কালোবাজারের কালো হাত
প্রশ্ন উঠতেই পারে। বাজার কত প্রকার ও কী কী। এতকাল যা জেনেছি তা প্রধানত দুই প্রকার। ১. পাইকারি বাজার ও ২. খুচরা বাজার। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে আমরা আরো দুটি বাজারের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। আগে এদের অবস্থান থাকলেও পরিচিতি এতটা ছিল না। এখন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার সবাই এদের চেনেন ও জানেন। এর একটি কালোবাজার আর অপরটি সাদা অর্থাৎ কালোবাজারের বিপরীত। এই বিপরীত অর্থাৎ ভালোবাজার এখন হাসপাতালের আইসিসিইউতে। কালোবাজারের অবস্থা রমরমা। পাইকারি আর খুচরা বাজারের কোনো পরিবর্তন নেই। তবে এদের নিয়ন্ত্রণ আগের মতো আর সাদার হাতে নেই, পুরোটাই কালোর দখলে।
এদিকে কালোবাজারের বদান্যতায় পণ্যের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও এখন একটি দামি পণ্য। পরীক্ষার মৌসুমে কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয় এ বাজারে। মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রনেতা, শিক্ষক, কোচিং সেন্টার, প্রেসের কর্মচারী-এরাই বাজারের নিয়ন্ত্রক। অর্থাৎ এরা কেউই সাদা মনের মানুষ নন। পাশাপাশি বলতে হয়, এদের যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে সাহায্য ও সহযোগিতা করেন তারাও সাদা মনের মানুষ হতে পারেন না। আমরা ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহোদয়কেও পরোক্ষে সহযোগিতা করতে দেখেছি। বিষয়টি গোটা জাতির নিয়তি বলে ভেবে নেওয়াটাই ভালো। আমরা নামতে নামতে কোথায় এসে দাঁড়িয়েছি, সম্ভবত এর নিচে দাঁড়ানোর মতো আর কোনো মাটি নেই। প্রশ্ন উঠেছে-বাঁচার কি কোনো উপায় নেই! বিশেষজ্ঞরা বলছেন আছে। এখানে সরকারের অবশ্যই করণীয় আছে। সরকার এ দায় এড়াতে পারে না। তারা আরো বলেছেন, অন্য কোনো পেশায় দুর্নীতি হলে দেশের কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু শিক্ষা খাতে প্রশ্ন ফাঁস হলে পুরো জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যাবে।
আমরা সেই ধ্বংসের পথেই এগিয়ে চলেছি। আমাদের পাপাচার আর নিয়তি যেন আজ এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে। এ পাপাচার থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে মহাপ্রলয়ের হাত থেকে আমাদের কোনো মুক্তি নেই বলেই আমরা বিশ্বাস করি। আমাদের শিক্ষক ও রাজনীতিকদের (সবাই নন) নৈতিক অধপতন এবং মন্ত্রণালয়ের অনৈতিক আচরণ গোটা জাতিকে একটি জাগতিক ব্ল্যাকহোলের দিকে ধাবিত করছে। হারানোর আগে অন্তত একবার আমরা হ্যামিলনের বংশীবাদক হওয়ার চেষ্টা করতে পারি। সেখান থেকে একজন বংশীবাদকও যদি বেরিয়ে আসে, তাহলে আমাদের স্বপ্ন এবং চেষ্টা কিছুটা হলেও সফল হতে পারে। আমরা কালোবাজারের কালো হাত থেকে রক্ষা পেতে পারি।
"