও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করবে ইসি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close