নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ জুন, ২০২২

পদ্মা সেতু

ঢাকামুখী মানুষের চাপ কমবে

পদ্মা সেতুর কল্যাণে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে কৃষি উদ্যোগ বৃদ্ধি, শিল্পাঞ্চল তৈরি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনের প্রসার ঘটবে। এ অঞ্চলের মানুষ স্বপ্নের বীজ বুনতে শুরু করেছেন। তৈরি হচ্ছে একাধিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী, খামারি; বড় মাপের বিনিয়োগ করেছেন আগ্রহী পরিবহন ব্যবসায়ীরা। বিনিয়োগ বাড়িয়ে দিয়েছেন জেলার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। ফলে জীবিকার তাগিতে রাজধানীমুখী হবেন না অনেক পেশাজীবী- এমনটাই মনে করেছন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

‘জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিযোজন’ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী উন্নয়ন সংস্থা এনএসএসর নির্বাহী পরিচালক শাহাবুদ্দিন পান্না বলেন, রাজধানী শহরে জীবনযাপন এমনিতেই ব্যয়বহুল। ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাটি, ও বরগুনার মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশেষ করে নদীভাঙন ও মাটির রূপ পরিবর্তনে কৃষি কাজে ব্যর্থ হয়ে বাস্তুহারা হিসেবে কর্মসংস্থানের জন্যই ঢাকার দিকে ছুটছেন। সেখানে তারা উপায় না পেয়ে বাস্তু গড়ে তুলছেন। তবে পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে।

ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাতের মতে, বিশেষ করে যেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশি আছে সেখানে মানুষ বেশি যাবে। এটাই স্বাভাবিক। ফলে চেষ্টা করতে হবে স্থানীয় পর্যায়ে মানুষ যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে পারে, সে ধরনের সুযোগ তৈরি করা।

সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, স্থানীয় পর্যায়ের সুযোগ সৃষ্টির সবচেয়ে বড় সুযোগ এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে। সেটি হচ্ছে যোগাযোগ মাধ্যমের অভূতপূর্ব সুবিধা স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এটি চালু হলে নিরবচ্ছিন্ন এবং দ্রুত যোগাযোগের কারণে প্রয়োজনে মানুষ ঢাকা গেলেও আবার দ্রুত বাড়ি ফিরতে পারবেন। ঢাকায় ভাসমান এবং বাস্তুগড়া মানুষের সংখ্যা কমে যাবে। পাশাপাশি কর্মসংস্থান ও জীবন-জীবিকার স্থানীয় নানা উদ্যোগ এই উপকূলের মানুষকে আর ঢাকামুখী হতে উৎসাহ দেবে না।

বরগুনা জেলা পরিষদ প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণের জেলাগুলোতে কৃষি উদ্যোগ বৃদ্ধি, শিল্পাঞ্চল তৈরি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনের প্রসার ঘটবে। বিনিয়োগ বাড়াতে আরো আগ্রহী হয়ে উঠবেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। তাই জীবিকার তাগিতে রাজধানীমুখী হবেন না অনেক পেশাজীবীরা।

আমতলী সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন জানান, স্বল্প সময়ে যদি কর্মস্থলে যাতায়াত করা যায়, তবে রাজধানীতে নতুন করে বাস্তু-চাপ তো বাড়বেই না বরং এত দিন যারা বাধ্য হয়ে ঢাকায় থেকেছেন তার অনেক অংশই পদ্মার এপাড়ে এসে আবাস গড়বেন। পদ্মা সেতু চালু হলে বরিশাল শহরে বসবাসকারীরা অনায়াসে অফিস টাইমে ঢাকা পৌঁছাতে পারবেন আবার ঢাকা থেকে ফিরবেন। বরিশালের দক্ষিণে সবগুলো নদীর ওপর সেতু নির্মিত হওয়াতে পটুয়াখালী ও বরগুনার মানুষ দেড় ঘণ্টা সময় বেশি ব্যয় করলেই একই সুবিধা পাবেন।

জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবু বলেন, ঢাকার সঙ্গে বরগুনার সড়ক যোগাযোগে এত দিন ২০টির বেশি বাস কোম্পানি যাত্রী সেবা দিয়ে আসছিল। পদ্মা সেতুর কল্যাণে এরই মধ্যে আরো ১৫টি কোম্পানির বাস এ রুটে সংযোজিত হতে যাচ্ছে। মানুষ সকালে ঢাকায় গিয়ে কাজ শেষ করে রাতে বাড়ি এসে ঘুমাতে পারবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close