গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

হরেক সুতোয় বোনা সিরাজগঞ্জের গামছা

সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় তাঁতের তৈরি বাহারী রঙের হরেক রকমের গামছার সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। এখানকার তাঁতীদের উৎপাদিত গামছা কেনা বেচাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে দুটি বিশাল গামছার হাট। দূর-দূরান্তের পাইকাররা এখান থেকে গামছা কিনে নিয়ে যাচ্ছে সারা দেশে। সিরাজগঞ্জের তাঁতীরা যুগ যুগ ধরে নানা প্রতিকূলতার মাঝেও এ শিল্পকে ধরে রেখেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গামছা তৈরি করে জীবন ও জিবিকা চলছে জেলার কয়েক হাজার তাঁতী পরিবারের। সিরাজগঞ্জের সদর, কামারখন্দ, উল্লাপাড়া, বেলকুচি, শাহজাদপুর, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের পুরুষ ও নারী কারিগরারা তাঁতে গামছা বুনে। সকাল থেকে রাত অবধি এখানকার গ্রামগুলোতে তাঁতীদের গামছা বুনোনের খট খট শব্দে মুখর থাকে অবিরত। সকাল থেকে রাত অবধি চলে এই গামছা বুনন কাজ। যুগ যুগ ধরে বংশ পরস্পরায় তারা নিজ হাতে হরেক রকম সুতোয় এ গামছা বোনে। আবার কেউ কেউ শ্রমিক দিয়ে গামছা বোনে। জেলায় কয়েক হাজার তাঁতী এ কাজের সাথে জড়িত। এর মাধ্যমেই চলে তাদের জিবিকা।

জানা গেছে, এসব এলাকার তাঁতীদের বোনা গামছা কেনা বেচাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে পঁচিলা, বেলকুচি, এনায়েতপুরও সিরাজগঞ্জ সদরে বৃহৎ গামছার হাট এরমধ্যে সোহাগপুর, সিরাজগঞ্জ, এনায়েতপুর ও পাঁচিলার হাটি সব চেয়ে বড়। ভোর থেকেই দুর দুরান্তের ক্রেতা বিক্রেতায় সরগম হয়ে ওঠে উল্লেখিত এলাকার গামছা হাট। তাঁতীরা সপ্তাহ জুড়ে গামছা বুনে হাট বারে এখানে এনে বিক্রি করে। বাড়ির পাশে হাট খুব সহজেই তাঁতীরা তাদের গামছা বিক্রি করে। এ হাটে চলে লাখ লাখ টাকার গামছা বেচা কেনা। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে ঐতিহ্যবাহী এই হাট।

উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের পাঁচিল গামছা তৈরির জন্য প্রসিদ্ধ এলাকা। এখানে প্রায় প্রতি বাড়িতেই গামছা বুননের দৃশ্য দেখা যাবে। নারীরা সুতায় রং দেয়া, চরকায় সুতা কাটার পাশাপাশি পুরুষের সাথে সমান তালে তাঁত বোনে। একজন তাঁত শ্রমিক দিনে ৮-১০ টি গামছা বুনতে পারে। একথান (৪ পিচ) গামছা বুনে শ্রমিকেরা পারিশ্রমিক পায় ১২০ টাকা।

পাচিলা গ্রামের তাঁতী আজাহার আলী বলেন, তাঁত বুনে যে পারিশ্রমিক পাওয়া যায় তাতে সংসার চালানো কঠিন। তবুও আমরা এ পেশা ধারে আছি। এটা ছাড়া আমরা বিকল্প কোন কাজ জানি না। তাই বাধ্য হয়ে এটা ধরেই আছি। একাধিক তাঁতী জানায়, দফায় রং সুতরি অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা এ কাজে তেমন একটা লাভবান হতে পারছে না।

বেলকুচির গামছা হাটের পাইকারী মহাজন কামারখন্দের আলম, কাজিপুরের বাবু মিয়া জানান, ২০ বছর ধরে এ হাটে গামছা কিনে সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করি। এখন গামছার বাজার একটু ভালো। গত সপ্তাহে প্রতি থান (৪ পিছ) ৩৫০ টাকায় কিনেছি। এ সপ্তাহে সেই গামছা ৪০০ টাকা করে কিনছি। ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারীভাবে রং সুতোর দামের মনিটরিংসহ ঋণ সহায়তার দরকার।

পিডিএস/মীর

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সিরাজগঞ্জের গামছা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close