নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ মে, ২০২৪

দেশ জুড়ে বিক্ষোভ

ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়াল ছাত্রলীগ

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতার বন্ধের দাবিতে বিশ্বব্যাপী চলমান ছাত্র-আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সারা দেশে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করছে ছাত্রলীগ। এছাড়া দেশব্যাপী আগে থেকেই ঘোষণা করা কর্মসূচিতে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন, পদযাত্রা ও ছাত্র সমাবেশ করেছে সংগঠনটি। গতকাল সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কলেজের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হন। এ সময় ফিলিস্তিনের জয় হোক নামে নানা স্লোগান দিতে থাকেন তারা। স্লোগানের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা মধুর ক্যান্টিন থেকে পদযাত্রা নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন। শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক আকিব মুহাম্মদ ফুয়াদ, ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদ শামীম, মহানগর দক্ষিণ সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি, সাধারণ সম্পাদক বাবু সজল কুণ্ডু প্রমুখ।

পদযাত্রায় অংশ নেওয়া ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, ইসরায়েল ফিলিস্তিনের মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করছে। ধ্বংস করছে পুরো গাজাকে। আমরা সাধারণ মানুষ হিসেবে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। ইসরায়েল যে গণহত্যা চালিয়েছে তার নিন্দা জানাই এবং আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় তাদের শাস্তি জানাই।

ঢাকার পাশাপাশি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ও ছাত্রলীগের সংহতি সমাবেশ হয়েছে।

এ সমাবেশে ছাত্রলীগের পাশাপাশি যোগ দেন সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবি জানান। সেসঙ্গে ইসরায়েলের গণহত্যার নিন্দা জানানো হয়। শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের ওপর দেশটির পুলিশ দ্বারা চলমান দমন ও নিপীড়নের তীব্র নিন্দা জানান। অতি দ্রুত শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে এ ধরনের হামলা বন্ধের আহ্বান জানান তারা।

ফেনী : গতকাল বেলা ১১টায় ফেনী সরকারি কলেজ মাঠ থেকে এক হাজার ফুট দৈর্ঘ্যরে ফিলিস্তিনি পতাকা নিয়ে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি তোফায়েল আহম্মদ তপু ও সাধারণ সম্পাদক নুর করিম জাবেদের নেতৃত্বে পদযাত্রা শুরু হয়। শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে আবার কলেজ মাঠে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

রংপুর : বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সমাবেশ, পথযাত্রা ও ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এতে সংহতি জানিয়ে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিভিন্ন প্লাকার্ড হাতে পদযাত্রা করেন তারা। পদযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্বর থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে রাসেল চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।

রাজশাহী : পতাকা মিছিল ও পদযাত্রা করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এ সময় বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে বিভিন্ন স্লোগান দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।

নারায়ণগঞ্জ : ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জেও ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন ও বিক্ষোভ করেছে ছাত্রলীগ। দুপুরে সরকারি তোলারাম কলেজ নারায়ণগঞ্জ শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ নেতৃত্বে প্রথমে তারা কলেজ ক্যাম্পাসে জাতীয় পতাকার পাশাপাশি ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন করেন। তারা একটি সংক্ষিপ্ত ছাত্র সমাবেশ শেষে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

যশোর : কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে যশোর জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে দুপুর পৌনে ১২টায় সিটি কলেজ ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন হয়। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাহউদ্দিন কবীর পিয়াস ও সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লবের নেতৃত্বে যশোরে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ সময় নেতারা জানান, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

এরে আগে কর্মসূচি ঘোষণা করে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিরীহ-নিরপরাধ ফিলিস্তিন নাগরিকদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন পরিচালনা করছে, আন্দোলন-প্রতিবাদ করতে গিয়ে বাধা-নির্যাতনের সম্মুখীন হচ্ছে তা গভীরভাবে অনুধাবন করে ছাত্রলীগ।

বর্তমান সরকার স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বরাবরই অগ্রগামী উল্লেখ করে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ফিলিস্তিনিদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্ব দরবারে সদাসর্বদা ক্রিয়াশীল একটি রাষ্ট্র। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম দিক ছিল ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা অর্জন।

ছাত্রলীগের বিবৃতিতে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর মতোই তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব মানচিত্রে যে বলিষ্ঠতার সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ের দাবি উত্থাপন করেছেন, তা অতুলনীয়-অভাবনীয়। তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের রেজুলেশনে বর্ণিত দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের মাধ্যমে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে শান্তির প্রতি আমাদের অকুণ্ঠ সমর্থন।

গত অক্টোবরে ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলায় নিরস্ত্র মানুষদের হত্যা ও বেসামরিক বহু মানুষকে জিম্মি করার কথা বলে গাজায় সামরিক অভিযান চলছে। এই অভিযানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে বিক্ষোভে নামেন।

যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন শিক্ষকরাও। নজিরবিহীন এ আন্দোলন ঠেকাতে মারমুখী দেশটির পুলিশ প্রশাসনও। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, ধরপাকড়ের পাশাপাশি করা হচ্ছে বহিষ্কারও। এত কিছুর পরও দমানো যাচ্ছে না আন্দোলনকারীদের। ধীরে ধীরে আরো তীব্র হচ্ছে আন্দোলন। এমন প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে ক্রমশ।

সাম্প্রতিক ইতিহাসে এত বড় ছাত্র আন্দোলন দেখেনি যুক্তরাষ্ট্র। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে বোস্টন, নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন; হার্ভার্ড থেকে জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি, ওহাইও থেকে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি একের পর বিশ্ববিদ্যালয় শামিল হচ্ছে গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে। পাশাপাশি ইসরায়েল ও গাজা যুদ্ধকে সমর্থন করে, এমন কোম্পানির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিও তোলা হচ্ছে। এ ধরনের বিক্ষোভ প্রথম শুরু হয়েছিল কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। এরপর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও সফল হয়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ নির্মম দমন ও পীড়নের চেষ্টা চালায়।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবাদের অধিকারহরণ, বাকস্বাধীনতায় সীমাবদ্ধতা এবং ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ তুলে গেল ১৮ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলো থেকে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ এবং মুখোশধারীদের হামলার কারণে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের ওপর দমনপীড়ন এবং ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইউরোপ, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close