গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৩ মার্চ, ২০২৪

লালবাগ থানার নির্বাচন অফিস টিকাটুলিতে

রাজধানীর লালবাগ থানা নির্বাচন অফিস কোথায়, তা খুঁজে পেতে রীতিমতো গলদঘর্ম হতে হয় সেবাপ্রত্যাশী নাগরিক ও ভোটারদের। এলাকার জনপ্রতিনিধিরাও সাধারণ মানুষকে বুঝিয়ে বলতে পারেন না, অফিসটি ঠিক কোথায়। বলা যায়, পথ হারিয়েছে লালবাগ থানা নির্বাচন অফিস। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কিছু কর্মকর্তার সুবিধার্থে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ তিনটি থানার নির্বাচন অফিস স্থাপন করা হয়েছে মতিঝিলের অদূরে টিকাটুলির আর কে মিশন রোডের দিগন্ত টাওয়ারে। ভবনটির ষষ্ঠ তলায় এ তিনটি নির্বাচন অফিস হচ্ছে লালবাগ থানা নির্বাচন অফিস, কোতোয়ালি থানা নির্বাচন অফিস ও মতিঝিল থানা নির্বাচন অফিস। কোতোয়ালি ও মতিঝিল নির্বাচন অফিস হিসেবে জায়গাটি তর্কের খাতিয়ে মেনে নেওয়া গেলেও লালবাগ থানার জন্য অফিসটি পুরো বিচ্ছিন্ন ও ভিন্ন এলাকায় পড়েছে। এ নিয়ে জনপ্রতিনিধি ও ভোটাররা সংশ্লিষ্ট থানা নির্বাচন কর্মকর্তা ও ইসির ঊর্ধ্বতনদের কাছে বারবার ভোগান্তির বিষয়টি তুললেও কোনো কাজ হচ্ছে না। তাছাড়া তিনটি এলাকার অফিস একত্রে হওয়ায় এনআইডি ও সংশোধন সংশ্লিষ্ট সেবা নিয়ে একটি অসাধু চক্র রমরমা বাণিজ্য চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে লালবাগ থানা নির্বাচন অফিসের সহকারী উপজেলা কর্মকর্তা মো. আবদুল মোতালেবকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। শুধু ভোটারই নন, জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি ইস্যুতে যেকোনো একজন নাগরিকের নির্বাচনী অফিসের সেবার দরকার হয়ে থাকে। এনআইডির নানা অসংগতি যেমন নাম-ঠিকানা ও জন্মতারিখে ভুল, নাম অন্তর্ভুক্ত ও নাম কর্তনসহ নানা ইস্যুতে নির্বাচন অফিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেজন্যই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) থানা বা উপজেলা নির্বাচন অফিসগুলো সংশ্লিস্ট থানার মধ্যে স্থাপনের নীতি রয়েছে। রাজধানীর প্রায় সব নির্বাচন অফিস আগে ছিল আগারগাঁওয়ে পানির ট্যাঙ্ক মোড়ে। পরবর্তী সময়ে সেবা জনগণের দৌড়গোড়ায় পৌঁছাতে নিজ নিজ থানা এলাকায় অফিস স্থানান্তর করা হয়। তবে লালবাগ নির্বাচন অফিসকে বিচ্ছিন্ন এলাকায় স্থাপন করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে ইসি।

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব ও এনআইডির ডিজি হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকারী অশোক কুমার দেবনাথ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, লালবাগ থানা নির্বাচন অফিসটির অবস্থান কোথায় এবং কেন সেটি সংশ্লিষ্ট এলাকার বাইরে, সেটি আমরা খতিয়ে দেখব। অফিসটি সংশ্লিষ্ট এলাকায় স্থাপনের সুযোগ রয়েছে কি না, তা-ও কমিশন পর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কারণ সবকিছুর আগে সাধারণ মানুষের সেবাকে গুরুত্ব দেবে ইসি। প্রাপ্ত তথ্যমতে, মুগদা, যাত্রাবাড়ী, শাজাহানপুর ও মতিঝিল- এ চারটি এলাকা নিয়ে মতিঝিল থানা নির্বাচন অফিস। যেটি আর কে মিশনের দিগন্ত টাওয়ারে থানা নির্বাচন অফিস হিসেবে স্থাপন হয়েছে। থানাগুলোর আয়তন, অবস্থান ও দূরত্ব বিবেচনায় যৌক্তিক। একইসঙ্গে বংশাল ও কোতোয়ালি দুটি থানা নিয়ে কোতোয়ালি নির্বাচন অফিস; সেটিও ওই টাওয়ারে। যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধার্থে এ অফিসটি নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগ থাকলেও তা খুব বেশি গুরুতর নয়।

তবে প্রশ্ন উঠেছে, কামরঙ্গীরচর, লালবাগ, হাজারীবাগ ও চকবাজার নিয়ে গঠিত বিশাল এলাকার এ অফিসটি কেন টিকাটুলির দিগন্ত টাওয়ারে নেওয়া হয়েছে। দূরত্ব, যোগাযোগব্যবস্থা এবং ভৌগোলিক বিবেচনায় বিচ্ছিন্ন এটি। স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার থেকে সাধারণ সেবাপ্রত্যাশী সবার একটাই দাবি- অফিস স্থানান্তর করে সংশ্লিষ্ট থানার মধ্যে নিয়ে আসা। কিন্তু বছরের পর বছর পার হলেও তাদের দাবিটি শুধু আশ্বাসের মধ্যেই থেকে যাচ্ছে। এতে জনগণের ভোগান্তি বাড়ছে। হাজারীবাগ এলাকার বাসিন্দা পলাশ ও মোহাম্মদ আলী বলেন, লালবাগ থানা নির্বাচন অফিস কোথায়, তা আমরা আজো জানি না। শুনেছি এটি লালবাগের বাইরে। স্থানীয় অনেকের কাছে আপনি নিজেই খোঁজ নিয়ে দেখেন তারাও বলতে পারে কি না। বলতে পারেন, এনআইডি সেবাপ্রত্যাশীরা লালবাগ থানা অফিস খুঁজে পেতেই পথ হারিয়ে ফেলছেন। শুধু সাধারণ সেবাপ্রত্যাশী নন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও ক্লান্ত ও হতাশ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার আসাদুল হক প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমাদের এলাকায় ইসির যিনি আসেন, তাকে অফিস পরিবর্তনের বিষয়ে জানিয়েছি কয়েকবার। একইসঙ্গে জেলা, আঞ্চলিকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যারাই ভোটার হওয়াসহ নানা কারণে আসেন, তাদের কাছেও সমস্যার কথা তুলে ধরি। কিন্তু প্রতিকার হচ্ছে না। তিনি বলেন, কোথায় লালবাগ এলাকা আর কোথায় থানা নির্বাচন অফিস, দুটির মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই। সাধারণ মানুষের ওই অফিসে পৌঁছাতে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা খরচ হয়। কোনোভাবে অফিস খুঁজে পেলেও অফিস স্টাফরা জানান অফিসার আজ অফিসে নেই, পরদিন গেলে জানান অমুক কাজে তিনি ব্যস্ত এবং সপ্তাহের বেশিরভাগ সময় থাকেন বাইরে। এতে আর্থিক খরচের পাশাপাশি সময়ের অপচয় হচ্ছে। দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে বারবার গিয়ে অফিসে না পেলে ভোগান্তির সীমা থাকে না। আর এনআইডি নিয়ে বাণিজ্য তো আছেই; সেটি আরেক অভিযোগ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close