বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

  ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

ট্রাকে পচছে আলু বাজারে কেজি ৫৫ টাকা

এবার আলুর বাজার চড়া। উৎপাদন মৌসুম শেষ হতে না হতেই এর মধ্যে আলুর দাম কয়েক দফা বেড়েছে। তাতে আলু এবার মোটা চালের দামকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। প্রতি কেজি মোটা চাল (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর আলু এলাকা বা বাজারভেদে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়ও বিক্রি হওয়ার কথা শোনা যায়। এ চড়া মূল্যের সময়ও যশোরের শার্শার বেনাপোল বন্দরে ভারত থেকে আমদানি করা আলু খালাসের আগেই ট্রাকে পচে যাচ্ছে।

রাজধানীর বাজারে ঈদের আগেই আলুর কেজিপ্রতি দাম বেড়ে ৫০ টাকার আশপাশে চলে আসে। ঈদের পরে আরেক দফা দাম বেড়েছে। এখন বড় বাজারগুলোয় প্রতি কেজি আলু ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে বাজারে আলুর দাম চড়া হলেও যশোরের শার্শার বেনাপোল বন্দরে ভারত থেকে আমদানি করা আলু খালাসের আগেই ট্রাকে পচে যাচ্ছে। গত সোমবার রাতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে ১৬ ট্রাকে ৭ হাজার ৪০০ ব্যাগে ৩৭০ টন আলু আমদানি হয়। এই আলু ভারত থেকে লোড করে বন্দরে পৌঁছাতে কয়েকদিন লেগে যায়। এতে প্রচণ্ড গরমে ট্রাকে থাকা আলু পচে যাচ্ছে।

আমদানি করা আলু খালাস করার জন্য কাস্টমসে কাগজপত্র দাখিল করেছেন ট্রান্সমেরিন লজিস্টিক নামে এক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। আলুর আমদানিকারক বাংলাদেশের ইন্টিগ্রেটেড ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ।

বেনাপোলসহ দেশের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে আলু আমদানি বৃদ্ধি পেলেও বাজারে দিন দিন দাম বাড়ছেই। বর্তমানে আলুর দাম কেজিপ্রতি ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হলেও গত বছর এই সময়ে ২২ থেকে ২৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। পণ্যটির আমদানি বাড়লে ও বাজার সিন্ডিকেটের কারণে কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না বলে সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ। এদিকে প্রচণ্ড গরমে ট্রাকে থাকা আলু পচতে শুরু করেছে।

তবে বেনাপোল উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার সরকার বলেছেন, দ্রুত যাতে পণ্য চালানটি খালাস দেওয়া যায় সেজন্য আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি।

দেশে প্রতি বছর আলুর চাহিদা ১ কোটি টন। আর চাহিদার বিপরীতে সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে আলুর উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১২ লাখ টন। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হলেও মজুদ করতে ব্যবসায়ীরা সারা বছর কমবেশি আলু আমদানি করে থাকেন। বৈশ্বিক মন্দায় গত বছর যখন দেশে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে তখন পাল্লা দিয়ে আলুর দাম বেড়ে দাঁড়ায় কেজিপ্রতি ৮০ টাকা। এতে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে ও সরবরাহ বাড়াতে গত বছরের ৩০ অক্টোবর বিভিন্ন শর্ত দিয়ে বেসরকারিভাবে আলু আমদানির অনুমতি দেয়।

গত বছরের ২ নভেম্বর থেকে শুরু হয় আলু আমদানি। বেনাপোলসহ দেশের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে আমদানি বাড়লেও ভরা মৌসুমেও তার সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ ক্রেতারা। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটরা দিন দিন আলুর দাম বাড়াচ্ছে। এতে ক্ষোভ সাধারণ ক্রেতাদের। এদিকে ভারতের ২০০ থেকে ২২০ কিলোমিটার দূর থেকে আলু আমদানি এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কয়েকদিন সময় লেগে যায়। এ সময় পর্যন্ত আলু গাড়িতে তেরপাল দিয়ে বাঁধা থাকে। এতে গরমেই ট্রাকেই আলু পচে যাচ্ছে।

বাংলাদেশি ট্রাক চালকরা জানান, তারা ভারতীয় ট্রাক থেকে আলু খালাস করে রংপুর নিয়ে যাবেন। কিন্তু গরমের কারণে বন্দরে ট্রাকে আলু বস্তাতেই পচে যাচ্ছে। দ্রুত খালাস না হলে আরো নষ্ট হয়ে যাবে। বেনাপোল বাজারের আলু বিক্রেতা কাইউম খান বলেন, বাজারে আলুর সরবরাহ কম থাকায় দাম কমছে না। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

সাধারণ ক্রেতাদের দাবি, এত পরিমাণ আলু আমদিনর পরও বাজারে এর প্রভাব পড়ছে না। বাজারে নজরদারি না থাকায় বিক্রেতার দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ভোক্তা অধিদপ্তর বাজারে তদারকি বাড়ালে কম নিয়ন্ত্রণে আসবে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ডে দায়িত্বরত এডি কাজি রতন গতকাল শুক্রবার বলেন, ভারত থেকে গত সোমবার ৩৭০ টন আলু আমদানি হয়েছে। আলুর মান পরীক্ষা শেষে দ্রুত খালাসের জন্য সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে কিছু কিছু বস্তায় সামান্য পরিমাণ আলু পচা দেখা যাচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close