আজিজুল বুলু, নীলফামারী

  ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪

দুই কর্মকর্তায় চলে ৮ সাব-রেজিস্ট্রার অফিস

দুজন সাব-রেজিস্ট্রার দিয়ে বছরের পর বছর চলছে আটজন সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কার্যক্রম। এর ফলে দলিল সম্পাদন কম হওয়ায় প্রতি মাসে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে কোটি টাকা। প্রায় ছয়শত দলিল লেখক কর্মহীন হয়ে অলস সময় পাড় করছেন তারা। ভলিয়ম সঙ্কটে কর্মহীন হয়ে পড়েছে প্রায় পাঁচশতাধিক দলিল নকল নবিশ। আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা নিবন্ধন অধিদপ্তরের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা।

নীলফামারী জেলা সাব-রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আইন মন্ত্রণালয় ১৯৭২ সালে জেলার সদর উপজেলা, ডোমার উপজেলা, ডোমার উপজেলার চিলাহাটি, ডিমলা উপজেলা, জলঢাকা উপজেলা, জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জহাট সাব-রেজিস্ট্রার ক্যাম, কিশোরগঞ্জ উপজেলা ও সৈয়দপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস প্রতিষ্ঠা করে।

এর মধ্যে, সদর উপজেলা, ডোমার উপজেলার চিলাহাটি, ডিমলা উপজেলা, কিশোরগঞ্জ উপজেলা ও সৈয়দপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে তিন বছর ধরে সাব-রেজিস্ট্রার পদ শূন্য রয়েছে।

এ ছাড়া জেলা রেজিস্ট্রার সাখাওয়াত হোসেন দুজন সাব-রেজিস্ট্রার দিয়ে আটটি সাব-রেজিস্ট্রার অফিস পরিচালনা করছেন। ডোমার উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রহমান ও জলঢাকা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তা মনীষা রায়।

দপ্তর সূত্রে আরো জানা গেছে, ডোমার উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান সপ্তাহে অফিস করেন, ডোমার রবিবার, কিশোরগঞ্জ সোমবার, চিলাহাটি মঙ্গলবার, সৈয়দপুর বুধবার ও বৃহস্পতিবার। জলঢাকা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তা মনীষা রায় সপ্তাহে অফিস করেন, নীলফামারী সদর রবিবার ও সোমবার, জলঢাকা মঙ্গলবার ও বুধবার এবং ডিমলা বৃহস্পতিবার।

এদিকে, জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জহাট ক্যাম্প সাব-রেজিস্ট্রার অফিসটি অস্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘোষণায় ওই এলাকার জমি ক্রেতা-বিক্রেতা দলিল সম্পাদন করতে না পারায় ভোগান্তিতে পড়েছেন।

সদর উপজেলার চড়াইখোলা ইউনিয়নের ভুক্তভোগী অবিনাশ রায় জানান, তার কলেজ পড়ুয়া ছেলের দুটো কিডনি ফেল করেছে। ছেলের চিকিৎসার জন্য শেষ সম্বল জমি বিক্রি করার ক্রেতার খোঁজ পেয়ে গত ১৫ জানুয়ারি জমি বিক্রি করতে নীলফামারী সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যান তিনি। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন এখানকার সাব-রেজিস্ট্রার বদলি হয়ে যাওয়ায় পদ শূন্য রয়েছে। জলঢাকা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার সপ্তাহে দুদিন বসেন রবিবার ও সোমবার। পরে সেই জমি কম দামে বিক্রির প্রস্তাবনায় ননস্ট্যাম্প স্বাক্ষর করে টাকা নিয়ে ঢাকায় চলে যান। এমন অনেক মানুষ ভোগান্তিতে আছেন বলেও জানান তিনি।

জেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ এ বিষয়ে জানান, সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখক সপ্তাহে ৪দিন কর্মহীন হয়ে অলস সময় পাড় করছেন। বালাম (ভলিয়ম) বই একবছর ধরে বিজিপ্রেস সরবরাহ না করায় প্রায় পাঁচশত দলিল নকল নবিশ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বলেও জানান তিনি।

জেলার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসগুলো চলছে দায় সাড়াভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা সাব-রেজিস্ট্রার সাখাওয়াত হোসেন স্বীকার করে বলেন, ‘এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা মহাপরিদর্শক নিবন্ধন অধিদপ্তর বরাবর সাব-রেজিস্ট্রার শূন্য পদ পূরণের জন্য প্রতি মাসে চিঠি দিয়েছি। জমির দলিল সম্পাদন কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গ চালু না হওয়ায় সরকার প্রতি মাসে কোটি-কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close