গাজী মো. রাসেল

  ২৭ মে, ২০১৮

বিশ্বকাপ ফ্যাক্টস

‘বিস্ময় বালক’ পেলের বিশ্বজয়

* বিশ্বকাপের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে গোল করেন পেলে (১৭ বছর)। * এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড করেন ফ্রান্সের ফন্টেইন (১৩টি)। * এই বিশ্বকাপে ছিল না এশিয়ান ও আফ্রিকান কোনো দল। * দুই দশক পর আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে অংশ নেয়। * বাছাইপর্বে বাদ পড়ে দু’বারের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে।

বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল ব্রাজিল। সর্বোচ্চ পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন সেলেকাওরা। অথচ, প্রথম বিশ্বজয়ের জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয় ষষ্ঠ বিশ্বকাপ পর্যন্ত। ১৯৫৮ সালে সুইডেন বিশ্বকাপেই স্বপ্নপূরণ করে সাম্বার দেশটি। সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলে ভেলায় চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল।

আগের বিশ্বকাপটা হয়েছিল সুইজারল্যান্ডে। টানা দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোপে বিশ্বমঞ্চ বসেছিল ১৯৫৮ সালে। কোনো ঝামেলা ছাড়াই ষষ্ঠ আসর আয়োজনের দায়িত্ব পায় সুইডেন। যদিও আর্জেন্টিনা, চিলি ও মেক্সিকোও স্বাগতিক হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। তবে সুইডিশদের হাতে আয়োজন তুলে দিতে তেমন কোনো বেগ পেতে হয়নি ফিফার।

কোনো ঝামেলা হয়নি ১৬ দল বাছাই করতেও। স্বাগতিক ও চ্যাম্পিয়ন দল যথারীতি সরাসরি মূল পর্বের টিকিট পেয়েছে। বাকি ১৪টি দল বাছাইপর্বের গ-ি পেরিয়ে জায়গা করে নিয়েছে মূলপর্বের। ওই দলগুলোর মধ্যে পাদপ্রদীপে থাকল শুধুই আর্জেন্টিনা। দুই দশক পর বিশ্বমঞ্চে ফিরে ল্যাটিন জায়ান্টরা চলে এসেছিল লাইম লাইটের নিচে। তবে ওই বিশ্বকাপের আগেই সবচেয়ে বড় অঘটনের শিকার হয়েছে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে। বাছাইপর্বের বাধা পার হতে পারেনি তারা। প্রতিবেশী প্যারাগুয়ের কাছে হেরে বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা হারিয়েছে প্রথম বিশ্বজয়ী দলটি। আসরের আরেকটি চমক হচ্ছে যুক্তরাজ্যের চারটি দেশের অংশগ্রহণ!

এই আসরটাও সীমাবদ্ধ ছিল তিনটি মহাদেশের মধ্যে। সুইডেন বিশ্বকাপে ছিল না কোনো এশিয়ান কিংবা আফ্রিকান দেশের প্রতিনিধি। ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের মোট ১৬টি দল অংশ নেয় আসরে। অংশ নেওয়া দেশগুলো হলোÑ সুইডেন (স্বাগতিক), পশ্চিম জার্মানি (চ্যাম্পিয়ন), ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, প্যারাগুয়ে, ইংল্যান্ড, উত্তর আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস, চেকোসেøাভাকিয়া, হাঙ্গেরি, সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুগোসøাভিয়া, আস্ট্রিয়া ও ফ্রান্স।

