বদরুল আলম মজুমদার

  ২৯ এপ্রিল, ২০২৪

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার

পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনে কমছে নদীদূষণ, বাড়ছে জীববৈচিত্র্য

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই ডিএসটিপির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগারে দিনে ৫০০ মিলিয়ন লিটার পয়ঃবর্জ্য শোধন করা যাচ্ছে। ফলে শোধনাগার সংলগ্ন গজারিয়া খাল এবং পার্শ্ববর্তী বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানিদূষণ কমতে শুরু করেছে। পানিতে দুর্গন্ধ ও ক্ষতিকর উপাদান কমতে থাকায় ফিরছে পরিবেশের ভারসাম্য, বাড়ছে জীববৈচিত্র্য।

ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধানে হাইড্রো চায়না করপোরেশন দাশেরকান্দি স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ডিএসিটপি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই ডিএসটিপির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। চীনা টেকনিক্যাল টিমের সহযোগিতায় ঢাকা ওয়াসা বর্তমানে এসটিপি অপারেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

গতকাল রবিবার দাশেরকান্দি স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি সংবাদকর্মীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল। এ সময় চাইনিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ড ঝাং শিয়ালং, ঢাকা ওয়াসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মস্তাফিজুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও ডিএসটিপির সাবেক প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. মহসিন আলী মিয়া, উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. মোমতাজুর রহমান, প্রকল্প ব্যবস্থাপক রেন রউকিসহ ঢাকা ওয়াসা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাইড্রো চায়না করপোরেশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা ওয়াসার মাস্টারপ্ল্যান অনুয়ায়ী নারায়ণগঞ্জের পাগলা, ঢাকার রায়েরবাজার, মিরপুর ও উত্তরায় আরো চারটি আধুনিক পয়ঃশোধনাগার ২০৩০ সালের মধ্যে নির্মাণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এগুলো নির্মিত হলে নদীদূষণ অনেক কমে যাবে। ফলে নদীর পানি পরিশোধন করে আরো বেশি বিশুদ্ধ পানি সরবারহ করা সম্ভব হবে।

ঢাকা ওয়াসা কর্মকর্তারা জানান, দাশেরকান্দি এসটিপিতে গুলশান, বনানী, বারিধারা, বসুন্ধরা, মহাখালী, ডিওএইচএস, তেজগাঁও, নিকেতন, বাড্ডা, রমনা, ইস্কাটন, নয়াটোলা, মগবাজার, ওয়্যারলেস, মৌচাক, আউটার সার্কুলার রোড, মহানগর হাউজিং, হাতিরঝিল, কলাবাগান ও ধানমন্ডি (আংশিক) এলাকা থেকে আসা পয়ঃপ্রক্রিয়াকরণ করে পরিশোধিত পানি সংলগ্ন গজারিয়া খালের মাধ্যমে বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।

উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. মোমতাজুর রহমান বলেন, পয়ঃপরিশোধনের ফলে নদীতে দূষণ কমতে শুরু করেছে। ফলে বিভিন্নভাবে আমরা উপকৃত হচ্ছি। যেমন সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার ফেজ-১ ও ফেজ-২ এর ইনটেক পয়েন্টে শীতলক্ষ্যা নদীর পানির দূষণ কমেছে। পানি পরিশোধনে ৬০% ক্যামিকেল খরচ কম হচ্ছে। গজারিয়া খাল, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীরও দুর্গন্ধ এখন অনেক কমেছে। ডিএসটিপির সাবেক প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. মহসিন আলী মিয়া বলেন, এসব খাল-নদীতে এখন আমরা মাছ ধরতে দেখি। যা আগে দেখা যায়নি। এর কারণ হলো আমরা পরীক্ষা করে দেখেছে পানিতে অ্যামোনিয়ার মাত্রা অনেক কমেছে। অ্যামোনিয়া হলো এমন একটি ক্ষতিকারক উপাদান যা জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে।

কর্মকর্তারা জানান, পয়ঃশোধনের ফলে উৎপন্ন কর্দমাক্ত ময়লা পুড়িয়ে প্রতিদিনি প্রায় ৪০ টন ছাই উৎপাদিত হচ্ছে, যা সিমেন্ট কারখানার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ছাই সার হিসেবে ব্যববহার করা যায় কি না তাও পরীক্ষা করা হচ্ছে। ঢাকা শহরে প্রতিদিন যে ২ হাজার মিলিয়ন লিটার বর্জ্য উৎপন্ন হয়, তার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শোধন করতে পারছে দাশেরকান্দি প্ল্যান্ট।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ৩ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬২ একর জমির ওপর দাশেরকান্দি এসটিপি বাস্তবায়ন করা হয়। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে এসেছে ১ হাজার ১০৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ঢাকা ওয়াসা থেকে এসেছে ১০ কোটি টাকা। চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে এসেছে ২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা।

২০১৮ সালের ১ জুলাই চীনের অর্থায়নে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের রূপরেখা অনুযায়ী, রামপুরা সেতুর পশ্চিম পাশে একটি বর্জ্য উত্তোলন স্টেশন, রামপুরা থেকে আফতাবনগর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার ট্রাংক স্যুয়ারেজ লাইন ও দাশেরকান্দি প্ল্যান্ট এবং দাশেরকান্দিতে প্রধান শোধনাগার নির্মাণ করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close