মো. খসরু চৌধুরী এমপি

  ২৩ জানুয়ারি, ২০২৪

মুক্তমত

অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ

বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে বিশ্বের বিস্ময়। বিশ্বে আজ বাংলাদেশের পরিচিতি একটি উন্নয়নশীল এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে। বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত করার ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে তৈরি পোশাকশিল্প। পৃথিবীতে এখন এমন কোনো দেশ নেই যেখানে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা পোশাক পাওয়া যায় না। গার্মেন্ট রপ্তানিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। পোশাকের পাশাপাশি বাংলাদেশের ওষুধ এখন ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার ৮০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। দেশীয় ওষুধ কারখানাগুলো দেশের চাহিদার শতকরা ৯৭ ভাগ ওষুধ জোগান দিচ্ছে। বাংলাদেশের তৈরি ওষুধ জীবন বাঁচাচ্ছে বিশ্বের আনাচে-কানাচের মানুষের। জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশি তরুণ-যুবারাই তৈরি করছেস বিভিন্ন দেশের গর্বের কাঠামো, ঘুরিয়ে দিচ্ছেন তাদের অর্থনীতির চাকা।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবস্থান অগ্রগণ্য। যুদ্ধবিগ্রহের বিশ্বকে হেলমেট মাথায় দিয়ে বুক চিতিয়ে রক্ষা করছেন বাংলাদেশের দুর্বার সেনারা। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে প্রথম। ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন তৃতীয়। ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম। বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনের ৮৬ শতাংশই হয় এ দেশে। মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়। পাট উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। তবে পাট রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশই প্রথম। ছাগল উৎপাদনে অবস্থান চতুর্থ। আর ছাগলের মাংস উৎপাদনে পঞ্চম। আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ষষ্ঠ। চা উৎপাদনে অবস্থান নবমে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে আম উৎপাদনে অষ্টম। কাঁঠাল উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে। পেয়ারা উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে অষ্টম। সার্বিক ফল উৎপাদনে রয়েছে দশম অবস্থানে। গবাদি পশু পালনে দ্বাদশ অবস্থানে রয়েছে।

রেমিট্যান্স গ্রহণকারী দেশের তালিকায়ও বাংলাদেশ আছে শীর্ষ দশে। বর্তমানে প্রায় সোয়া কোটি প্রবাসী বাংলাদেশির প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতে ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ছয় লাখ, যা শতকরা হারে বিশ্বের প্রায় ২৭ শতাংশ। এর বদৌলতে বাংলাদেশ এ খাতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।

যেসব দেশে ঝুঁকি কম এবং সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, সেই সূচকে সবার ওপর বাংলাদেশের অবস্থান। বাংলাদেশের পর রয়েছে কম্বোডিয়া, কলম্বিয়া, মিসর, ফ্রান্স, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া ও ইসরায়েল। আর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব গন্তব্য দেশের সুযোগ সবচেয়ে বেশি, সেই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে কটাক্ষ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এখন মার্কিন মদদপুষ্ট বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ তার সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করেছে নিজস্ব অর্থায়নে। স্বাধীনতার মাত্র ৫৩ বছরে এই পরিবর্তন বাংলাদেশের। পাকিস্তানের চেয়ে এখন প্রায় সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। অনেক ক্ষেত্রে ভারত-চীনের থেকেও। স্বাস্থ্য-শিক্ষার দিক দিয়ে ছাড়িয়ে গেছে ভারত-পাকিস্তানকে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে জিডিপি ও মাথাপিছু জিডিপিতে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। গ্রস সেভিংস জিডিপিতে ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ শীর্ষে। শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ভারত-পাকিস্তানের তুলনায় অনেক উচ্চতায় বাংলাদেশ। জন্মহার নিয়ন্ত্রণে প্রতিবেশীদের গড় আয়ুর ক্ষেত্রেও ভারত-পাকিস্তান দুদেশের তুলনায় এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ।

মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের এই ঢল নামলে সীমান্ত খুলে দেয় বাংলাদেশ। এর আগেও বিভিন্ন সময় কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এই বিশালসংখ্যক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে এক নতুন মানবিক পরিচয় পায় বাংলাদেশ। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বাংলাদেশের মানবিকতার প্রশংসা আসছে এখনো। আজকের বিশ্বে এত বিপুলসংখ্যক আশ্রয়প্রার্থী বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও জায়গা পেত কি না- এ নিয়ে সংশয় আছে সবারই।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এক সংকটকাল অতিক্রম করছে। ২০২০ সালে করোনাভাইরাস দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছিল। সেই বাধা অতিক্রম করে নতুনভাবে পথচলা শুরু করতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেখা দেয় নতুন সংকট। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো মূল্যস্ফীতির ধাক্কা লাগে দেশের অর্থনীতিতেও।

বৈশ্বিক সংকট যখন অভ্যন্তরীণ সংকটের কারণ হয়, তখন সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে। ইউরোপের অনেক দেশই এখনো এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু বাংলাদেশ সংকট কাটিয়ে উঠেছে।

গত ১৫ বছরে দেশ আর্থসামাজিক উন্নয়নের এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হতে পেরেছে। দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বেড়েছে সাক্ষরতার হারও। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় এসেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একের পর এক অভিনন্দন জানাচ্ছেন। অস্বীকার করা যাবে না যে, দেশকে তিনি গত ১৫ বছরের মধ্যে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তার সময়ের উন্নয়ন বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি মালইফলক ও দৃষ্টান্ত। ইতিমধ্যেই নতুন সরকার তার পথচলা শুরু করেছে। সবাই আশা করছে, ২০২৪ সালে যে মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হলো তারা আগেরবারের উন্নয়নমূলক কাজগুলো ধারাবাহিকভাবেই এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে তারা পরিচিত করাবে।

লেখক : সংসদ সদস্য ঢাকা-১৮, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close