দুই দশক পর বিশ্বকাপে প্রত্যাবর্তনটা রাঙাতে পারেনি আর্জেন্টিনা। উল্টো লজ্জায় ডুবতে হয়েছে তাদের। গ্রুপ পর্বেই ১০ গোল হজম করে শেষ জয় তাদের বিশ্বকাপ মিশন। আগের আসরে দাপুটে ফুটবল খেলা রানার্স-আপ হাঙ্গেরির শুরুতে বিদায় নেওয়াটাও ছিল অঘটনের অংশ। অবশ্য হাঙ্গেরির গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যাওয়াটাকে অনেকেই দেখেছেন স্বাভাবিক চোখে। কারণ, গোলরক্ষক ছাড়া আগের বিশ্বকাপের কোনো খেলোয়াড়ই ছিলেন না সুইডেনের আসরে। তবে চমক দেখিয়েছে অভিষেক দুই দল ওয়েলস ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে দল দুটো।

অবশ্য সব ছাপিয়ে পাদপ্রদীপে থাকল শুধুই ব্রাজিল। বিশ্বকাপের সেলেকাওদের পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতোই। গ্রুপ পর্বে অস্ট্রিয়াকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করা ব্রাজিল ফাইনালে স্বাগতিক সুইডেনকে ৫-২ ব্যবধানে উড়িয়ে মিশন শেষ করে। এর মধ্যেই বিশ্বকাপের ইতিহাসের প্রথম গোলশূন্য ড্র করেছে ব্রাজিল। গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে সেলেকাওদের রুখে দেয় ইংল্যান্ড। অথচ, আগে নিয়মানুসারে কোনো অমীমাংসিত থাকলে সেটা গড়াত পরের দিনে!

তবে ব্রাজিল দলের শক্তিমত্তা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ১৭ বছরের এক তরুণ। তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার পেলে। গ্রুপ পর্বের তৃতীয় ম্যাচে মাঠে নামেন এই ফরওয়ার্ড। বিশ্বকাপে অভিষেক ম্যাচের স্নায়ুচাপটা অবশ্য সামলে নিতে পারেননি তিনি। তাতে অবশ্য ব্রাজিলের কোনো ক্ষতি হয়নি। কারণ, ভাভার দুই গোলে সোভিয়াত ইউনিয়নকে অনায়াসেই হারায় ব্রাজিল।

কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়েলসের মুখোমুখি ব্রাজিল। নক-আউট ম্যাচে ব্রাজিলের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল ওয়েলস। সেই ম্যাচেই পেলের একমাত্র গোলেই রক্ষা পায় ব্রাজিল। ওই গোলে অনন্য একটা রেকর্ড হয়ে যায় পেলের। সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে বিশ্বমঞ্চে গোল করেছেন তিনি। সেমিফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ফ্রান্সের বিপক্ষেই দেখা গেল পেলের রুদ্রমূর্তি! ওই ম্যাচে ফ্রান্সকে একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন পেলে। একাই করেছেন ৩ গোল। শেষ অবধি ফ্রান্স বিধ্বস্ত ৫-২ গোলে।

স্বপ্নপূরণের ম্যাচে ব্রাজিল প্রতিপক্ষ হিসেবে দারুণ ছন্দে থাকা স্বাগতিক সুইডেনকে। কিন্তু স্বাগতিকরা দাঁড়াতেই পারেনি সেলেকাওদের সামনে। আসল ফুটবলের বিস্ময় বালক পেলের পায়ে প্রথম শিরোপা জয়ের স্বপ্নটা চূর্ণ হয় সুইডিশদের। আগের ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা পেলে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে করেছেন জোড়া গোল। ১৯৫০ মারাকানা ট্রাজেডির ক্ষতের প্রলেপ হিসেবে ব্রাজিল জিতল স্বপ্নের প্রথম বিশ্বকাপ। ইউরোপের মাটিতে এটা ল্যাটিন কোনো দেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রথম নজিরও বটে।

অবশ্য বিশ্বকাপ মাতালেও গোল্ডেন বুট পাননি তিনি। হয়েছিলেন উদীয়মান সেরা ফুটবলার। ওই আসরে ৬ ম্যাচে ১৩ গোল করে গোল্ডেন বুট জিতেছিলেন ফ্রান্সের ফন্টেইন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক আসরে এতগুলো গোলের নজির নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist