নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৯ এপ্রিল, ২০২৪

বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে অনিয়ম

মিল্টনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার অপেক্ষায় পুলিশ

চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে এখনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ। দাফনের আগে মরদেহে কাটাছেঁড়া দেখে স্থানীয়দের দাবি, এর আগে শরীরের অঙ্গপ্রতঙ্গ তুলে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, প্রায় ৮০০ জনকে দাফনের কোনো তথ্য-প্রমাণ দেখাতে পারেননি মিল্টন, নিজেই স্বীকার করেছেন এক্ষেত্রে নিয়মনীতি না মানার।

অনুদানের টাকায় ঢাকার মিরপুরে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার নামের একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র চালান মিলটন সমাদ্দার। এখানে আশ্রিতদের দাফনের সময় শরীরে কাটাছেঁড়ার চিহ্ন দেখার দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৯৫০ আশ্রিতকে দাফনের দাবি করছেন মিল্টন। তবে মাত্র ১৫০ জনের ছবি বা তথ্য প্রমাণ আছে তার কছে। বাকি ৮০০ নিয়ে নেই কোনো তথ্য। নানা সময়ে একই নামে একাধিক ব্যক্তিকে দাফনের স্বীকারোক্তি দিচ্ছেন তিনি নিজেই।

চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দার বলেন, ‘একই কবরস্থানে যেমন ধরেন আজকে আমার তিনজন বাবা মারা গেছেন বা দুজন মা মারা গেছেন তখন, কারো একজনের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে স্লিপ করে আনা যায়। কিন্তু যাদের কিছুই নাই, তাদের বারবার নিজেদের দাদি-নানি পরিচয় দিয়ে আমাদের স্টাফরা মাটি দিতে চান না। স্বীকার করছি আমি এগুলো করেছি।’

দাতব্য প্রতিষ্ঠান বলে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার থেকে নিজে কোনো টাকা নেন না দাবি করলেও অডিট রিপোর্ট বলছে, বছরে তার বেতন ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। কর্মচারীদের বেতন এক কোটি। পার্কিং ১ লাখ ২০ হাজার, গাড়ির পেছনে খরচ সোয়া ৮ লাখ আর রক্ষণাবেক্ষণে যাচ্ছে সাড়ে ১৫ লাখ টাকা। এতে এই বিপুল ব্যয়ের বিপরীতে তার আয়ের উৎস নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।

২০২০ সাল পর্যন্ত মিল্টনের পুনর্বাসন কেন্দ্রের মরদেহ গোসল করানো হয়েছে পাশের বায়তুস সালাম মসজিদে। তবে মরদেহে কাটাছেঁড়া দাগ দেখে সন্দেহ হলে এর ভিডিও করার কথা বলেন স্থানীয়রা। এরপর আর সেখানে মরদেহ পাঠাননি মিল্টন।

স্থানীয় একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দোতলায় মেস আছে, সেখান থেকে তুমি নামবা। নেমে এগুলোর ভিডিও করবা আর ছবি তুলবা। যেই এ কথা বলা হয়েছে, এরপর থেকে আর কোনো লাশ পাঠায়নি। ওরা বুঝতে পেরেছে যে লোকজন দেখে ফেলেছে এমন কিছু। এরপর থেকে গোসল করানো বাদ দিয়েছে।’

একই দাবির মুখে অনুদান দেওয়া লন্ডনপ্রবাসী এক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নেওয়া বন্ধ করেন মিল্টন। ওই ব্যক্তি বলেন, ‘বেশ কিছুদিন পর দুদিন একদিন পরপর লাশ আসত। তখন বলল কাকা, এখন তো আমার টাকা-পয়সা হয়েছে আমাকে আর দেওয়া লাগবে না, আমি দিতে পারব।’

এত কিছুর পরও সক্রিয় নয় পুলিশ, তদন্ত শুরু করতে তারা রয়েছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আসার অপেক্ষায়। মিরপুর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বলেছি যে আপনি একটু খোঁজখবর নিয়ে দেখেন। যাচাই-বাছাই করে দেখেন, এর মধ্যে ফৌজদারি কোনো বিষয় আছে কিনা। যদি এমন কোনো বিষয় থাকে তাহলে আমরা সেটা আইনের আওতায় আনব।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close