আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৪ জুন, ২০২০

বিশ্বে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যু

বিশ্বব্যাপী মহামারি রূপ নেওয়া করোনাভাইরাসে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। দুদিন আগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমলেও তা আবার বেড়ে গেছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, গতকাল বুধবার বিশ্বে মারা গেছে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৪১২ জন। এ ছাড়া শনাক্ত হয়েছে ৬৪ লাখ ৮৫ হাজার ৫৭১ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৩০ লাখ ২৩ হাজার ৬৩৮ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৩০ লাখ ৭৯ হাজার ৫২১ জন। এদের মধ্যে ৩০ লাখ ২৪ হাজার ৯৯৩ জনের শরীরে মৃদু সংক্রমণ থাকলেও ৫৪ হাজার ৫২৮ জনের অবস্থা গুরুতর।

ওয়ার্ল্ডোমিটার বলছে, বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৯৮১ জন। মারা গেছে প্রায় ৫ হাজার। দুদিন আগে এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ৯৪৬ জন। আর মৃত্যু ছিল ৩ হাজার ৫৩ জন।

যুক্তরাষ্ট্রে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮ পর্যন্ত (গ্রিনিচ মান সময় ০০৩০ টা) নতুন করে ১ হাজার ৮১ জন প্রাণ হারিয়েছে। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে মোট ১ লাখ ৬ হাজার ১৮০ জন হয়েছে এবং আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ লাখ ৩১ হাজার ৪৩৫ জনে দাঁড়িয়েছে। বৈশ্বিক এ মহামারিতে আক্রান্ত ও মৃতের দিক থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। ফলে দেশটিতে মৃতের ও আক্রান্তের সংখ্যা বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় অনেক বেশি।

এদিকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে আরোপ করা লকডাউন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলো শিথিল করা শুরু করেছে। তবে মিনিয়াপলিসে গত সপ্তাহে পুলিশ হেফাজতে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ব্যাপক সহিংসতা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন নগরীতে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

আক্রান্ত ও মৃত্যুতে নাজেহাল ব্রাজিল। কয়েক সপ্তাহ ধরে মৃত্যুর মিছিল চলছে ব্রাজিলে। প্রায় প্রতিদিনই ভাঙছে দৈনিক প্রাণহানির রেকর্ড। করোনায় মারা গেছে আরো ১ হাজার ২৬২ জন, যা দেশটিতে এখন পর্যন্ত এক দিনে সর্বাধিক প্রাণহানির ঘটনা।

ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটিতে নতুন করে ২৮ হাজার ৯৩৬ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৩৮৩ জন।

লাতিন আমেরিকার দেশটিতে এ পর্যন্ত ৩১ হাজার ১৯৯ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনাভাইরাস। তবে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২ লাখ ২৩ হাজার ৬৩৮ জন।

করোনা নিয়ন্ত্রণে বরাবরই লকডাউন ও কড়া নিষেধাজ্ঞার বিপক্ষে ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারো। অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে সবাইকে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হলেও পিছু হটেননি এ নেতা। বেশ কয়েকটি রাজ্য ও শহরে পরামর্শ না মেনে লকডাউন দেওয়ায় উল্টো প্রেসিডেন্টের ক্ষোভের মুখে পড়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। বোলসোনারের সঙ্গে মতানৈক্যের কারণে এক মাসের মধ্যেই পদত্যাগ করেছেন দেশটির দুই স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

ব্রাজিলে অন্যান্য দেশের তুলনায় মহামারি অনেক পরে শুরু হলেও সরকারের অব্যবস্থাপনা ও জনগণের অসচেতনতায় মাত্র মাস দুয়েকের মধ্যেই বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমিত দেশ হয়ে উঠেছে তারা। ব্রাজিলের চেয়ে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।

ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে ইতালির সীমান্ত খুলে দেওয়া হলো গতকাল। দেশটিতে প্রাণঘাতী করোনার প্রকোপ কমে আসায় প্রায় তিন মাস পর সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সময় থেকে নাগরিকদের ওপর থেকে তুলে নেওয়া হয় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা।

এদিকে দেশটির ৯টি বিভাগীয় শহরে নতুন করে কেউ সংক্রমিত হয়নি। এরই মধ্যে মঙ্গলবার ইতালিতে জাতীয় প্রজাতন্ত্র দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে দেশটির রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণীতে দেশবাসীর কল্যাণ কামনা করেছেন। একই সঙ্গে পাশাপাশি বিরোধী ফাইভস্টার মুভমেন্টসহ অন্যান্য দল রোমে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। ইতালির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনি এ বিক্ষোভ সমাবেশের নেতৃত্ব দেন।

সরকারি নাগরিক সুরক্ষা কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, ইতালিতে মৃত্যু হয়েছে ৫৫ জনের এবং নতুন করে সংক্রমিত হয়েছে ৩১৮ জন। এরমধ্যে দেশটির সবচেয়ে সংক্রমিত অঞ্চল লোম্বার্দিয়ায় ১৮৭ জন, যেটি আগের দিন ছিল মাত্র ৫০ জন। এ হিসেবে সার্বিকভাবে দেশব্যাপী করোনার প্রকোপ কমেছে। বর্তমানে সব মিলিয়ে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ৩৯ হাজার ৮৯৩ জন। সুস্থ হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯২ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩৩ হাজার ৫৩০ জনের।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান বলছে, এশিয়ায় এখন করোনায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হচ্ছে ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। ভারতে আক্রান্ত হয়েছে ৮ হাজার ৮২১ জন এবং মারা গেছে ২২১ জন। ভারতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৭ হাজার ১৯১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৮২৯ জনের। সর্বাধিক করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত এখন সপ্তম স্থানে।

ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল ২ লাখ। প্রথম ১ লাখ আক্রান্তের ক্ষেত্রে সময় লেগেছিল ১১০ দিন। কিন্তু ১ লাখ থেকে ২ লাখে পৌঁছতে সময় লেগেছে মাত্র ১৫ দিন। আক্রান্তের এই পরিসংখ্যানই বুঝিয়ে দিচ্ছে, লকডাউন শিথিলের পর দেশটিতে কীভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। মহামারি এ ভাইরাসে দেশটিতে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ৫ হাজার ৮১৫ জন। খবর এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবার সকালের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জানায়, নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৮ হাজার ৯০৯ জন। আক্রান্তের সংখ্যায় এটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড। এ নিয়ে দেশটিতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে ২ লাখ ৭ হাজার ৬১৫ জন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, নতুন করে মৃত্যু হয়েছে ২১৭ জনের। এ নিয়ে মোট ৫ হাজার ৮১৫ জনের মৃত্যু হলো করোনাভাইরাসে। এরমধ্যে ২ হাজার ৪৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে মহারাষ্ট্র রাজ্যে। গুজরাটে ১০৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজধানী দিল্লিতে মারা গেছে ৫৫৬ জন। এ ছাড়া মধ্য প্রদেশে ৩৬৪ জন ও পশ্চিমবঙ্গে ৩৩৫ জন মারা গেছে। শতাধিক মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে উত্তর প্রদেশ (২২২ জন), রাজস্থান (২০৩ জন), তামিলনাড়ু– (১৯৭ জন)।

করোনাভাইরাসের প্রকোপে গোটা বিশ্ব এখন মত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। চীনের উহান শহর থেকে গত ডিসেম্বরে ছড়ানোর পর এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় পৌনে ৬৫ লাখ। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩ লাখ ৮২ হাজার। তবে পৌনে ৩১ লাখের মতো রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close